গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অবরোধ ও বোমাবর্ষণের তীব্র নিন্দা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।
এমনকি গাজায় নির্বিচারে বোমা ফেলে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করাকে ‘গণহত্যা’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।
বুধবার পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন একে পার্টির সদস্যদের সাথে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন। এরদোয়ান বলেন, এমনকি যুদ্ধেরও একটি ‘নৈতিকতা’ আছে কিন্তু চলমান সংঘাতে সেটি ‘খুব মারাত্মকভাবে’ লঙ্ঘন করা হয়েছে।
গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলি হামলায় গাজার অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, “মানুষকে তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে বাধা দেওয়া এবং বেসামরিক লোকজনের বাসস্থানে বোমা হামলা করা কোনো যুদ্ধ নয়, এটি গণহত্যা।”
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা প্রকাশ্যে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে বেসামরিক হত্যার বিরোধিতা করছি। একইভাবে, আমরা কখনোই গাজায় নির্বিচারে, অবিরাম বোমা হামলার মাধ্যমে অরক্ষিত নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে গণহত্যা মেনে নিতে পারি না।”
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের নিপীড়নমূলক নীতিই চলমান সংঘাতের কারণ। তিনি বলেন, “ইসরায়েলের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, রাষ্ট্র হিসাবে কাজ না করে তারা কেবল একটি সংগঠনের মতো কাজ করলে তাদেরকে সেভাবেই দেখা হবে।”
সূত্র: আল জাজিরা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় জাতিসংঘের ১১ কমী নিহত
গাজা উপত্যকায় গত শনিবার থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার ১১ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্টের পাঁচ সদস্যও নিহত হয়েছেন।
বুধবার সংস্থাগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউএনডব্লিউআরএ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গাজা উপত্যকায় ৭ অক্টোবর থেকে ১১ জন ইউএনআরডব্লিউএ সহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা খুবই দুঃখিত।’
নিহতরা ফিলিস্তিনি বা বিদেশি কর্মী কি না তা নির্দিষ্ট করা হয়নি বিবৃতিতে। তবে এতে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ইউএনআরডব্লিউএ স্কুলের পাঁচজন শিক্ষক, একজন গাইনোকোলজিস্ট, একজন প্রকৌশলী, একজন মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শদাতা এবং তিনজন সহায়তা কর্মী রয়েছেন।
‘কিছু তাদের পরিবারের সাথে তাদের বাড়িতে নিহত হয়েছেন। ইউএনআরডব্লিউএ এই ক্ষতির জন্য শোক প্রকাশ করছে’, এতে বলা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) একটি পৃথক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের পাঁচ সদস্য – চারজন গাজায় এবং একজন ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন।
সূত্র : রয়টার্স
হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে নিহতে বেড়ে ২৪০০
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ পাঁচ দিনে গড়িয়েছে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষের অন্তত ২ হাজার ৪০০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও ৮ হাজার ৭৯২ মানুষ আহত হয়েছেন। খবর আলজাজিরা ও হারেৎজ।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ফিলিস্তিনির স্বাস্থ্য মলন্ত্রণালয়ের বরাত আলজাজিরা জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলের সর্বশেষ বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ২০০ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আহতে হয়েছেন ৫ হাজার ৬০০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি আহত ব্যক্তিদের সেবা দিতে গাজার হাসপাতালগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, হামামের হামলা ইসরাইলের দক্ষিণে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হরিয়েছেন এবং ৩ হাজার ১৯২ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে দেশটির প্রতিরক্ষা রাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, চলমান যুদ্ধে ১৮৯ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৬০ জন সেনা সদস্য হামাসের হাতে বন্দি হয়েছেন।
এর আগে, গত শনিবার (৭ অক্টোবর) ইসরাইলে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। ফিলিস্তিনিদের উপর গত কয়েক দশক ধরে চালানো পাশবিকতার জবাব দিতে ইসরাইলের উপর এই হামলা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে হামাস।
গাজা যুদ্ধ থামাতে ‘অবিরাম প্রচেষ্টা’ চালাচ্ছে সৌদি আরব
ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধ থামাতে অবিরাম ও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নেতা সৌদি আরব।
বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এসপিএ।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এসপিএকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো যে কোনো মূল্যে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্যবস্তু বানানো এবং সাধারণ মানুষের প্রাণহানি থামানো। আমরা চাই, দু’পক্ষের মধ্যে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সমাধান করা।’
এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ও মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে যুদ্ধের শুরু থেকেই আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ।
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য পূর্ণ সমর্থন পুতিনের
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে নজিরবিহীন যুদ্ধের মধ্যেই বুধবার এই সমর্থন জানালেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
পুতিন বলেন, “ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান কয়েক দশক ধরে একই রয়েছে এবং এই অবস্থানটি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয়েই ভালোভাবেই জানে।”
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা সবসময় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পক্ষে কথা বলেছি, যার মধ্যে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি রয়েছে।”
তিনি মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের নীতির সমালোচনা করে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যমান মৌলিক রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সমাধান খোঁজার পরিবর্তে আর্থিক সহায়তার দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপগুলো কেবল উত্তেজনাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। অথচ এখন দরকার সমঝোতার উপায় খুঁজে বের করা।”
পুতিন বলেন, “অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতিকে কোনোভাবে শান্ত করা সম্ভব হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে আমাদের অবশ্যই এর জন্য চেষ্টা করতে হবে কারণ বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের সম্প্রসারণ ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।”
উল্লেখ্য, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে নজিরবিহীন যুদ্ধ চলছে। গত শনিবার ভোরে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে অভিযান শুরু করে গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা। এতদিন ইসরায়েলের বিপক্ষে শুধুমাত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েছে ফিলিস্তিন। শনিবারই প্রথমবারের মতো আগে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের জুন মাসের যুদ্ধবিরতির পর প্রায় ২ বছর ধরে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা শেষে এই হামলা চালায় হামাস।
তবে অনতিবিলম্বে ইসরায়েলও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তারা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। পাল্টা আক্রমণে দেশটি গাজায় মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণ করছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২০০ জনে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
এছাড়াও ইসরায়েলের হামলায় পাঁচ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আল জাজিরা দাবি করেছে, হামাসের হামলায় এরই মধ্যে ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়েছে। সেখানেও তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
সূত্র: সিনহুয়া, আল জাজিরা