পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারত-পাকিস্তানের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ শুরু
পাকিস্তানের এনএসএ ও আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিক এবং ভারতের এনএসএ অজিত ডোভাল একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই আলোচনার লক্ষ্য ছিল উত্তেজনা হ্রাস করা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। যদিও আলোচনা নিয়ে বিস্তারিত…
পাকিস্তানের পালটা হামলার আশঙ্কায় সতর্ক ভারতের একাধিক রাজ্য
পাকিস্তানের পালটা হামলার ভয়ে ভারতের একাধিক রাজ্যকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠক করেন। এতে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীরা এবং সিকিম সরকারের একজন প্রতিনিধি অংশ নেন।
ভারতকে পাল্টা জবাব দিতে সশস্ত্র বাহিনীকে পাকিস্তানের অনুুমতি
ভারতকে পাল্টা জবাব দিতে সশস্ত্র বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছে পাকিস্তান। বুধবার পাকিস্তানি গণমাধ্যম জিও নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে পাঞ্জাব এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান ও ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এগুলোকে ‘উস্কানিমূলক যুদ্ধ কর্মকাণ্ড’ এবং ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ার সম্পূর্ণ দায়ভার ভারতের ওপর বর্তায়।
ভারতের হামলা, পাকিস্তানের পাশে থাকার ঘোষণা তুরস্কের
পাকিস্তানে মঙ্গলবার গভীর রাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। ওই হামলার পর পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক। পাকিস্তানের পূর্ণ সংহতি জানিয়েছে ন্যাটোভুক্ত শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রটি
‘সাদা পতাকা উত্তোলন করেছে ভারত’
পাকিস্তানের তীব্র হামলার মুখে নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছে ভারত সাদা পতাকা উত্তোলন করেছে। বুধবার পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এ দাবি করেছেন।
ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ও ১টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের
পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর সময় ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরে (আইএসপিআর) মহাপরিচালক ও সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে এই তথ্য দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ছয়টি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কোটলি, বাহাওয়ালপুর, মুজাফ্ফরাবাদ, বাঘ এবং মুরিদকে। এর আগে তারা পাঁচটি স্থান আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করছিলেন।
অবশ্য ভারত সরকার বলছে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের ৯টি সন্ত্রাসী স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তারা। কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়নি। যদিও পাকিস্তানের আইএসপিআর বলছে, আক্রান্ত স্থাপনার মধ্যে একটি মসজিদ রয়েছে।
বুধবার (৭ মে) ভোরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আহমেদ শরিফ জানান, হামলায় আটজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৩ জন।
তিনি বলেন, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী একটি জবাবদিহিমূলক ও সমন্বিত পাল্টা হামলা পরিচালনা করেছে।
নিরাপত্তা সূ্ত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, পাকিস্তান আত্মরক্ষায় পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এসব বিমান পাকিস্তানি ভূখণ্ডে হামলার সময় ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহার করছিল বলে দাবি করা হয়েছে।
ভূপাতিত বিমানগুলোর মধ্যে তিনটি রাফায়েল জেট, একটি মিগ-২৯ ও একটি সু-৩০। এ ছাড়া একটি ভারতীয় হেরন ড্রোনও গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী।
আহমেদ শরিফ বলেছেন, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বেশ কয়েকটি ভারতীয় পোস্ট ধ্বংস করা হয়েছে। নিরাপত্তা সূত্র বলছে, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী এখন ‘চূড়ান্ত ও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া’ দিচ্ছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, ভারতের ১২তম ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার, যা ১৫ কোরের অধীনে নবম ডিভিশনের অংশ, সেটি পাকিস্তানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
এ ছাড়া দুধনিয়াল সেক্টরে এক শত্রু পোস্ট ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের আইএসপিআর।
পাকিস্তানের দাবি, তারা শুধু নিজস্ব সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করছে এবং এই আগ্রাসন সম্পূর্ণভাবে ভারতের উস্কানিমূলক পদক্ষেপের ফল।
আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী আনোয়ারুল হক ভারতের রাতের আক্রমণকে ‘কাপুরুষোচিত এবং অতীতের ধারার পুনরাবৃত্তি’ বলে বর্ণনা করে এর নিন্দা জানান। তিনি বলেন,
“ভারত তার পুরোনো কৌশল অনুযায়ী রাতে আজাদ কাশ্মীরের কোটলি ও মুজাফ্ফরাবাদে হামলা চালিয়েছে।”
ভারত কোথায় হামলা চালিয়েছে?
নয়াদিল্লি জানিয়েছে, বুধবার (৭ মে) গভীর রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
ভারতের দাবি, যেসব স্থানে ও স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে সেগুলো ‘সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো’। এসব স্থান থেকে ভারতে হামলার পরিকল্পনা করা হতো এবং সেই অনুযায়ী হামলা পরিচালনা করা হতো।
ভারত সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তানের কোনো সামরিক স্থাপনায় আঘাত করা হয়নি এবং এই হামলা ‘সংযত, সুনির্দিষ্ট ও উত্তেজনাবিহীন’ ছিল।
পাকিস্তান বলছে, পাঁচটি স্থানে হামলা হয়েছে- যার মধ্যে রয়েছে মুজাফফরাবাদ, কোটলি (পাক-অধিকৃত কাশ্মীর), ভাওয়ালপুর (পাকিস্তানের পাঞ্জাব)। অন্য দুটি স্থানের নাম জানায়নি তারা।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের দাবি, এই হামলা বেসামরিক এলাকায় হয়েছে। ভারত যে দাবি করছে, সেটি ভুয়া।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ও আইএসপিআরের মহাপরিচালক আহমেদ শরিফ বিবিসিকে বলেছেন, হামলায় আটজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে।
ভারত কেন হামলা চালাল?
এই হামলার পেছনে কারণ ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহালগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলা, যেখানে ২৬ জন (২৫ ভারতীয় ও একজন নেপালি) নিহত হন। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানান, হামলাকারীরা হিন্দু পুরুষদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল। এই হামলা ছিল গত দুই দশকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, তারা অপরাধীদের ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাড়া করবে’ এবং এমন ‘শাস্তি দেবে যা কল্পনারও বাইরে”।
যদিও ভারত এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করেনি। ভারতের পুলিশের দাবি, হামলাকারীদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি। দিল্লি অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান জঙ্গিদের সমর্থন করছে, যা ইসলামাবাদ অস্বীকার করেছে।
এই দুই সপ্তাহে দুই দেশ কূটনৈতিক বহিষ্কার, ভিসা স্থগিত ও সীমান্ত বন্ধসহ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে।
কাশ্মীর কেন উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু?
কাশ্মীর অঞ্চলকে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই সম্পূর্ণ তাদের বলে দাবি করে, তবে উভয়েরই আংশিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর দেশভাগের সময় থেকেই এ নিয়ে দুই দেশ দুটি যুদ্ধ করেছে।
সম্প্রতি জঙ্গি হামলাগুলো অঞ্চলটিকে বারবার দ্বন্দ্বের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে।
২০১৯ সালে ভারত আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল করে কাশ্মীরের আংশিক স্বায়ত্তশাসন তুলে দেয়। তার পর কিছু সময় বিক্ষোভ ও উত্তেজনা থাকলেও অঞ্চলটিতে সন্ত্রাসবাদ কমে আসে এবং পর্যটন বাড়ে।
২০১৬ সালে উরি হামলায় ১৯ ভারতীয় সৈন্য নিহত হলে ভারত ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালায়।
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ সদস্য নিহত হলে ভারত বালাকোটে বিমান হামলা চালায়, যা ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের প্রথম সামরিক অভিযান।