ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সেই ঘটনাবলি নিয়ে শেখ হাসিনা জনগণের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। গত ৭ আগস্ট দিল্লি থেকে প্রচারিত এই খোলা চিঠিতে তিনি স্পষ্ট করেই তার পদত্যাগের কারণ উল্লেখ করেছেন। খোলা চিঠিটি ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
চিঠিটি নিম্নরূপ:
আমি পদত্যাগ করেছি, শুধুমাত্র লাশের মিছিল যেন আর না দেখতে হয়
তোমাদের (ছাত্রদের) লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল ওরা,
আমি তা হতে দিইনি, ক্ষমতা দিয়ে এসেছি, ক্ষমতায় আমি থাকতে পারতাম যদি ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপ’ আর ‘বঙ্গোপসাগর’ আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিতাম। অনুরোধ রইল তোমরা ব্যবহৃত হয়োনা। আমি বলে এসেছি আমার সোনার সন্তানদের যারা লাশ করে ঘরে ফিরিয়েছে তাদের যেন বিচার করা হয়।
হয়তো আজ আমি দেশে থাকলে আরও প্রাণ ঝরত, আরও সম্পদ ধ্বংস হত। আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি, তোমাদের জয় দিয়ে এসেছি, তোমরা ছিলে আমার শক্তি, তোমরা আমাকে চাওনি, আমি নিজেই তখন চলে এসেছি, পদত্যাগ করেছি।
আমার কর্মী যারা আছেন, কেউ মনোবল হারাবেন না। আওয়ামী লীগ বার বার উঠে দাঁড়িয়েছে।
আপনারাই দাঁড়া করিয়েছেন। আশাহত হবেন না। আমি শিগগিরই ফিরব। ইনশাআল্লাহ।
পরাজয় আমার হয়েছে কিন্তু জয়টা আমার বাংলাদেশের মানুষের হয়েছে।
যে মানুষের জন্য আমার বাবা, আমাদের পরিবার জীবন দিয়েছে। খবর পেয়েছি ইতোমধ্যে অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা ও বাড়িঘরে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আল্লাহ অবশ্যই আপনাদের সহায় হবেন।
আমি আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবারও বলতে চাই, আমি কখনওই তোমাদের রাজাকার বলিনি। আমার কথাটা বিকৃত করা হয়েছে। ওইদিনের সম্পূর্ণ ভিডিও তোমাদের দেখার অনুরোধ রইল। তোমাদের বিপদগ্রস্ত করে একদল তার সুবিধা নিয়েছে। তোমরা ঠিকই তা একদিন অনুধাবন করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
ভালো থেকো আমার দেশের মানুষ,
ভালো রেখো আমার সোনার বাংলাকে,
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু,
শেখ হাসিনা
(বুধবার ০৭.০৮.২০২৪, নয়াদিল্লি, ভারত)
আমাকে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতাচ্যুত করার কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র জোরদার করা হচ্ছে। ২০১৪ এর নির্বাচনের আগে চক্রান্ত করেছে, ১৮’র নির্বাচনের আগে করেছে। আবার এখন নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে, তখন আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।
বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনির্বাচিত বোর্ড সদস্যরা। তখন শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। খবর বাসসের
তিনি বলেন, দুর্যোগ চতুর্দিক দিয়ে আসবে এবং আসছে। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপরদিকে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ। তাই এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি ফেলে রাখা যাবে না। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই করে রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক দুর্যোগও যেমন আসবে, পাশাপাশি যেখানে রাসেলকে (১০ বছরের ছোট্ট) পর্যন্ত খুন করল, আর সেই পরিবার থেকে বেঁচে এসে সরকারে আসলাম, সাফল্য এনে দিলাম, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিলাম, এটা অনেকেই পছন্দ করবে না। কাজেই তারা তৎপর আছে সারাক্ষণই। আমি জানি তাদের তৎপরতা অনেক বেশি। তাদের খবরও আমি রাখি, আমার তো অচেনা কেউ নাই। তারা তাদের চক্রান্ত করেই যাচ্ছে।
তিনি করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনকে কেন্দ্র করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃচ্ছতা সাধনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, এই স্যাংশনের ফলেই প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে এবং আমি জানি না কারা লাভবান হচ্ছে এই যুদ্ধে। লাভবান হচ্ছে অস্ত্র প্রস্তুত ও সরবরাহকারীরা। আর মরছে সাধারণ মানুষ, ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে সাধারণের আজকে কী মানবেতর জীবন। সেটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে কার কী লাভ হবে জানি না, তবে বাংলাদেশের মানুষের তো ক্ষতিই হবে। কারণ আমরা তো একেকটা জিনিস টার্গেট করে কাজ করছি। যেমন বলেছি, একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। জাতির পিতা যে পদক্ষেপ শুরু করেছিলেন নোয়াখালি থেকে। আমি সেই দায়িত্বটা পালন করে যাচ্ছি। এখন আরও ৫৬ হাজার ঘর তৈরি হচ্ছে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য। তাহলে এখানে আর কোনো ভূমিহীন থাকবে না।
দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন খুঁজে বের করায় সরকারের পাশাপাশি তিনি তাঁর দলের নেতাকর্মীদেরও দায়িত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, তারপরেও আমি আলাদা ভাবে খবর নিচ্ছি। রংপুর সহ বিভিন্ন বিভাগে আমাদের কৃষক লীগ এবং আওয়ামী লীগের যে নেতা-কর্মী রয়েছে তাদেরকে বলেছি- কোথায়কে ভূমিহীন-গৃহহীণ রয়েছে তাদের খোঁজ করে তালিকা করতে হবে। এক একটা এলাকা ধরে আমাকে তালিকা দিতে বলেছি যাতে কেউ বাদ না যায়। আমরা তাদের ঘর করে দেয়ার পাশাপাশি জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেব। কেননা বাংলাদেশে একটা মানুষও আর ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না।
সরকারপ্রধান বলেন, কেবল আমরাই নয় এখন ইউরোপের দেশগুলো থেকে শুরু করে আমেরিকা পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় করছে। কাজেই আমরা আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছি ভবিষ্যতে যেন বিপদে না পড়তে হয়। এছাড়া এক কোটি মানুষকে আমরা স্বল্পমূল্যে খাবার দিচ্ছি। কোনো মানুষ যাতে কষ্টে না থাকে, সেটাই আমাদের চেষ্টা।
শেখ হাসিনা দুর্যোগকালে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে মানবতার সেবায় সম্পৃক্ত করার উদাত্ত্ব আহ্বান জানান।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে ভাইস চেয়ারম্যান নূরুর রহমান, ট্রেজারার এমএ সালাম, মহাসচিব কাজী সফিকুল আজম, আরমা দত্ত এমপি, এম মঞ্জুরুল ইসলামসহ অন্য বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মন্তব্য লিখুন