অযত্ন-অবহেলায় ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ আর সংস্কারের অভাবে পড়ে থাকায় শিকড়-বাকড় এবং আগাছা জন্মে কালের বিবর্তনে অস্তিত্ব বিলীনের পথে অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী নলিনী রঞ্জন সরকারের ঐতিহ্যবাহী পৈতৃক বাড়িটি।
এলাকাবাসী ঐতিহ্যবাহী বাড়িটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগের পরেও এখনো কোনো তার প্রতিকার পায়নি বলে তাদের দাবি।
সৌজন্যে : আমরা সবাই (সমাজ ও মানব উন্নয়ন মূলক সংগঠন)
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে ১৮৮২ সালের ২৫ জানুয়ারি সনাতন ধর্মাবলম্বী এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে নলিনী রঞ্জন সরকার জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতার নাম চন্দ্রনাথ সরকার। ১৯০২ সালে ময়মনসিংহ সিটি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১১ ভাইবোনের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই নলিনী রঞ্জন সরকার ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও ডানপিটে স্বভাবের।
লেখাপড়া শেষ না করেই ভাগ্য অন্বেষণে চলে যান সুদূর কলকাতায়। সেখানে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে- জড়িয়ে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন।
ব্রিটিশ সরকারের শাসনামলে তরুণ বয়সেই তিনি কলকাতা সিটি কপোরেশনের প্রথম বাঙালি মেয়র হন। এ অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ১৯০৯ সালে নেত্রকোনা শহরের মগড়া নদীর পাড়ে মালনী রোডে মনোরম পরিবেশে তার বাবার নামে চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
পরবর্তীকালে তিনি অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পুনরায় পশ্চিমবঙ্গ বিধান রায়ের মন্ত্রিসভার অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারত বিভক্তির পর নলিনী রঞ্জন সরকারের পুরো পরিবার জায়গাজমি রেখে ভারতে চলে যান।
সেই থেকে তাদের ঘরবাড়ি সহায় সম্পত্তি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ দিকে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই ১১ নম্বর চিরাং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)। পরিষদ থেকে কিছুটা দূরেই সাজিউড়া গ্রাম।
সেই গ্রামে প্রকৃতির সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করে কালের সাক্ষী হিসেবে এখনও দাঁড়িয়ে আছে এককালের ঐতিহ্যবাহী নলিনী রঞ্জন সরকারের পৈতৃক বাড়ি। এক একর জমিতে অবস্থিত দ্বিতল ভবনের বাড়িটি অযত্ন-অবহেলা আর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের অভাবে তার আগের জৌলুস হারিয়ে ফেলছে।