নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক বা পিরিয়ড একটি সাধারণ শারীরিক সার্কেল। আধুনিক যুগেও দেখা যায় দেশের অধিকাংশ নারীর মাসিক চলাকালে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতনতা আসেনি। ফলে বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণে ভুগছেন তারা।মেয়েদের পিরিয়ড বা মাসিকচক্র খুবই সাধারণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া।
বয়ঃসন্ধিকাল থেকে নিয়মিত মাসিক হওয়া নারীর সুস্থতার লক্ষণ। অথচ বিষয়টি আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের সমাজে গোপনীয় ও অস্বস্তিকর বিষয় হিসেবে প্রচলিত। তাই মাসিক অসচেতনতার কারণে বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণে ভুগছে নারীরা। মাসিক সচেতনতা শুধু মেয়েদের জন্য নয়, সচেতন হতে হবে পুরুষদেরও।
করণীয়
১২-১৩ বছরে মাসিক শুরু হয়ে ৫২-৫৫ বছর পর্যন্ত চলমান থাকে। প্রতিমাসে সঠিক সময়ে মাসিক শুরু হওয়া নারীর শারীরিক সুস্থতার লক্ষণ। সাধারণত তিন থেকে আট দিন স্থায়ী হয় মাসিক। এ সময়ে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও পুষ্টিকর খাবারে মনোযোগী হওয়া জরুরি। এর সামান্য ভুলে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যে জটিলতার আশঙ্কা থাকে। মাসিক চলাকালে জীবাণুমুক্ত স্যানিটারি প্যাড, ট্যাম্পুন বা মিনিস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করতে হবে; কিন্তু এসব সামগ্রী ব্যয়বহুল হওয়ায় সবাই কিনতে পারেন না। তবে খরচ ছাড়াও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সম্ভব। পুরোনো নরম যে কোনো সুতি কাপড় মাপমতো নিয়ে ধুয়ে-শুকিয়ে ব্যবহার করা নিরাপদ।
স্বাস্থ্যঝুঁকি
পিরিয়ড চলাকালে প্রতি পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পরপর প্যাড বা কাপড় পরিবর্তন করতে হবে। ছয় ঘণ্টার বেশি স্যানিটারি প্যাড পরে থাকলে তাতে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। এতে প্রস্রাবের নালিতে বা প্রজননতন্ত্রে ইনফেকশন ঘটিয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে। ফলে তলপেটে ব্যথা, গায়ে জ্বর, মাসিকের রাস্তায় চুলকানি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হিসেবে বন্ধ্যত্ব সমস্যাও হতে পারে। মাসিকের সময় ৩০ থেকে ৮০ মিলিলিটার পর্যন্ত রক্ত যেতে পারে। রক্ত একটু বেশি গেলে ঘন ঘন প্যাড পরিবর্তন জরুরি। প্রতিবার প্যাড পরিবর্তন করার সময় অবশ্যই আশপাশের এলাকা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তবে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ ধরনের পরিষ্কারক ব্যবহার করা উচিত নয়।
পরিষ্কারের জন্য এখন বাজারে কোমল সাবান বা সলিউশন পাওয়া যায়। সিলিকন কাপ ব্যবহার করলে প্রতি মাসে ব্যবহারের আগে ও পরে অবশ্যই পানিতে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করবেন। প্রতিবার ব্যবহারের পর শুধু পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুলেই হবে। মনে রাখতে হবে সিলিকন কাপ সাবান দিয়ে ধোয়া যাবে না। এটি ধোয়ার জন্য আলাদা সলিউশন ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহৃত প্যাড বা কাপড় যেখানে সেখানে ফেলাও উচিত নয়। টয়লেটের কমোডেও ফেলা উচিত নয়।
ভালোভাবে মুড়িয়ে নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে, যেন একজনের জীবাণু অন্য কাউকে সংক্রমিত করতে না পারে। কাপড় ব্যবহার করলে তা ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। ফেলে দিতে চাইলেও ধুয়ে তারপর ফেলুন। ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা দিলে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। পিরিয়ড সাধারণ বিষয় হলেও এ সময় কোনো সমস্যা বা শারীরিক অস্বস্তি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া নিরাপদ। বিশেষ করে অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, মাসিকের সময় তীব্র ও অসহনীয় পেটে ব্যথা কিংবা অস্বাভাবিক জ্বর ও দুর্বলতা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি।