পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারকে দুই সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়েছে। সোমবার পাকিস্তানের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম ডন জানায়, পিটিআই এই সময়সীমার মধ্যে ইমরান খানের মুক্তি চায়। অন্যথায় বড় ধরনের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
এর আগে ইসলামাবাদের শহরতলী সাংজানিতে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় পিটিআইর নেতারা এই দাবি তুলে ধরেন। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইমরান খানের সামরিক আদালতে বিচার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। দলটির নেতা এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে ইমরান খানকে মুক্তি না দেওয়া হলে আমরা তাকে মুক্ত করতে নিজেরাই এগিয়ে যাব।’
গান্দাপুর আরও বলেন, যদি ইমরান খানকে মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে পিটিআইর ‘মৌখিক সংগ্রাম’ আরেকটি ‘রক্তাক্ত বিপ্লবে’ পরিণত হবে। তিনি জানান, ইমরান খানের আইনজীবীরা ইতিমধ্যে অনেক মামলায় খানের পক্ষে রায় পেয়েছেন এবং এখন তাকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া উচিত। অন্যথায়, পিটিআই কারাগারে গিয়ে ইমরানকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেবে।
ইমরানের মুক্তি ঠেকানোর জন্য সামরিক বাহিনীকেও সতর্ক করেন গান্দাপুর। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীও ইমরান খানের মুক্তি ঠেকাতে পারবে না।’ তিনি দাবি করেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে এবং পরবর্তী জনসভায় ৯ মে’র ঘটনাগুলো নিয়ে আরও বিশদ তথ্য প্রকাশ করা হবে।
এদিকে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইমরান খানকে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে। কারণ, তিনি ৯ মের সহিংসতায় যুক্ত ছিলেন। তবে পিটিআইর নেতারা এই মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন। গান্দাপুরের মতে, ৯ মের ঘটনার পেছনে মূলত ষড়যন্ত্র রয়েছে, যা ইমরান খানের বিরুদ্ধে সাজানো হয়েছে।
আন্দোলন সফল করার জন্য পিটিআই কর্মীদের ‘রক্তাক্ত আত্মত্যাগের’ জন্য প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানিয়ে গান্দাপুর বলেন, “আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য এই ত্যাগের কোনো বিকল্প নেই।”
সরকারের পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রী আত্তা তারার রোববারের বিক্ষোভকে ‘ব্যর্থ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “শোনা গিয়েছিল, লাখো মানুষ বিপ্লব ঘটাবে, কিন্তু তাদের কোথাও দেখা যাচ্ছে না।” তারার আরও দাবি করেন, পিটিআই জনসমাগম প্রমাণের জন্য ভুয়া ছবি ও ভিডিও প্রচার করছে।
ইমরান খানের ‘আটক’ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন: জাতিসংঘ
জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার সংস্থা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ‘স্বৈরাচারীভাবে কারাবন্দি’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। তাকে আটকে রাখাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেও আখ্যা দিয়েছে।
জেনেভা-ভিত্তিক ইউএন ওয়ার্কিং গ্রুপ অন অরবিট্রারি ডিটেনশন গত সোমবার (১ জুলাই) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে কোনো বৈধ অভিযোগ ছিল না এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থেকে তাকে বিরত রাখতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সংস্থাটি বলেছে, ইমরান খানের মুক্তি এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ক্ষতিপূরণের অধিকার দেওয়া উচিত।
সংস্থাটি আরও উল্লেখ করেছে, তাদের তদন্তে উঠে এসেছে, ইমরান খানকে আটক করার পেছনে কোনো বৈধ কারণ ছিল না এবং এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ ছিল। তাদের মতে, ইমরান খান এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিরুদ্ধে বড় ধরনের দমন অভিযান চালানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে পিটিআই নেতাদের গ্রেফতার, নির্যাতন এবং তাদের সমাবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে ‘ব্যাপক জালিয়াতি’ এবং ‘সংসদীয় আসন চুরি’ করার অভিযোগও আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন