যতই সময় যাচ্ছে ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি ততই ভয়ঙ্কর হচ্ছে। পরশুরাম ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া পর ফেনী সদর, ফেনী শহর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলাও পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। বন্ধ হচ্ছে না উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোত ও ভারী বৃষ্টিপাত।
সেনাবাহিনী গতকাল দুপুরের পর থেকে উদ্ধার তৎপরতায় নামলেও রাতে অন্ধকার ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তেমন তৎপরতা চালাতে পারেনি বলে জানা গেছে। এখনাকার বাসিন্দাদের নিকট লোক ও পরিবারের সদস্যরা গতকাল বিকেল থেকে হেলিকপ্টারের সহযোগিতা চেয়ে থাকলে কোন হেলিকপ্টার আসেনি দুর্গত এলাকায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পানি বন্দিদের বর্তমান অবস্থান জানিয়ে পোস্ট দিয়ে প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের করুণ আহ্বান জানাচ্ছে স্বজনরা।
পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার প্রায় ঘরবাড়ি ডুবে গেছি। এসব এলাকার বাজারের পাশে উঁচু বাড়ি-ঘর ছাড়া প্রায় সবই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। একতলা ভবনে ছাদ ও ডুবে গেছে পানিতে।
ফেনী থেকে ফুলগাজী উপজেলায় প্রবেশের কোন সুযোগ নেই সাধারণ মানুষের। ফুলগাজীর প্রবেশমুখ বন্ধুয়া থেকে প্রধান সড়কে কোমড় পানি থাকায় ভেতরের প্রবেশ করার সুযোগ নেই। ফুলগাজীর উপজেলার পরই পরশুরাম উপজেলা। তার পাশেই ছাগলনাইয়া উপজেলা। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা পুরোই বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে আছে। তিনটি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামের মানুষ পুরোপুরি পানিবন্দি।
এই তিন উপজেলায় গতকাল ভোর থেকেই নেই বিদ্যুৎ। কে কোথায় কিভাবে আছে তা জানারও সুযোগ নেই। শহরের কিছু এলাকা ছাড়া পুরো জেলা জুড়ে গতকাল থেকে নেই বিদ্যুৎ।
সিলেট সহ বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে জানা গেছে সেসব জেলার বন্যার পরিস্থিতি।
শেরপুর
শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে শতাধিক প্লাবিত হওয়ায় ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি ও উজানের ঢলের তেজ কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। ঢলের তোড়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, নদীর বাঁধ, সেতু-কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি এলাকার মানুষজনকে উদ্ধার করতে প্রশাসনের নির্দেশে ফায়ার সার্ভিস ও স্কাউট সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে।
শেরপুরে ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে নিখোঁজ হওয়ায় ১৫ ঘণ্টা পর এক কৃষক ও এক রাজমিস্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে পানির তোড়ে ভেসে নিখোঁজ ছিলেন তারা। এছাড়া এছাড়াও বন্যার পানিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে আরও এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জে দ্রুত যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই নদীর তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে বাঁধভাঙা ও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহরের হার্ডপয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি গত ১২ ঘন্টায় ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি ১২ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ ফুলজোড়, ইছামতি, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসগরসহ অন্যান্য নদী ও খাল-বিলের পানি বেড়েই চলেছে। এতে চরাঞ্চল বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ সকল এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমির পাট, তিল, কাউন, বাদাম, শাক-সবজিসহ উঠতি ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা।
নেত্রকোণা
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে নেত্রকোণার কলমাকান্দা, সুসং দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলায় ডুবে গেছে ৩ লাখের বেশি বাড়িঘর। তলিয়ে গেছে নেত্রকোণা-কলমাকান্দা সড়ক, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে আন্ত:উপজেলা সড়ক। নেত্রকোণার ইসলামপুরে পানির তোড়ে রেলব্রিজ ভেঙে ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে কয়েকশ মাছের খামার।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামেও বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। জেলার ৬ উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। পানির তীব্র স্রোতে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ১শ মিটার ভেঙ্গে পড়েছে।
দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এরফলে সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
আপনার মন্তব্য লিখুন