রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময় বাড়ছে না। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ, নিবন্ধনের জন্য আবেদনের কোনো সময়সীমা নেই। একটি নতুন দল গঠনের পর তারা বছরের যে কোনো সময় নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করতে পারে।
সেই তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধনের সব প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। ইতোমধ্যে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কমিশন, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২০ এপ্রিল। গতকাল বুধবার পর্যন্ত তিনটি নতুল দল আবেদন করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোটার ও দল নিবন্ধন দুটির মধ্যে সামঞ্জস্য রয়েছে। বছর বছর হালনাগাদ কর্মসূচি ছাড়াও ১৮ বছরে পদার্পণ করলে দেশের একজন নাগরিক যে কোনো সময় ভোটার তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য আবেদন করতে পারেন। দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়াও হুবহু একই। তাই বিজ্ঞপ্তি ছাড়া কোনো নতুন দল আবেদন জানাতে পারবে নাÑ এমন কোনো রীতি নেই। একইসঙ্গে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। ফলে আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা বাড়তে পারে।
এদিকে আগামী রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)।
সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস আইনের ত্রুটি সংশোধনের তাগিদ দিয়ে পুনরায় চিঠি দিয়েছে কমিশন। মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে বিলটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন হতে পারে। কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আমার দেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ইসি সূত্র জানায়, দল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে একটি কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস, সেটি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, অন্যূন এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় (কার্যকর), অর্থাৎ ২২ জেলা অফিস এবং অন্যূন ১০০টি উপজেলায় বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় অফিস প্রতিষ্ঠা, যেগুলোতে সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটারের তালিকাভুক্তি থাকতে হবে। সংস্কার কমিশন শর্ত শিথিল করার জন্য সুপারিশে প্রশাসনিক এক-দশমাংশ, অর্থাৎ ৬ জেলা এবং পাঁচ শতাংশ উপজেলা, অর্থাৎ ৩০টিতে কমিটি এবং সব মিলিয়ে ৫ হাজার ভোটারের স্বাক্ষর সংবলিত সুপারিশ থাকলে নিবন্ধনের জন্য আবেদন জানাতে পারবে। শর্ত শিথিল হওয়ায় নতুন দলের সংখ্যা বাড়বে বলে ইসির আশা।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নিবন্ধনের জন্য তিনটি দল আবেদন করেছে। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে ২০ এপ্রিলের পর সময় বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নিবন্ধন বিধিমালায় আগ্রহী নতুন দলের জন্য সময় সময় বিজ্ঞপ্তি জারির কথা বলা আছে। ডিসেম্বরকে সম্ভাব্য নির্বাচনের সময় বিবেচনায় রেখে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বিদ্যমান নিবন্ধন অনুযায়ী একটি আবেদন নিষ্পত্তি করতে সর্বোচ্চ ছয় মাস সময় লাগে।
জুলাইয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবে ইসি
আগামী ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রকাশের কথা জানিয়েছেন ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। গতকাল ইসি ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। একইসঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া আগামী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করে নতুন দলগুলোকে নিয়ে মতবিনিময় করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করা হবে। তবে সেটিকে সংলাপ নয়, মতবিনিময় বলা হচ্ছে।
সংস্কার প্রস্তাবে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মত পাঠাবে ইসি
বর্তমান যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অনেক পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি বলা হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে কমিশন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করেছি। ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে পুলিশ সুপার, নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তো এক কথায় বলেছেন যে, রমজান মাসে আমাদের যে পারফরম্যান্স, এটি আমরা আরো উন্নত করার চেষ্টা করছি এবং এটি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আমরা নির্বাচন করতে কোনো বাধা আছে মনে করি না।
চিহ্নিত অনেক সন্ত্রাসী আছে যারা জামিনে বাইরে আছে, তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না জানতে চাইলে ইসি আনোয়ারুল বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্নে যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার, তা সবই নেব।