ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় পূর্ণ মাত্রায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) কাছে আবেদন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বুধবার এই আবেদন করা হয়।
এতে ইতোপূর্বে ইসরায়েলের প্রতি যেসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়নে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলি কঠোরতার কারণে গাজায় ভয়াবহ মাত্রায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ৮৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আগামী ছয় মাসে ক্ষুধায় মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের আবেদনে জানায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর গণহত্যা চালানোর কারণে ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ, শিশু ও নবজাতকরা চরম অবস্থার মুখে রয়েছে। এমন অবস্থায় আদালতের কাছ থেকে আরও কিছু পদক্ষেপ আমরা আশা করছি।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার আনা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ২৬ জানুয়ারি আইসিজে অন্তর্বর্তী আদেশে ইসরায়েলকে গণহত্যা প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল। এছাড়া গাজায় আরও বেশি ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাঠানো নিশ্চিত করতেও বলেছিল জাতিসংঘের এই আদালত।
দক্ষিণ আফ্রিকা এক বিবৃতিতে জানায়, দুঃখজনকভাবে ইসরায়েল আদালতের ওই আদেশ পালন করেনি। বরং ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর গণহত্যামূলক অপরাধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
হেগের আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার এই আবেদনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ প্রায় আসন্ন। কেবল গত সপ্তাহেই খাবারের অভাবে অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি শিশু মারা গেছে।
রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ব্যাপারেও আদালতের নির্দেশনা চেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
সূত্র: আল জাজিরা, আরব নিউজ, টাইমস অব ইসরায়েল, রয়টার্স
আইসিজে রুলিং: ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছে বড় বড় কোম্পানি
গাজায় গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার পর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রুলিংয়ে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল যে আগ্রাসন চালাচ্ছে তাতে গণহত্যার মতোই ঘটনা ঘটছে।
এরপর জাপানের ইতোচু কোম্পানি ঘোষণা করেছে, তারা ইসরায়েলের সাথে যে বিমান চলাচল বিষয়ক সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে তার অবসান ঘটাতে যাচ্ছে। ফরচুন গ্লোবালের ৫০০ বৃহত্তম কোম্পানির মধ্যে ইতোচু ৯৬তম অবস্থানে রয়েছে।
ইতোচুর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সুয়োশি হাচিমুরা এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন, “আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের ২৬ জানুয়ারির আদেশ বিবেচনায় নিয়ে এবং আদালতের ভূমিকার প্রতি জাপান সরকারের সমর্থনের কারণে আমরা এরইমধ্যে এমওইউ সম্পর্কিত নতুন কার্যক্রম স্থগিত করেছি এবং ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এমওইউ শেষ করার পরিকল্পনা করেছি।”
একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে স্পেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে মাদ্রিদ ইসরায়েলে সমস্ত অস্ত্র রফতানি স্থগিত করেছে।
এদিকে, দক্ষিণ বেলজিয়ামের ওয়ালোনিয়ার আঞ্চলিক সরকার সোমবার ইসরায়েলে দুটি অস্ত্র রফতানির লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
ওয়ালোনিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতির অগ্রহণযোগ্য অবনতির’ কারণেই নেওয়া হয়েছে।
সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স, মেহেরনিউজ, টকিও উইকেন্ডার
আপনার মন্তব্য লিখুন