ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সেখানকার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক বাহিনী আল-কাসাম ব্রিগেডের হাতে বন্দি থাকা একজন ইসরায়েলি নারী তার প্রতি সদয় ও মানবিক আচরণ করার জন্য হামাস যোদ্ধাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ড্যানিয়েল অ্যালোনি নামের ওই ইসরায়েলি নারীকে তার ছয় বছর বয়সি মেয়ে এমিলিয়ার সঙ্গে গাজায় আটক রাখা হয়েছিল। অ্যালোনি ও তার মেয়ে গত শুক্রবার গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনেই মুক্তি পান।
অ্যালোনি বন্দি থাকা অবস্থায় হিব্রু ভাষায় চিঠি লিখে হামাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বলে ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, হামাসের সামরিক বাহিনী ইজ্জাদিন আল-কাসাম ব্রিগেডের যোদ্ধারা তাদের সঙ্গে অত্যন্ত সদয় আচরণ করেছেন।
অ্যালোনি ছাড়া আরও যেসব ইসরায়েলি বন্দি হামাসের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছেন তারাও গাজায় বন্দি থাকা অবস্থায় সদ্ব্যবহার পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, তাদেরকে গাজায় অতিথির মতো সেবা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সময় ইসরায়েলি বন্দিদেরকে হাসিমুখে হামাস যোদ্ধাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে দেখা গেছে।
অ্যালোনি হামাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিটি বন্দি অবস্থায় লিখলেও মুক্তি পাওয়ার পর তিনি এর উল্টোটা প্রমাণিত হয় এমন কোনও বক্তব্য দেননি।
তিনি আল-কাসাম যোদ্ধাদেরকে অন্তরের অন্তঃস্তল থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, “আপনারা আমার মেয়ে এমিলিয়ার সঙ্গে অসাধারণ মানবিক আচরণ করেছেন। আপনারা তাকে আপনাদের নিজেদের মেয়ের মতো করে ভালোবেসেছেন।”
তিনি আরও লিখেছেন, তার ও তার মেয়ের সঙ্গে হামাস যোদ্ধারা যে সদয় আচরণ করেছেন তাতে তিনি গাজায় নিজেকে একজন রানি হিসেবে অনুভব করেছেন এবং তার কাছে মনে হয়েছে তিনি সবার মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন।
সূত্র: প্যালেস্টাইন ক্রনিকল, প্রেসটিভি
গাজার টানেলে ইসরায়েলি বন্দিদের সঙ্গে দেখা করেন হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার গাজা উপত্যকার একটি টানেলে ইসরায়েলি বন্দিদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলে একজন মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি তার পরিবারকে জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোতে খবরটি ছাপা হয়েছে।
হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া ওই ইসরায়েলি নারী তার পরিবারকে জানান, তাদেরকে গাজায় নিয়ে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই উপত্যকার একটি টানেলে তাদের সঙ্গে দেখা করেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
তিনি নির্ভুল হিব্রু ভাষায় তাদেরকে বলেন, “হ্যালো, আমি ইয়াহিয়া সিনওয়ার। আপনারা গাজার সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে রয়েছেন। আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না।”
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে মুক্তিপ্রাপ্ত ওই নারীর নাম প্রকাশ করা হয়নি।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার বর্তমানে গাজায় অবস্থানকারী সবচেয়ে সিনিয়র হামাস নেতা। তার নেতৃত্বেই এই প্রতিরোধ আন্দোলন ইহুদিবাদী ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। হামাসের শীর্ষ নেতা ও পলিটব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়া কাতারের রাজধানী দোহায় সংগঠনটির প্রবাসী দফতরে দায়িত্ব পালন করছেন।
ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে তিনবার ইসরায়েলি কারাগারে আটক থাকতে হয় এবং তিনি কারাবন্দি থাকা অবস্থায় হিব্রু ভাষা আয়ত্ব করেন। ইসরায়েলি বাহিনীর মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে থাকা এই হামাস নেতাকে তারা কয়েকবার হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে গিলাদ শালিত নামের একজন ইসরায়েলি সেনার মুক্তির বিনিময়ে যে ১,১০০ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছিলেন তাদের সঙ্গে মুক্তি পান সিনওয়ার। সে সময় ইসমাইল হানিয়া গাজায় হামাসের নেতৃত্বের দায়িত্বে ছিলেন।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, হারেৎজ, ইসরায়েল হায়োম, আনাদোলু এজেন্সি
আপনার মন্তব্য লিখুন