বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য পুনরায় শ্রমবাজার খোলার পর সব কিছু স্বাভাবিক গতিতে সম্পন্ন করে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। এরই মধ্যে প্রায় দেড় লাখ ভিসাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অথচ এসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সইয়ের তিন মাস অতিবাহিত হলেও কর্মী পাঠানো শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার।
তথ্য বলছে, এ ঘটনার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেট।
সৌজন্যে : আমরা সবাই (সমাজ ও মানব উন্নয়ন মূলক সংগঠন)
বিশেষ করে অভিযোগের তীর বায়রার একজন প্রভাবশালী নেতার দিকে, যিনি নানাভাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি যেন খুলতে না পারে সেই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘ ৪০ মাস বন্ধ থাকার পর অন্যতম বড় শ্রমবাজারটি খুলে দেওয়ায় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় বাজারটি নেপালের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এর মাসুল গুনতে হতে পারে কয়েক লাখ বেকার কর্মীকে। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে অনেক বেকার কর্মী হতাশায় ভুগছেন। মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের মনে আশার সঞ্চার হলেও তা নিমেষেই ডুবতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশের প্রায় ৬০০টি রিক্রুটিং এজেন্সি। তারা উচ্চমূল্যে ভিসা কেনার অজুহাতে প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে অভিবাসী কর্মীরা মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে এজেন্সিগুলো মধ্যপ্রাচ্যগামী কর্মীদের কাছে এত উচ্চমূল্যে ভিসা বিক্রি করতে পারবে না—এই আশঙ্কায় মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খোলার বিষয়টিতে অযৌক্তিকভাবে বিরোধিতা ও দেরি করাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এর জন্য তারা ব্যক্তিগত প্রভাব-প্রতিপত্তি ও মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। ছড়াচ্ছে গুজব।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী আছেন। ২০১৮ সালে প্রায় পৌনে দুই লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে দুই দেশের সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিল। সে সময় অন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এর প্রতিবাদ জানায়। ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকে শ্রমবাজার বন্ধ আছে।
কভিড মহামারি শুরু হলে বিশ্বের অনেক দেশের মতো মালয়েশিয়াও বিদেশি নেওয়া কর্মী বন্ধ করে দেয়। কভিড পরিস্থিতির উন্নতির পর দুই দেশের দীর্ঘ আলোচনায় গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ। এর এক মাস পর থেকেই কর্মী পাঠানো শুরু করার কথা ছিল। সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর মালয়েশিয়া কর্মী নিতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছে। এনই মধ্যে দেড় লাখের বেশি ভিসাও প্রস্তুত করে রেখেছে দেশটি।
কিন্তু বাংলাদেশের দিক থেকে দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। এমনকি কারিগরি বিষয়গুলোও চূড়ান্ত হয়নি আজও। এর মধ্যে ‘গোদের ওপর বিষফোড়া’ হয়ে দেখা দিয়েছে কতিপয় রিক্রুটিং এজেন্সি। ফলে পুরো বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।