রেলে বিনা টিকিটে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ভ্রমণ করার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার তিন যাত্রীর জরিমানা করা হয়। পরদিন শুক্রবার (৬ মে) জরিমানাকারী ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম বরখাস্ত হন।
তাঁর বিরুদ্ধে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগও আনা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সৌজন্যে : আমরা সবাই (সমাজ ও মানব উন্নয়ন মূলক সংগঠন)
ওই তিন যাত্রীর মধ্যে দুজন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রীর মামাতো ভাই, অন্যজন ভাগ্নে। তবে রেলমন্ত্রী বলেছেন, ওই যাত্রীরা তাঁর আত্মীয় নন।
রেলওয়ে সূত্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঈশ্বরদী রেল জংশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে ঢাকাগামী আন্ত নগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়েন। টিকিট ছাড়াই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কামরায় বসে ছিলেন তাঁরা। টিটিই টিকিট চাইলে তাঁরা সুলভ কামরার তিনটি টিকিট দিতে বলেন। একই সঙ্গে এসি কামরা খালি থাকায় সেখানে বসে ভ্রমণ করতে চান।
টিটিই তাঁদের জরিমানা ও সুলভের ভাড়া বাবদ মোট এক হাজার ৫০ টাকা নিয়ে এসি কামরা ছাড়তে বলেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর তাঁরা এসি কামরা ছেড়ে শোভন কামরায়ই ঢাকায় পৌঁছেন। কিছুক্ষণ পরই মুঠোফোনে টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানানো হয়।
বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠা ওই তিন যাত্রী হলেন মো. হোসেন, মো. ওমর ও ইমরুল কায়েস প্রান্ত। মো. হোসেনের সঙ্গে কথা হয় কালের কণ্ঠের। তিনি বলেন, তিনি ও ওমর রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রীর আপন মামাতো ভাই। তাঁদের সঙ্গের আরেক যাত্রী ইমরুল কায়েস প্রান্ত রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর বোনের ছেলে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ঢাকায় যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট নিতে বুকিং অফিসে যাই। সেখানে টিকিট না পেয়ে বিষয়টি আপুকে (শাম্মী) জানাই। আমাদের জন্য সুন্দরবন এক্সপ্রেসের তিনটি টিকিট দিতে আপু দায়িত্বরত গার্ড শরিফুল ইসলামকে মুঠোফোনে বলেন। এরপর আমরা ট্রেনের একটি বগিতে উঠি। কিছুক্ষণ পরই টিটিই শফিকুল ইসলাম এসে আমাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। ট্রেন থেকে আমাদের লাথি দিয়ে ফেলে দিতে চান। ’
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন অবশ্য গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নন। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো আত্মীয় জড়িত নন। রেল কর্মকর্তারা ওই টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না।
’ তবে রেলমন্ত্রী বলেন, গতকাল সকালেই তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তিনি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছেন, ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত বাজে আচরণ করেছেন। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
টিটিইকে বরখাস্তের বিষয়ে পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) মো. নাসির উদ্দিন জানান, ওই তিন যাত্রী টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। টিটিই নেশাগ্রস্ত ছিলেন বলে অভিযোগকারীরা মনে করছেন। শফিকুলের বিরুদ্ধে তিন মাস আগেও একবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবারের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা যাচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঘটনা তদন্তে গতকাল শনিবার পাকশী বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে টিটিই শফিকুলকে পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে তলব করে ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।