মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এক দিন আগে রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম পুনরায় চালুর কথা জানানো হয়েছে। তবে অবৈধ হয়ে পড়া সেসব শ্রমিকই কেবল এই সুযোগ পাবেন যাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত থাকার রেকর্ড নেই।’
নানা কারণে মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে পড়া শ্রমিকরা সে দেশে বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের আওতায় তাদেরকে এই সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের অপরাধ কার্যক্রমের রেকর্ড নেই এমন কর্মীরা এই সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এ বিষয়ে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার বাজারে আমাদের নতুন কর্মী প্রবেশ করছেন। পাশাপাশি দেশটিতে আনডকুমেন্টেড অবস্থায় রয়েছেন এমন কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এটা দারুণ খবর। বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ বলে মনে করছি।’
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার এ বিষয়ে বলেন, ‘দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এক দিন আগে রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম পুনরায় চালুর কথা জানানো হয়েছে। তবে অবৈধ হয়ে পড়া সেসব শ্রমিকই কেবল এই সুযোগ পাবেন যাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত থাকার রেকর্ড নেই।’
‘কোন কোন খাত এবং কোন দেশের কর্মীরা এর আওতায় আসবেন সে বিষয়ে আমরা এখনও বিস্তারিত জানতে পারিনি। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ সেটি নির্ধারণ করে। বিস্তারিত জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
এই প্রোগ্রামের ঘোষণায় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল বলেছেন, ‘মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন খাতে কর্মরত অবৈধ শ্রমিকদের যাতে তাদের মালিকেরা বৈধভাবে নিয়োগ দিতে পারেন সেটাই এই প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য। বিদেশি কর্মী আনার জন্য বিভিন্ন দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে অর্থ দেয়ার চেয়ে এ দেশে থাকা অবৈধ কর্মীদের বৈধ করে নিয়োগ দেয়ার খরচ কম।
‘এই প্রোগ্রামে সর্বনিম্ন ফি ধরা হয়েছে ১৫০০ রিঙ্গিত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৮ হাজার টাকা। তার সঙ্গে মেডিকেল ও অন্যান্য ফি মিলিয়ে মোট খরচ হবে তিন হাজার রিঙ্গিতের মতো।’
গত বছর এই কর্মসূচির মাধ্যমে মালয়েশিয়া ৭০০ মিলিয়ন রিঙ্গিতের বেশি রাজস্ব আয় রেকর্ড করেছে বলে জানান তিনি।
মালয়েশিয়ায় বর্তমানে কতজন অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে দূতাবাসের একটি সূত্র বলছে, এই সংখ্যা দেড় থেকে দুই লাখের মতো হতে পারে।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের তালিকায় বরাবরই শীর্ষে থাকে বাংলাদেশ। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ ধাপে এই রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৪ লাখেরও বেশি শ্রমিক নিবন্ধন করেন বলে মালয়েশিয়ার সরকার জানায়।
কর্মী বৈধ করার প্রক্রিয়া
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, কালো তালিকাভুক্ত অর্থাৎ ইমিগ্রেশনে অভিযোগ রয়েছে এমন শ্রমিক এবং অপরাধের রেকর্ড রয়েছে এমন অভিবাসী ছাড়া যে কেউ এই লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কর্মীর বয়স ১৮ থেকে ৪৯ বছর হতে হবে।
উৎপাদন, নির্মাণ, খনি ও খনন, নিরাপত্তারক্ষী, সেবা, কৃষি, বাগান এবং গৃহকর্মী- এই আটটি খাতে অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধভাবে নিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর এসব কাজের জন্য ১৫টি ‘সোর্স কান্ট্রির’ কথা উল্লেখ করেছে মালয়েশিয়া, যার অন্যতম বাংলাদেশ।
মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন কিন্তু সঠিক কাগজপত্র নেই এমন বিদেশি কর্মীরা এ কর্মসূচির আওতায় অর্থের বিনিময়ে বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন অথবা দেশে ফেরত যেতে পারবেন। মূলত নিয়োগকর্তারা ‘লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম (আরটিকে) ২.০’-এর মাধ্যমে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন শুরু করেছেন। ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পাওয়ার আগে সংশ্লিষ্টরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে মাত্র এক দিন। তারপর হবে বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যা পরিচালনা করবে ফরেন ওয়ার্কার্স মেডিক্যাল এক্সামিনেশন মনিটরিং এজেন্সি।
পরবর্তী প্রক্রিয়ায় রয়েছে রিক্যালিব্রেশন ফি, ভিসা, অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস, প্রক্রিয়াকরণ ফি এবং শুল্ক প্রদান। সব নথি সম্পূর্ণ হওয়ার পর নিয়োগকর্তারা কাজের অনুমতিপত্র ইস্যু করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে শ্রমশক্তি রপ্তানি গুরুত্ব পাবে
বাজার উন্মুক্ত হলেও সিন্ডিকেটসহ নানা জটিলতায় মালয়েশিয়াতে কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়ায় ধীর গতি চলছে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে এই প্রক্রিয়া কীভাবে গতিশীল করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা সফরের মধ্য দিয়েই মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল বিদেশ সফর করছেন। ৪ ফেব্রুয়ারি তার ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে সর্বোচ্চসংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীর বৈধ করাসহ কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করার বিষয়ে আলোচনা হবে। আমরা কম খরচে বেশিসংখ্যক কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠাতে চাই।’
ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম বলেন, ‘নতুন সরকার এলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এবং এ দেশ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়ে আমাদের নীতি একই। বাংলাদেশি কর্মীরা যাতে আরও সহজে মালয়েশিয়া যেতে পারে এবং তাদের থেকে যাতে দুই দেশই উপকৃত হয় সে বিষয়ে আমরা কাজ করে যাব।’
দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। সে অনুযায়ী, বৃক্ষরোপণ, কৃষি, উৎপাদন, পরিষেবা, খনি, নির্মাণ এবং গৃহস্থালি পরিষেবাসহ সব খাতে ৫ বছরে ৫ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া।
সমঝোতার পর মালয়েশিয়া সরকারের মানবসম্পদমন্ত্রী ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে মাত্র ২৫টি এজেন্সি ও এর সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ১০টি করে এজেন্সি রাখার সিদ্ধান্ত জানান। কিন্তু তাতে রাজি হননি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
তবে মালয়েশিয়ার অনড় অবস্থানের কারণে শেষ অবধি বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের এজেন্সিসহ ২৫টির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত এসব এজেন্সির বাইরে কেউ মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠাতে পারবে না বলে অনড় ছিল মালয়েশিয়া।
এই সিন্ডিকেট নিয়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। আন্দোলনে মাঠে নামে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর একটি বড় অংশ। এর প্রভাবে বায়রা নির্বাচনে বিজয়ী হয় সিন্ডিকেটবিরোধীরা। তবে এরপর শুরু হয় নতুন মেরুকরণ। বর্তমানে ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। তবে বায়রা তার সব সদস্যকে এই সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।
এর আগে বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াটি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করেছে। এ কারণেই দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফরে মালয়েশিয়ায় শ্রমশক্তি রপ্তানির বিষয়টি আলোচনায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন