ইসরায়েলকে বোমা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই বোমা গাজায় ব্যবহার করেছে ইহুদিবাদী দেশটি। এতে অনুতপ্ত বাইডেন।
সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “ওই বোমার আঘাতে এবং অন্যভাবে গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন।”
বাইডেন বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়বদ্ধ। তাই তারা আয়রন ডোম রকেট ইন্টারসেপটার দেবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র একটা বিভাজনরেখাও তৈরি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “ইসরায়েল যদি রাফায় আক্রমণ করে, তাহলে আমেরিকা তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেবে না।”
যুক্তরাষ্ট্র এর আগে বারবার ইসরায়েলকে বলেছে, তারা যেন দক্ষিণ গাজার শহর রাফায় আক্রমণ না করে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা রাফায় সামরিক অভিযানের অনুমতি দিয়েছে, যা এখন ১২ লাখ ফিলিস্তিনির আশ্রয়স্থল।
ইসরায়েলি সেনারা রাফার পূর্ব দিকে হামাসের টার্গেটে আঘাত করতে চায়। সেজন্য তারা হাজার হাজার মানুষকে জায়গা খালি করে চলে যেতে বলেছে।
এদিকে, রাফায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে লড়াইয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন বলে স্থানীয় কুয়েত হাসপাতাল জানিয়েছে। মৃতদের মধ্যে শিশুও আছে। ইসরায়েলের বিমান হামলায় তাদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও তারা মারা যায় বলে কুয়েত হাসপাতাল জানিয়েছে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, লড়াই শুরুর পর থেকে ৩৪ হাজার ৮৪৪ জন মারা গেছেন। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য দফতর মৃতের যে সংখ্যা দেয়, তার মধ্যে কতজন বেসামরিক সাধারণ মানুষ ও কতজন সন্ত্রাসী তা আলাদা করা হয় না। এটা বাইরের কোনও সংগঠনের পক্ষে স্বাধীনভাবে যাচাই করাও সম্ভব হয় না। তবে স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, মোট মৃতের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিশু।
হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইসরায়েল-সহ কয়েকটি দেশ।
বার্তাসংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, রাফায় ইসরায়েলি আক্রমণ চলছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। আর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা প্রচুর হামাস সন্ত্রাসীকে মেরেছে।
ইউএনএফপিএ বুধবার জানিয়েছে, রাফার প্রধান মেটারনিটি হাসপাতাল আর নতুন করে কোনও রোগীকে ভর্তি করছে না।
ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ ভাঙা
ওয়াশিংটনে পুলিশ ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের তৈরি করা ব্যারিকেড সরিয়ে দিয়েছে।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ পেপার স্প্রে ব্যবহার করে। ৩৩ জনকে বেআইনিভাবে ঢোকা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের আক্রমণ করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করার পর পুলিশ এই ব্যবস্থা নেয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা প্রথমে কাউকে গ্রেফতার না করে পরিস্থিতি সামলাতে চেয়েছিল। কিন্তু বিক্ষোভকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিক্ষোভও তীব্র হয়। তারপর তারা ব্যবস্থা নিয়েছে।
নেদারল্যান্ডসেও আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডয়েচে ভেলে
হামাসের সঙ্গে চুক্তি ছাড়া জিম্মি উদ্ধার অসম্ভব: ইসরায়েল
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে এই যুদ্ধ ১০৬তম দিনে পৌঁছেছে। দীর্ঘ এই যুদ্ধে ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৬২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
যদিও এই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল- ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করা এবং হামাস যোদ্ধাদের হাতে আটক জিম্মিদের উদ্ধার করা। তবে এ দুটোর কোনওটিই এখনও পর্যন্ত অর্জন করতে পারেনি ইসরায়েল।
এই অবস্থায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর চার জ্যেষ্ঠ কমান্ডার স্বীকার করলেন, হামাসের সঙ্গে চুক্তি ছাড়া গাজায় আটক জিম্মিদের উদ্ধার কোনওভাবেই সম্ভব নয়।
তাদের মতে, হামাসকে নির্মূল করা, আবার একই সঙ্গে জিম্মিদের মুক্ত করা পুরোপুরি ‘অপ্রাসঙ্গিক’।
মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘নিউইয়র্ক টাইমস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা জানান তারা। এই কমান্ডারদের কেউই নিজের পরিচয় প্রকাশ করেননি।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) পরবর্তীতে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কমান্ডারদের এ ধরনের মূল্যায়ন নিয়ে জ্ঞাত নয় এবং তাদের মতামতের সঙ্গে আইডিএফ’র অবস্থানের কোনও মিল নেই।
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই কমান্ডাররা জানিয়েছেন, হামাসের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে তারা অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।
তারা আরও জানিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতাদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের সঙ্গে চুক্তি ছাড়া জিম্মিদের উদ্ধার কোনওভাবেই সম্ভব নয়।
ওই কমান্ডাররা আরও জানান, হামাসের সঙ্গে গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর— যুদ্ধের যে গতি ছিল— সেটি পরবর্তীতে ধরে রাখা যায়নি। তারা ভেবেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে গাজা সিটি, খান ইউনিস এবং রাফাহ ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
এখন পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারলেও, দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে হামাসের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ছে ইসরায়েলি সেনারা। অপরদিকে রাফাহতে তারা এখনও কোনও ধরনের অভিযান শুরুই করতে পারেনি।
এছাড়া হামাসের গোপন সুড়ঙ্গ নিয়েও কথা বলেছেন এই কমান্ডাররা। তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরুর আগে তারা ভেবেছিলেন গাজায় হামাসের ১০০ মাইল সুড়ঙ্গ রয়েছে। কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারছেন ছোট্ট এ উপত্যকায় ৪৫০ মাইলেরও বেশি সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে হামাস। আর সুড়ঙ্গগুলো এতটাই জটিল যে, যদি সেখানে কোনও জিম্মিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয় তাহলে তাদের জীবিত উদ্ধারের কোনও নিশ্চয়তা নেই।
সূত্র: জেরুজালেম পোস্ট, টাইমস অব ইসরায়েল
আপনার মন্তব্য লিখুন