ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ রেজিমের বিরুদ্ধে চব্বিশের ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক সংগ্রামকে ‘জুলাই বিপ্লব’ আখ্যা দিয়ে সরকার ঘোষিত জুলাই অভ্যুত্থানের কর্মসূচি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। একই সঙ্গে সংগঠনটি পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ১৪ জুলাই ‘বিপ্লব দিবস’ ও ৫ আগস্ট ‘বিজয় দিবস’ পালন করবে বলেও ঘোষণা দেয়।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের অন্যতম প্রধান গৌরবময় অধ্যায় জুলাই বিপ্লব। এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা, তার আগের ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা সেই সময়ের প্রজন্মগুলোর কাছে যে গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে আমাদের প্রজন্মের কাছে চব্বিশের জুলাই বিপ্লব তেমন গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। কারণ এ বিপ্লবের রক্তাক্ত লড়াইয়ের বীরত্ব ও তাবেদার ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার সাফল্য আমাদের রাজনৈতিক কর্তা সত্ত্বায় পরিণত করেছে। এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তনের ম্যান্ডেট তথা এখতিয়ার, অধিকার ও সুযোগ আমাদের অপরিহার্য হকে পরিণত হয়েছে।
আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, শব্দ শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, শব্দ রাজনীতিরও হাতিয়ার। একটি ঘটনাকে কী নামে ডাকা হবে, তার ওপর নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ গতিপথ ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন। যেমন জুলাইকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ শব্দ দিয়ে আখ্যায়িত করে একে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা রেজিমের বিরুদ্ধে জুলাইয়ের গণঅসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ বোঝানো হয়েছে। এর মাধ্যমে হাসিনা রেজিমের পতনে আমাদের যে সাফল্য তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা একটি প্রজন্ম যে দীর্ঘ ১৬ বছরের প্রতাপশালী ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে পুরোপুরি পরাজিত করে ৫ আগস্ট বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ও রাজনীতিকে নিজেদের বাসনা অনুযায়ী গড়ে তোলার ম্যান্ডেট অর্জন করেছি তা গণঅভ্যুত্থান নামক শব্দে স্বীকৃত হয় না।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মকে রাষ্ট্র পুনর্গঠন তথা নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে বঞ্চিত করতেই জুলাই বিপ্লবকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ বলছে। তারা নিজেদের পছন্দের পুরনো ফ্যাসিবাদী সংবিধান ও রাজনৈতিক কাঠামোয় ফিরে যাওয়ার পথ সুগম করতে চায়। এজন্য গত দশমাস ধরে তারা সংবিধান সংশোধন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর করাসহ লোক দেখানো কিছু সংস্কার করে জাতীয় ঐকমত্যের নামে আঁতাত-সমঝোতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ তৎপরতা মূলত আমাদের তরুণ প্রজন্মের মহান অর্জন জুলাই বিপ্লবকে বেহাত করার ফন্দি।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আরও বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলছি জুলাই বিপ্লবকে গণঅভ্যুত্থান নাম দিয়ে এবং বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষাকে সংস্কারের মুলা দেখিয়ে আমাদের থেকে ছিনতাই করা যাবে না। আমাদের নিজেদের অনভিজ্ঞতা, বিভক্তি, সংগঠিত হতে না পারার দুর্বলতা সত্ত্বেও জুলাই বিপ্লব আমাদের মাঝে আছে ও থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে বড় দানব শেখ হাসিনাকে হটিয়ে দিয়েছি। তার বন্দুক থামিয়ে দিয়েছি। এখন আমাদের সামনে বাধা হলো পুরনো ফ্যাসিস্ট সংবিধান, পুরনো শাসন কাঠামো ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা। বিগত ১৬ বছর হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন জারি রাখতে এসব কিছু নিয়োজিত থাকায় জুলাই বিপ্লব শতভাগ বাস্তবায়নের স্তরে এসব উপড়ে ফেলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ তৈরি হওয়ার আগে জুলাই বিপ্লব জারি থাকুক এটিই আমাদের প্রজন্মের চাওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ঘোষিত গণঅভ্যুত্থান বার্ষিকী পালনকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জুলাই বিপ্লব উদযাপনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
কর্মসূচিগুলো হলো: ১৪ জুলাই বিপ্লব দিবস, ১৫ জুলাই নারী প্রতিরোধ দিবস, ১৬ জুলাই শহীদ দিবস, ১৮ জুলাই গণপ্রতিরোধ দিবস, ১৯ জুলাই প্রবাসী সংহতি দিবস, ৩ আগস্ট জুলাই বিপ্লব ইশতেহার দিবস এবং ৫ আগস্ট বিজয় দিবস।
সংবাদ সম্মেলেনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ফজলুর রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব জিহাদী ইহসান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক বোরহান উদ্দীন, ঢাবি শাখার সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লা,মাদ্রাসা-ই-আলিয়া শাখার আহ্বায়ক রাকিব মণ্ডল, সদস্য সচিব মো: জিনাত হোসেন, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব শরিফ খান, আশ-শাফীউল, আহমেদ নাফিস, রকিবুল ইসলাম, ঈসা মাহমুদ, তামিম খন্দকার, তাসনিম হাসান প্রমুখ।