সমাবেশ থেকে মুসলিম জনপদগুলোতে অমুসলিম শক্তিগুলোর আগ্রাসন ও গণহত্যাকে মুসলমানদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার সমন্বিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অভিহিত করা হয়। বক্তারা ফিলিস্তিন, আরাকান ও কাশ্মিরের মুসলমানদের উপর নিপীড়নকে একই সূত্রে গাঁথা বিবেচনা করে শত্রুদের বিরুদ্ধে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এ সময় কাশ্মিরে সাম্প্রতিক হামলার জের ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধের প্রস্তুতিরও প্রতিবাদ জানানো হয় সমাবেশে। অংশগ্রহণকারী মুসল্লিরা ‘ফ্রি ফ্রি, কাশ্মীর’, ‘ফ্রি ফ্রি, প্যালেস্টাইন’, ‘ফ্রি ফ্রি, আরাকান’, ‘বিশ্ববাসী এক হও, গাজা দখল রুখে দাও’, ‘দুনিয়ার মুসলিম এক হও, লড়াই করো’, ‘ইসরায়েল/ভারত/মিয়ানমারের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ভারত ফিলিস্তিনি গণহত্যায় ইসরায়েলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে এবং ওয়াকফ বিলের মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি সাম্প্রতিক কাশ্মিরের পেহেলগামের ঘটনাকে পুঁজি করে ভারতে মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এবং হিন্দুত্ববাদীদের শাস্তি ও মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ বিষয়ে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
শামসুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নারী কমিশনের প্রতিবেদনের ইসলাম বিরোধী সুপারিশের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘ভারতের প্রকাশ্য দালাল পালালেও বর্ণচোরা দালালরা সক্রিয়। তারা এনজিও দালালদের সঙ্গে মিলে মোদী সরকারের মতো বাংলাদেশে মুসলমানদেরকে ইসলামী আইনের বদলে অভিন্ন পারিবারিক আইন চাপিয়ে দিতে চায়।’ তিনি অবিলম্বে নারী কমিশন ভেঙে দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট দালালদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জানমালের নিরাপত্তা ও ইজ্জত রক্ষার জন্য আমাদের লড়াই চলছে এবং চলবে।’ তিনি ভারতে মুসলমানদের ওপর হিন্দুত্ববাদীদের গণহত্যা ও উচ্ছেদ অভিযানের নিন্দা জানান এবং কাশ্মিরের জনগণের স্বাধীনতার দাবি মেনে ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি আরাকানকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য নিরাপদ করে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিও উত্থাপন করেন। ফিলিস্তিন স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।
সাইয়েদ কুতুব আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ মুসলমানদের। মুসলমানরা লড়াই করে ফ্যাসিবাদ উৎখাত করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দিয়েছে। তারা এই সুযোগের অপব্যবহার করে একটি নারী কমিশন করেছে যা ইসলাম বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত।’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান ও আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহমুদুল হাসান; বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সদস্য সচিব ফজলুর রহমান সহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
সম্মিলিত মুসলিম সেনাবাহিনী গঠনের দাবি এনআরসির
প্রকাশ (১৮-০৪-২০২৫)
ফিলিস্তিন, ভারত, কাশ্মীর ও আরাকানের নির্যাতিত মজলুম মুসলমানদের জাতিগত নিপীড়ন থেকে রক্ষায় সম্মিলিত মুসলিম সেনাবাহিনী গঠনের দাবিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।
শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি যোগ দেন।
তারা ‘ফ্রি ফ্রি, প্যালেস্টাইন’, ‘ফ্রি ফ্রি, আরাকান’, ‘ফ্রি ফ্রি, কাশ্মীর’, ‘বিশ্ববাসী এক হও, গাজা দখল রুখে দাও’, ‘দুনিয়ার মুসলিম এক হও, লড়াই করো’, ‘ইসরাইলের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ভারতের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘মিয়ানমারের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশ বক্তব্য রাখেন যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ।
বিক্ষোভে মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, মুসলিম উম্মাহকে রক্ষায় ব্যর্থ ওআইসিকে বাদ দিয়ে মুসলিম উম্মাহ পরিষদ গঠন করে বিশ্ব মুসলিম সেনাবাহিনী গঠন করতে হবে। মক্কা, মদিনা, মসজিদুল আকসাসহ বিশ্ব মুসলিমদের ওপর আক্রমণ রোধ করতে, গাজা-রাফা-আরাকান-কাশ্মীরের মুসলিমসহ যেখানেই মুসলিমদের ওপর নির্যাতন হবে সেখানেই এই বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়বে।
সাইয়েদ কুতুব বলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ পুনর্বহাল করায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। সেইসঙ্গে আমরা চাই বাংলাদেশ সরকার ফিলিস্তিনসহ ভারত, কাশ্মীর ও আরাকানের মুসলিমদের রক্ষায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে নিয়মিত তৎপরতা চালাবে।
আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, আমরা জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য এই বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে আসছি। পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ লেখা পুনর্বহালের দাবিতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দেওয়া একমাসের আলটিমেটাম শেষেও সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না পেয়ে আমরা ১৮ মার্চ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্মারকলিপি প্রদান করি। স্মারকলিপি গ্রহণকালীন আমাদেরকে দেওয়া কথা তিনি রক্ষা করায় তাকে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ ও দেশবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও মোবারকবাদ জানাই।
তিনি ফিলিস্তিন, ভারত, কাশ্মীর, আরাকানসহ সব নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষায় জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নিয়মিত বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ওয়াসিম আহমদ ও এইচ এম বায়েজিদ বোস্তামি; বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান, ও সহকারী সদস্য সচিব ফারজায়ান আহসান কৃতিত্ব; এবং ঢাকা মাদ্রাসা-ই-আলীয়ার আহ্বায়ক রাকিব মণ্ডল প্রমুখ
আপনার মন্তব্য লিখুন