অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন উপদেষ্টাদের শপথ পড়ান। প্রথমে শপথ পাঠ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শপথ পাঠের পর গোপনীয়তা রক্ষার শপথ পড়েন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারে অন্য উপদেষ্টারা হলেন-
১. সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ
২. লেখক, রাজনীতি-বিশ্লেষক, কলামিস্ট অধ্যাপক আসিফ নজরুল
৩. মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান
৪. সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ
৫. সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন
৬. বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
৭. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম
৮. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
৯. সাবেক নির্বাচন কমিশনার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন
১০. সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা
১১. বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা -উবিনীগ-এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার
১২. হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর আ ফ ম খালিদ হোসেন
১৩. গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম
১৪. চিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায়।
১৫. নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর শারমিন মুরশিদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন মুরশিদ
১৬. অপারেশন জ্যাকপটে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ইরান, আর্জেন্টিনা, ফিলিস্তিন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেদারল্যান্ডসসহ আরও কিছু দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, খাইরুল কবীর খোকন, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, তাবিথ আউয়াল ও মিজানুর রহমান মিনু।
বামপন্থি দলের নেতাদের মধ্যে আছেন মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম, রুহিন হোসেন প্রিন্স ও জোনায়েদ সাকি।
এ ছাড়াও আছেন কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, মাহমুদুর রহমান মান্না ও নূরুল হক নূর।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানও আছেন। তবে আওয়ামী লীগের কাউকে দেখা যায়নি।
অনুষ্ঠানে প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের সচিবও উপস্থিত ছিলেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে তিনি ভারতে চলে যান। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বসে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে সেনাবাহিনী। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বাসভবন বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রধান উপদেষ্টা পদে ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেন। তিনি এতে সায় দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশে ফেরেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হচ্ছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রপতির প্রেসউইং।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে রাজি ড. ইউনূস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের গভীর রাতের ঘোষণার পর আজ মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হতে রাজি হয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার কার্যালয় ইউনূস সেন্টার সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ডয়চে ভেলেকে ড. ইউনূসের একজন মুখপাত্র জানান, শিক্ষার্থীদের অনুরোধ রাখতে সম্মতি জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
এর আগে, সোমবার গভীর রাতে এক ভিডিও বার্তায় ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ইউনূসকে চান তারা। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের সঙ্গে ইতোমধ্যে আমাদের কথা হয়েছে এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি সম্মত হয়েছেন।’
এদিকে, অধ্যাপক ইউনূস প্যারিসে ‘মাইনর ট্রিটমেন্ট’ শেষে দ্রুতই দেশে ফিরে আসবেন বলেও জানিয়েছেন তার মুখপাত্র।
বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের স্বাধীন মনে করছে আজ : ড. ইউনূস
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা ইস্তফা দেওয়ার পর বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, দেশজুড়ে মানুষ উদ্যাপন করছে। তারা যেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের সঙ্গে সোমবার (০৫ আগস্ট) এক আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন ড. ইউনূস। এর কিছুক্ষণ আগেই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা।
দ্য প্রিন্টকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) যত দিন ক্ষমতায় ছিলেন, তত দিন আমাদের দেশ দখলকৃত ছিল। তিনি দখলদার শক্তি, একজন স্বৈরশাসক, জেনারেলের মতো আচরণ করছিলেন, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। আজ বাংলাদেশের সব মানুষ নিজেদের স্বাধীন মনে করছে।’
এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য দ্বিতীয় স্বাধীনতার মতো মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা এখন নতুন করে শুরু করতে চাই এবং আমাদের জন্য একটি সুন্দর দেশ গড়ে তুলতে চাই। এই প্রতিশ্রুতিই আমরা দিতে চাই। আমাদের ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবেন শিক্ষার্থী ও তরুণেরা।’
আলাপচারিতায় সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত থাকার কথা উড়িয়ে দেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার মতো মানুষ আমি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আরও স্বাধীন পরিবেশে আমার কাজ চালিয়ে যেতে চাই, যা শেখ হাসিনার শাসনের সময় আমি পাইনি। কারণ, তিনি সব সময় আমাকে আক্রমণ করতেন। আগে যেসব কাজ করতে পারিনি, এখন সেই কাজে নিজেকে নিয়োজিত করব।’