অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ক্রিমিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণে অনেক মানুষ হতাহত হওয়ার পর আমেরিকাকে সরাসরি দায়ী করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের জন্য এমন সামরিক মদতের কঠিন পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছে মস্কো।
ইউক্রেনের উপর হামলার শুরু থেকেই রাশিয়া বারবার ‘রেড লাইন’ স্থির করে দিয়েছে। ফলে ইউক্রেনকে মদতের বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্ব প্রাথমিক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে কিছুটা দেরিতে হলেও একের পর এক অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। কোনওবারই রাশিয়া তার হুমকি কার্যকর করেনি। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে হামলার ছাড়পত্রও সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি। এবার অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে সেভাস্টোপলের উপর ইউক্রেনের হামলার পর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে হুঁশিয়ারি দিল প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন। মস্কোয় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এমন পদক্ষেপের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
মস্কোর সূত্র অনুযায়ী, রবিবার মার্কিন এটিএসিএমএস মিসাইল ব্যবহার করে ক্রিমিয়ায় হামলার জের ধরে কমপক্ষে চারজন নিরীহ মানুষ নিহত ও ১৫১ জন আহত হয়েছে। তবে সেই হামলাকে ঘিরে অনেক অস্পষ্টতা রয়েছে। রাশিয়া সেই হামলা প্রতিহত করতে গেলে সৈকতের উপর মিসাইল ভেঙে পড়ে বলে কিছু সূত্র দাবি করে। উল্লেখ্য, কাছেই রাশিয়ার একাধিক সামরিক স্থাপনা রয়েছে। খোদ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রলায়ের সূত্র অনুযায়ী রাশিয়া ইউক্রেন থেকে পাঁচটি এটিএসিএমএস মিসাইলের মধ্যে চারটি ধ্বংস করা হয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ইউক্রেনকে মদতের জন্য আমেরিকা ও ইউরোপের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং রাশিয়ার শিশুদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন ট্রেসি-কে তলব করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘হাইব্রিড’ যুদ্ধ চালানোর অভিযোগ করেছে। মস্কোর অভিযোগ, শুধু মিসাইল সরবরাহ নয়, লক্ষ্যবস্তু স্থির করার ক্ষেত্রেও ইউক্রেনকে সরাসরি মদত দিচ্ছে আমেরিকা। রাশিয়া সেই পদক্ষেপের উচিত জবাব দেবে বলে জানিয়েছে।
ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, মার্কিন প্রশাসন যেকোনও নিরীহ মানুষের প্রাণহানি সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করে। সার্বভৌমত্ব রক্ষার খাতিরেই ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি স্পষ্ট করে দেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, ক্রিমিয়াও ইউক্রেনের স্বীকৃত ভূখণ্ড। পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর চার্লি ডিৎস বলেন, লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে ইউক্রেন নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয় এবং স্বাধীনভাবে নিজস্ব সামরিক অভিযান পরিচালনা করে।
ইউক্রেন তথা পশ্চিমা বিশ্বের উপর চাপ বাড়াতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আগেই ‘ট্যাকটিকাল’ পরমাণু অস্ত্রের মহড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি আমেরিকা ও সহযোগী দেশগুলোর ভূখণ্ডের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনেরও প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন তিনি। ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক সহায়তার জবাবে উত্তর কোরিয়াকেও অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন পুতিন।
সূত্র: রয়টার্স, ডয়েচে ভেলে
পশ্চিমাদের ‘চোর’ বললেন পুতিন, শাস্তির হুঁশিয়ারি
পশ্চিমা নেতাদের চোর আখ্যায়িত করে তাদের শাস্তির হুঁশিয়ারি দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
জি-৭ সম্মেলনে ইউক্রেনকে পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তিনি এই হুঁশিয়ারি দিলেন।
শুক্রবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সাথে এক বৈঠকে পুতিন বলেছেন, পশ্চিমের নেতারা রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করে নতুন একটি আইনি ভিত্তি তৈরির চেষ্টা করছেন, কিন্তু আমি মনে করি এটা স্পষ্ট ‘চুরি’। পশ্চিমা নেতাদের ওই সিদ্ধান্তের জন্য তাদের শাস্তি পেতে হবে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদের মুনাফা থেকে ইউক্রেনকে পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭। কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এবারের সম্মেলনে যোগ দিয়েছে আফ্রিকা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নেতারা। জি-৭ এর এবারের সম্মেলনটি বৃহস্পতিবার ইতালির আপুলিয়ায় শুরু হয়ে শনিবার পর্যন্ত চলার কথা। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদকে একটি ‘উল্লেখযোগ্য ফলাফল’ বলে মন্তব্য করেছেন। পুতিনকে উদ্দেশ্য করে বাইডেন বলেছেন, “আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না।”
জি-৭ এ পাস হওয়া ইউক্রেনের ওই সহায়তা প্যাকেজটি আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া চলতি বছরের শেষদিকে এই সহায়তা ইউক্রেনে পৌঁছাতে পারে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
সূত্র: রয়টার্স, সিজিটিএন
বেলারুশ দখল করে নিবেন? জবাবে যা বললেন পুতিন
সোমবার বেলারুশ সফরে যান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
এ সময় রাশিয়ার দখলদারিত্ব নিয়ে সমালোচকদের কাছ থেকে নানা গুজব শুনতে পাওয়ার কথা তুলে ধরে একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে পুতিনকে প্রশ্ন করেন।
জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “বেলারুশ দখলে রাশিয়ার ‘কোনও আগ্রহ নেই’।
পুতিন বলেন, “রাশিয়ার কাউকে দখল করে নেওয়ার কোনও আগ্রহ নেই, এর কোনও মানে হয় না।”
মস্কোর প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ সস্তা তেল ও ঋণের জন্য রাশিয়ার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।
রয়টার্স বলছে, বছরের পর বছর ধরে বেলারুশের সঙ্গে একীভূতকরণকে আরও গভীর করার চেষ্টা করেছে ক্রেমলিন। কিন্তু দেশটির শক্তিশালী নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো রাশিয়ার প্রধান মিত্র হওয়া সত্ত্বেও মস্কোর সঙ্গে সম্পূর্ণ একীকরণকে প্রতিরোধ করে আসছেন।
এদিকে ‘অভিন্ন ইতিহাস এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের মাধ্যমে একত্রিত ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং কৌশলগত অংশীদারদের মধ্যে সম্পর্ককে স্বাগত জানিয়েছেন পুতিন’। তিনি বলেছেন, “বন্ধুত্বহীন দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞাগুলোকে আমরা একসঙ্গে মোকাবিলা করছি এবং আমরা এটি বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে ও কার্যকরভাবেই করি।”
রাশিয়া ও বেলারুশ ‘সকল ক্ষেত্রে’ সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে বলেও রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন। এর মধ্যে সামরিক খাতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া দুই দেশ ‘উভয় দেশের নিরাপত্তার জন্য যৌথ ব্যবস্থা’, অবিরত যৌথ প্রশিক্ষণ এবং ‘পারস্পরিক অস্ত্র সরবরাহ’ করার বিষয়েও সম্মত হয়েছে।
পুতিন বলেছেন, রাশিয়া বেলারুশিয়ান ক্রুদের এমন বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দেবে যা পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে।
অন্যদিকে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেছেন, “আমরা সেই বিমানগুলো পরীক্ষা করেছি এবং এটি কারও জন্য হুমকি নয়।”
বেলারুশিয়ান নেতা রাশিয়ার সাথে তার দেশের সম্পর্কেরও প্রশংসা করেছেন। লুকাশেঙ্কো বলেন, “রাশিয়া আমাদের ছাড়া কোথাও যেতে পারবে না, আমরাও রাশিয়া ছাড়া কিছুই করতে পারব না।”
এসময় তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, “আমরা কি রাশিয়াকে ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সক্ষম? না!”
আপনার মন্তব্য লিখুন