ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে মন্তব্য করেছেন তাকে ‘অপরিপক্ক’ বলে নিন্দা জানিয়েছে হামাস। সংগঠনটির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি না জেনেই বাইডেন এ মন্তব্য করেছেন।
হামাস নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, “যুদ্ধবিরতির প্রধান বিষয়গুলো বিশেষ করে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট হয়নি এবং এটি সম্ভাব্য চুক্তির পথে অন্তরায় হয়ে রয়েছে।”
প্রেসিডেন্ট বাইডেন সোমবার দাবি করেছিলেন, প্যারিস আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে এবং আগামী ৪ মার্চের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে যাচ্ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ৪০ ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ৪০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। আর এই এই চুক্তির আওতায় ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতি হতে পারে।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে দখলদার ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার পর এই পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। সম্ভাব্য চুক্তির আওতায় বাস্তুচ্যুত গাজার অধিবাসীদের ক্রমান্বয়ে উত্তর গাজায় ফিরতে দেওয়ার বিষয়েও রাজি হয়েছে দখলদার ইসরায়েল।
কিন্তু হামাস বলছে, প্যারিস প্রস্তাবে তাদের প্রধান দাবিগুলো মানা হয়নি। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রধান দাবি সাময়িক যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা এবং গাজা উপত্যকা থেকে সকল ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার। এ সম্পর্কে লেবাননে হামাসের প্রতিনিধি ড. আহমেদ আব্দেল হাদি বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের একটি দাবি থেকেও সরে আসবে না এবং প্যারিস প্রস্তাবে তাদের কোনও দাবি মানা হয়নি।
তিনি বলেন, ইহুদিবাদী শত্রু যুদ্ধক্ষেত্রে যা অর্জন করতে পারেনি তা আমরা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আলোচনার নামে তার হাতে তুলে দেব না।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, প্রেসটিভি
আগামী সোমবারের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতির আশা বাইডেনের
আগামী সোমবারের মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদের নিয়ে চলমান আলোচনায় কিছু অগ্রগতির খবরের মধ্যে বাইডেন সোমবার এ কথা জানালেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন যে আমরা (সাময়িক যুদ্ধবিরতির) কাছাকাছি আছি।”
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৯ হাজার ৭৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কাছাকাছি। তবে আমরা এখনও শেষ করিনি। আমার আশা আগামী সোমবারের মধ্যে আমরা যুদ্ধবিরতি করব।”
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র এর আগে বলেছিলেন, গত কয়েক দিনে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য আলোচনায় ‘অগ্রগতি’ হয়েছে, তবে হামাস সর্বশেষ প্রস্তাবিত চুক্তিটি গ্রহণ করবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, আল জাজিরা, বিবিসি
এবার লেবাননের গভীরে হামলা চালাল ইসরায়েল
টানা সাড়ে চার মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। এর জেরে লেবানন সীমান্তেও উত্তেজনা দেখা দেয়। লেবাননের ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে আসছে।
সর্বশেষ হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরায়েলের সামরিক ড্রোন ভূপাতিত হয়েছে। আর এরপরই লেবাননের গভীরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এবারই প্রথম লেবাননের ভূখণ্ডে এতো গভীরে হামলা চালাল ইহুদিবাদী দেশটি।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান সোমবার লেবাননের বেকা উপত্যকায় হামলা চালিয়েছে। গত অক্টোবরে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর সাথে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননের ভূখণ্ডে চালানো গভীরতম আক্রমণে কমপক্ষে দুই হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত হয়েছে বলে লেবাননের বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির কথা তুলে ধরে ইসরায়েল-অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি সেনা সদর দফতরে ৬০টি রকেট নিক্ষেপ করে জবাব দিয়েছে হিজবুল্লাহ। ইরান-সমর্থিত এই শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠীর আল-মানার টেলিভিশন এই তথ্য জানিয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, লেবানন থেকে গোলান মালভূমিতে কয়েক ডজন রকেট ছোড়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, ইসরায়েলি ড্রোনে হামলা চালিয়ে ভূপাতিত করার জবাবে তাদের ফাইটার জেট বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলা চালিয়েছে। এর আগে হিজবুল্লাহ বলেছিল, তারা সোমবার একটি সারফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ড্রোনটি ভূপাতিত করে।
লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েল প্রথমবারের মতো লেবাননের পূর্বাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা
গাজায় ‘গণহত্যার’ প্রতিবাদে শরীরে আগুন দেওয়া সেই মার্কিন সেনার মৃত্যু
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ‘গণহত্যার’ প্রতিবাদে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে নিজের শরীরে আগুন দেওয়া সেই মার্কিন বিমানসেনা মারা গেছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আগুন দেওয়ার সময় ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি ভিডিওতে সামরিক পোশাক পরা মার্কিন বিমান বাহিনীর ওই সদস্য বলেন- আমি আর গণহত্যার সঙ্গে নিজেকে জড়িত রাখতে চাই না।
এরপর তিনি এক ধরনের স্বচ্ছ তরল জিনিস নিজের গায়ে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় তিনি ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে স্থানীয় সময় গত রবিবার বিকালে এই ঘটনা ঘটে। ওই সেনাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সোমবার তিনি মারা যান।
বিমানবাহিনীর ওই সদস্য ২৫ বছর বয়সী অ্যারন বুশনেল বলে জানা গেছে। তিনি টেক্সাসের বাসিন্দা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। এরপর থেকে দীর্ঘ সাড়ে মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ ওই উপত্যাকায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় ৩০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছে আরও প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি।
গাজায় ইসরায়েলের এই বর্বরতা এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও একটি মামলা চলমান।
এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু তারপরও কোনও কিছুরই তোয়াক্কা করছে না ইহুদিবাদী দেশটি। আর তাদের জোরালো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, সিএনএন
ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণার আহ্বান আন্তর্জাতিক আদালতে
ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক ও আরব রাষ্ট্রগুলো।
সোমবার আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে এই আহ্বান জানানো হয়।
একইসঙ্গে এই দখলদারিত্বকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা বলেও আখ্যায়িত করেছে তুরস্ক।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের আইনি বৈধতা সম্পর্কে ২০২২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুরোধের পরে ৫০ টিরও বেশি দেশের যুক্তি-তর্ক শুনেছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। সোমবার ছিল হেগের এ আদালতে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের কয়েক দশকের দখলদারিত্ব নিয়ে শুনানির ষষ্ঠ ও শেষ দিন।
শুনানির শেষ দিনে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত ইলদিজ বিচারকদের বলেন, ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এই অঞ্চলে সংঘাতের মূল কারণ। এছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং এর জেরে প্রায় পাঁচ মাস ধরে নির্বিচারে ইসরায়েলি আগ্রাসন ও ২৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি নিয়ে বক্তব্য রাখেন ইলদিজ।
তিনি বলেন, ৭ অক্টোবরের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি আবারও প্রমাণ করে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের মূল সমস্যাকে সমাধান না করে, এই অঞ্চলে শান্তি বিরাজ করতে পারে না। তিনি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে রাখাকে ‘শান্তির পথে প্রকৃত বাধা’ বলে বর্ণনা করেন তিনি।
একইসঙ্গে এটিকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকদের প্রতি আহ্বানও জানান তুরস্কের এই উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইসরায়েল অবশ্য এই শুনানিতে অংশ নেয়নি। দেশটির দাবি, আদালতের সম্পৃক্ততা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি অর্জনের চেষ্টার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এছাড়া আদালতের কাছে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোকে ‘পক্ষপাতমূলক’ বলেও অভিহিত করেছে ইসরায়েল।
আরব লীগের সেক্রেটারি জেনারেল আহমেদ আবুল গীত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের এই দখলদারিত্বকে ‘আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের অবমাননা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুনানির সময় আন্তর্জাতিক আদালতে বক্তব্য রাখা বেশিরভাগ দেশই বিচারকদের কাছে ইসরায়েলের এই দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করতে আহ্বান জানায়। তবে সোমবার ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র ফিজিসহ মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশ যুক্তি দিয়ে বলেছে, আইসিজের উচিত কোনও পরামর্শমূলক মতামত না দেওয়া।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে আদালতকে দখলদারিত্বের বিষয়ে কোনও পরামর্শমূলক মতামত সীমিত রাখার এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে নিঃশর্ত প্রত্যাহারের আদেশ না দেওয়ার আহ্বান জানায়।
সূত্র: রয়টার্স
আপনার মন্তব্য লিখুন