গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসবে বিএনপি। আজ রবিবার থেকে এই বৈঠক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বিকাল ৫টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১২-দলীয় জোট এবং সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন। বাকি দল ও জোটগুলোর সঙ্গেও পর্যায়ক্রমে বৈঠক করবে দলটি।
সূত্রগুলো বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের বৈঠকের আলোচনাও হবে ভিন্ন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে বৈঠকে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হবে। এসব আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন অগ্রাধিকার পাবে। একই সঙ্গে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মী যারা এখনো কারাবন্দী রয়েছেন, তাঁদের মুক্ত করা ও মামলা সুরাহার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে আলোচনায়।
এর আগে, সরকার পতনের আন্দোলন ঘিরে অনেকবারই সমমনা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। সবশেষ গত ১২ জুলাই এই কার্যক্রম শুরু হয়। যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে ওই সময় বেশ কয়েকটি দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। ওই কার্যক্রম চলমান থাকতেই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশ। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। এই সরকারের কাছে ইতিমধ্যে নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে রোডম্যাপ চেয়েছে বিএনপি।
এদিকে, শনিবার (২৪ আগস্ট) জধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অতি দ্রুত নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে রোডম্যাপ প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই যে, প্রধান উপদেষ্টা অতি দ্রুত জনগণের সামনে তিনি কী করতে চান তা উপস্থাপন করবেন। একটা রোডম্যাপ দেবেন যে, কীভাবে তিনি অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন, কীভাবে তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো ঘটিয়ে জনগণকে স্বস্তি দিয়ে সামনের দিকে এগোবেন নির্বাচন করার জন্য।
এসময় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংলাপেরও দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
সরকার পতনে সবাইকে ‘জাতীয় ঐক্য’র আহ্বান বিএনপির
সরকারের পতনের একদফা দাবিতে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ‘ঐক্য’র আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে, লুন্ঠিত গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, অধিকারহীন জনগণের ও জাতির মুক্তির লক্ষ্যে ন্যূনতম একদফার ভিত্তিতে এবং দাবিতে দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, ব্যক্তি ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি ‘জাতীয় ঐক্য’ গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনের সকল শরিক দল ও জোট, বাম-ডান সকল রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক ও সকল ইসলামী রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের প্রতিও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সময় ও যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতার কারণে বিবৃতির মাধ্যমে সম্মতি প্রদান করা যেতে পারে। শীঘ্রই সম্মতিপ্রাপ্ত সকলের স্বাক্ষরে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা হবে। জাতীয় ঐক্যের এই ঐতিহাসিক ঘোষণা ও দলিল দেশ ও জাতির মুক্তি ত্বরান্বিত করবে ইনশাআল্লাহ।’
দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে সবাইকে জেগে উঠার আহ্বান ফখরুলের
সরকারের দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে সবাইকে ‘জেগে উঠা’র আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার (২৫ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে নজরুল ইসলাম এতো বেশি প্রাসঙ্গিক যে প্রায়ই তার কথা মনে পড়ে। তার কথা উচ্চারণ করতে ইচ্ছা করে।
দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু দুস্তর পারাপার…। এটাই হচ্ছে মূল কথা। আজকে এই দুর্গম গিরি কান্তার মরু পার হতে হবে। ’
‘দুঃশাসন, ফ্যাসিবাদ, অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন আজ পুরো বাংলাদেশকে গ্রাস করে ফেলেছে। এখান থেকে বের হতে হবে। কিছুক্ষণ আগে একজন বলেছিলেন যে, ঘুমিয়ে থাকে। এই ঘুম থেকে জাগতে হবে। জেগে উঠে নিজেদেরকে মুক্ত করতে হবে। এই সেই মুক্তিই হচ্ছে আমাদের একমাত্র পথ। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অন্তরীণ, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব দেশের বাইরে নির্বাসিত। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকামী ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা। ’
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘এ যুগে এখনো আমাদের দেখতে হয় যে, নারীদের ওপর চরম নির্যাতন করা হচ্ছে। এখানেই নজরুল ইসলাম সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। এখানেই জেগে উঠতে হবে। কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙে ফেল, কর যে লোপাট, রক্ত-জমাট, শিকল পূজার পাষাণ-বেদী। এভাবে নিজেদের উদ্দীপ্ত করতে হবে। আমাদের অন্যদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে। আজ তরুণ-যুবকদেরকে জেগে উঠতে হবে। ’
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করব, বিশেষত যারা রাজনীতি করছি, তাদের বেশি করে নজরুল গড়া উচিত। যারা সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছি, যারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছি, নজরুলকে যদি আমরা সঠিকভাবে পড়ি, বুঝার চেষ্টা করি, অনুধাবণ করি তাহলে আমরা আমাদের নিজেদেরকে জানতে পারব, চিনতে পারব। ’
‘আমরা অন্যের কাছে মাথানত করে থাকব না। আধিপত্যবাদের লেজুড়বৃত্তি আমরা করব না, সামাজ্যবাদের লেজুড়বৃত্তি আমরা করব না। জাতির সেই সত্ত্বাকে বিকশিত করে আমাদের দাঁড়াতে হবে। এটার কোনো বিকল্প নেই। ’
গবেষকদের কবি নজরুল ইসলামের সাহিত্যির ওপর আরো গবেষণা করার অনুরোধ জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘কবি নজরুলকে এতো ছোট পরিসরে আলোচনা নয়। তার জন্য বিশাল আয়োজন করেন- হাজার হাজার লোক সেখানে আসুক। বড় প্যাণ্ডেল তৈরি হোক। সেখানে আমরা নজরুলের কথা শুনি। সেখানে বিশিষ্ট গবেষকদের নিয়ে আসুন। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা আমরা করব। এই উদ্যোগ আপনাদের নিতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘নজরুল ইসলামকে আগামী দিনে বাংলাদেশের মানুষের আরো কাছে পৌঁছে দিতে এবং বর্তমানের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমরা যে ভয়াবহ অবস্থায় আছি তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে গাই –‘বল বীর-বল উন্নত মম শির’। ”
অনুষ্ঠানে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে কবি নজরুল ইসলামের কর্মময় জীবন-সাহিত্য তুলে ধরতে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরা হয়।
কবি আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে ও হুমায়ুন কবির বেপারীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় কবি মাহবুব হাসান, ফজলুল হক সৈকত, কবি জাকির আবু জাফর, রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে কবি নজরুল ইসলামের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন সামিয়া নুজহাত, নাসিম আহমেদ ও লিপি।
আপনার মন্তব্য লিখুন