গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বিপন্ন হয়ে পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রসদ, সেনা আর সমরযান সব দিকেই অনেক ক্ষতি হয়েছে। হামাসের সাথে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে ভয়াবহ রকমের ক্ষতির মুখে পড়েছে ইসরায়েলের অর্থনীতি। চাপ সামলাতে গত মাস থেকেই গাজা থেকে ধীরে ধীরে সেনাদের সরিয়ে নিচ্ছিল ইসরাইল। বিশেষ করে যুদ্ধ করতে অপটু রিজার্ভ সেনাদের গাজা থেকে ফিরিয়ে নেয়া হয় তড়িঘড়ি করে।
এবার সামনে এলো নতুন খবর। ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে সরিয়ে নিয়ে এবার লেবানন সীমান্তে মোতায়েন করা হচ্ছে। কারণ হিজবুল্লাহর ধারাবাহিক হামলায় ইসরায়েলের লেবানন সীমান্ত ঘেষা দক্ষিণ অঞ্চল রীতিমতো ভূতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়েছে। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে গাজা থেকে সেনা সরিয়ে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ক’দিন আগেই এক ইসরায়েলি শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা স্বীকার করেছিলেন এক সাথে হিজবুল্লাহ ও হামাসের সাথে লড়াই করার মতো ক্ষমতা ইসরায়েলি বাহিনীর নেই।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান হেরজি হারেভি ৩৬তম ডিভিশনকে গাজা থেকে সরিয়ে লেবানন সীমান্তে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহর ধারাবাহিক হামলার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে বলে জানিয়েছে ইরানি গণমাধ্যম প্রেস টিভি।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গাজা সামরিক অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা মেজর জেনারেল ইয়ারুন ফিনকেলম্যান ৩৬তম ডিভিশনকে গাজার মধ্যাঞ্চলে মোতায়েন করেছিলেন। আরেকজন মেজর চেয়েছিলেন এই ডিভিশনটিকে উত্তর গাজায় রিজার্ভ ফোর্সের বদলে মোতায়েন করতে।
তবে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ডিভিশনটিকে পুরোপুরিভাবে গাজা থেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের এবার লেবানন সীমান্তে পাঠানো হবে। যদিও কবে নাগাদ তাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি ইসরায়েলি গণমাধ্যম। এরইমধ্যে লেবাননে হামাসের আরো এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল ইসরায়েল। যদিও সেই চেষ্টায় তেল আবিব এবার সফল হতে পারেনি।
তবে লেবানন জুড়ে হিজবুল্লাহর স্থাপনা লক্ষ্য করে এখনো হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। পাল্টা জবাব হিসেবে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিমান ঘাঁটিসহ নানা স্থাপনায় হামলা অব্যাহত রেখেছে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের শর্ত প্রত্যাখ্যান নেতানিয়াহুর
যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের দেওয়া শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এ সময় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে গাজায় ম্পূর্ণ বিজয় সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এর আগে গত সপ্তাহে গাজায় ছয় সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করে ইসরায়েল। তবে হামাস প্রাথমিকভাবে সে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়নি। বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়ে নতুনভাবে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করে গাজার এই শাসক গোষ্ঠী। প্রস্তাবের চুক্তি অনুয়ায়ী এই সময়ের মধ্যে সমস্ত কারাবন্দী মুক্ত করার প্রস্তাব করে ফিলিস্তিনের এই স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি। এছাড়া পুরো গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার করা ও যুদ্ধ শেষ করার প্রস্তাবও করেন তারা। তবে নেতানিয়াহু হামাসের এই প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হামাসের সঙ্গে আলোচনা আর কোথাও যাচ্ছে না। হামাসের যুদ্ধবিরতির শর্তগুলোকে ‘উদ্ভট’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নেতনিয়াহু আরও বলেন, গাজায় চূড়ান্ত বিজয় ব্যতীত সমাধানের আর কোনও পথ নেই। শুধুমাত্র সামরিক চাপই গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করবে। যদি হামাস গাজায় অবস্থান করে তাহলে আমাদের পরবর্তী হামলার জন্য সময় গুণতে হবে।
অন্যদিকে নেতানিয়াহুর বক্ত্যব্যের কড়া সমালোচনা করেছে হামাস। হামাসের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য ‘রাজনৈতিক স্পর্ধার’ একটি রূপ। নেতানিয়াহু গাজায় সংঘাত চালিয়ে যেতে চান বলেও অভিযোগ এই নেতার।
সূত্র: বিবিসি, টাইমস অব ইসরায়েল
আপনার মন্তব্য লিখুন