সেহরির ঠিক আগমুহূর্ত। মসজিদে মাইকের শব্দের বদলে গাজাবাসীর ঘুম ভাঙলো বোমার বিকট বিস্ফোরণে। রাতের নীরবতা ভেঙে গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। পন্ড হয় ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি। এই হামলার মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাসে আরও একবার হাহাকার-আর্তনাদের পরিস্থিতি তৈরি হলো উপত্যকাটিতে।
তবে, চুক্তির শর্ত উপেক্ষা করে এই হামলার আগে মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিলো ইসরায়েল। আলোচনা হয় স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও। ওয়াশিংটনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদেই শুরু হয় ভয়াবহ এই অভিযান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা দখলের পরিকল্পনা পন্ড হবার কারণে ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এরপরই তেলআবিবকে এমন বর্বর হামলার অনুমতি দিয়েছেন ট্রাম্প।
আল জাজিরার সিনিয়র পলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট মারওয়ান বিশারা বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে হামলার কৌশলগত যুক্তি হচ্ছে ট্রাম্পের গাজা দখলের বাসনা, ফিলিস্তিনিদের সরানো। কিন্তু যুদ্ধ ব্যতিরেকে আপনি লাখ লাখ মানুষকে কখনওই সরাতে পারবেন না।’
রমজান মাসে গাজায় এমন হামলার জন্য বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে প্রধান কারণ হিসেবে হামাসের কাছ থেকে জিম্মি উদ্ধারে ব্যর্থতাকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। আর তাই মেজাজ হারিয়ে আবারও গণহত্যার পথেই হাঁটছেন নেতানিয়াহু বলে দাবি করেছেন বিশ্লেষকরা।
সামরিক দিক থেকে বিবেচনা করলে, নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। জিম্মিদের যেভাবে মুক্তি দিয়েছে হামাস, তাতে তিনি খুবই অপমানিত বোধ করেছেন। তাই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে নেতানিয়াহু তার সেনাদের রাজি করিয়েছেন।
অনেক বিশ্লেষকের দাবি, নিজের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলার খবর ধামাচাপা দিতেই আবারও যুদ্ধের দিকে ইসরায়েলিদের মনোযোগ সরানোর প্রয়াস প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর। তবে, সব ছাপিয়ে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় দুই নেতার আগ্রাসনের শিকার হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি। সেই সাথে, বন্দি জিম্মিদের ভবিষ্যত ধুম্রজালে।
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গাজায় বোমা হামলার প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে ইসরায়েলিরা
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গাজায় বোমা হামলার প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে ইসরায়েলের সাধারন মানুষ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবনের তোয়াক্কা না করায় তীব্র ক্ষোভ জানায় বিক্ষোভকারীরা।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) স্থানীয় সময় রাতে রাজধানী তেলআবিবের রাজপথে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। জিম্মিদের ছবি হাতে র্যালি নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হেডকোয়ার্টাসের কাছাকাছি অবস্থান নেয় তারা। এসময় নেতানিয়াহু বিরোধী স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।
হামাসের সাথে চুক্তি করে যেকোনো মূল্যে বন্দি ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা। গত ১৯ জানুয়ারি, গাজায় প্রথম ধাপে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। তখন ২৫ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও হস্তান্তর করা হয় আটজনের মরদেহ।
ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময়ে ছাড়া পান প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি। এখনও হামাসের কাছে বন্দি ৫৯ ইসরায়েলি।