একের পর এক গোলের সুবর্ণ সুযোগ হাতের কাছেও এসে দিচ্ছিল না ধরা। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যায়। নিজেকে স্মরণীয় করতেই এমন মুহূর্তে সব আলো নিজের দিকে কাড়তে বাধ্য করেন নেইমার। অতিরিক্ত সময়ে নাম্বার টেনের রেকর্ড ছোঁয়া গোল। এরপর ব্রুনো পেতকোভিচের লক্ষ্যভেদে ম্যাচে সমতা টানা। রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল। প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া।
খানিকপর লুসেইল স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস। এ ম্যাচের জয়ী দল সেমিতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলবে।
শুক্রবার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে হওয়া প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের পঞ্চম মিনিটে পোস্ট বরাবর প্রথম শট নেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। দূরপাল্লার শটটি অবশ্য ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচের লুফে নিতে বেগ পেতে হয়নি।
আট মিনিট পর মারিও পালাসিচের পাসে গোলমুখে বল পান ইভান পেরিসিচ। ডান পায়ে ঠিকঠাক কিক নিতে ব্যর্থ হওয়ায় গোলের দেখা পাননি।
রিচার্লিসনের অ্যাসিস্টে বল নিয়ে ২০ মিনিটের মাথায় ডান পায়ে মাপা শট নিয়েছিলেন। ক্রোয়েট ডিফেন্ডার জসকো গ্যাভারিওল শট ব্লক করেন। কয়েক সেকেন্ড পর ব্রাজিলিয়ান থিয়াগো সিলভার কাছ থেকে বল পাওয়া নেইমারের বাঁ প্রান্ত থেকে নেয়া শট খানিকটা সামনে ঝাঁপিয়ে ধরেন লিভাকোভিচ।
৪১ মিনিটে ডি বক্সের একদম কাছে ভিনিসিয়াস ফাউলের শিকার হন। ফ্রি কিক পায় ব্রাজিল। সেট পিস থেকে নেইমারের নেয়া শট সরাসরি লিভাকোভিচের হাতে চলে যায়।
গোলশূন্য প্রথমার্ধে খুব বেশি গোলের সুযোগ তৈরি হয়নি। ব্রাজিলের নেয়া পাঁচ শটের তিনটি লক্ষ্য বরাবর ছিল। তিনটি শট ক্রোয়েশিয়া নিতে পারলেও কোনোটিই পোস্ট লক্ষ্য করে নিতে পারেনি।
ম্যাচের ৪৭ মিনিটে এডের মিলিতাওয়ের নিচু শট বিপদমুক্ত করতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়াতে গিয়েছিলেন গ্যাভারিওল। পা দিয়ে বল ঠেকিয়ে দেন তৎপর লিভাকোভিচ।
পরের মিনিটে নেইমারের কিক গ্যাভারিওল ব্লক করার পর বল পান রিচার্লিসন। তার শট আবারো লিভাকোভিচ প্রতিহত করেন যদিও লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা তুলেছিলেন।
খেলার ৫৫ মিনিটে রিচার্লিসনের পাসে বল নিয়ে নেইমারের বাঁ পায়ের শটও লিভাকোভিচ পা দিয়ে ঠেকিয়ে জাল অক্ষত রাখেন।
লুকাস পাকুয়েতা গোলমুখে ৬৬ মিনিটে দারুণ গোলের সুযোগ পান। সামনে এগিয়ে এসে তার কিক হাত দিয়ে লিভাকোভিচ ফিরিয়ে দেন। একের পর এক সেভ করে যেন তিনি হয়ে ওঠেন ক্রোয়েশিয়ার প্রাচীর।
৭৬ মিনিটে রিচার্লিসনের বাড়ানো বল নিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে নেইমার ডি বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন। ব্রাজিলিয়ান তারকা বাঁ পায়ের শট নেয়া মাত্র তার পায়ের কাছে গিয়ে শুয়ে পা দিয়ে ক্রোয়েট গোলরক্ষক বল মাথের বাইরে পাঠান।
মিনিট চারেক পর ভিনিসিয়াসের বদলি হিসেবে নামা রদ্রিগোর পাসে বল পাওয়া পাকুয়েতার শটও লিভাকোভিচ অনায়াসে সামনে ঝুঁকে পড়ে ধরেন। ব্রাজিলের একের পর এক আক্রমণ তিনি এভাবেই রুখে দিতে থাকেন।
নির্ধারিত সময়ে কোনো দল গোলের দেখা পায়নি। ফলে ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়।
১০১ মিনিটের মাথায় থিয়াগো সিলভার ক্রসে বল নিয়ে ডি বক্সের ভেতর বাইসাইকেল কিক নিতে পারেননি পেদ্রো। বল তার পায়ে লেগে লিভাকোভিচের গ্লাভসবন্দি হয়।
দুই মিনিট পর পেতকোভিচ বাঁ প্রান্ত থেকে দুইজনকে কাটান। এরপর আরও দুইজনকে কাটিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পাস দেন। বাজে শটে পোস্টের অনেক উপর দিয়ে বল মাঠের বাইরে পাঠান ব্রোজোভিচ।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষের আগ মুহূর্তে ডেডলক ভাঙেন নেইমার। সতীর্থ পাকুয়েতার পাসে বল নিয়ে ছয় গজ দূর থেকে নেয়া ডান পায়ের শটে তিনি বল জালে জড়িয়ে ব্রাজিলকে উল্লাসে ভাসান।
সেলেসাও জার্সিতে ১২৪ ম্যাচে ৭৭ গোলের মালিক এখন নেইমার। ফুটবল কিংবদন্তি ও ব্রাজিলের তিন বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য পেলে জাতীয় দলের হয়ে ৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল করেছিলেন। দীর্ঘ ৫১ বছর ধরে সেলেসাওদের হয়ে তিনি ছিলেন এককভাবে সর্বাধিক গোলের মালিক। এবার তাকে স্পর্শ করলেন নেইমার।
নাটকীয়তার তখনো বাকি ছিল। ১১৭ মিনিটে মিলাভ অরসিচের অ্যাসিস্টে বল নিয়ে বাঁ পায়ের বুলেট গতির শটে গোল করে ম্যাচে সমতা টানেন ব্রুনো পেতকোভিচ।
রেফারির শেষ বাঁশি বাজার কয়েক সেকেন্ড আগে কাসেমিরোর শট লিভাকোভিচ ঠেকালে ম্যাচ টাইব্রেকারে পৌঁছায়।
ক্রোয়েশিয়ার হয়ে প্রথম শটে নিকোলা ভ্লাসিচ গোল পেলেও ব্রাজিলের রদ্রিগোর গোল ঠেকান লিভাকোভিচ।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিকে ক্রোয়েটদের বলে বল জালে জড়ান লভরো মাজের ও লুকা মদ্রিচ। ব্রাজিলের হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন কাসেমিরো এবং পেদ্রো।
চতুর্থ শটে মিলাভ অরসিচ গোল নিশানাভেদ করলেও মার্কুইনহোসের কিক বারে লেগে ফিরে আসলে ব্রাজিলের হেক্সা জয়ের মিশনের করুণ সমাপ্তি ঘটে।