মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় রক্তপাত দ্রুত বন্ধ না হলে চলমান এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্য তথা পশ্চিম এশিয়ার বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বুধবার ক্রেমলিনে রাশিয়ার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে পুতিন এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, গাজার নিরীহ নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা ইসরাইলি হামলার শিকার হচ্ছে- এটি তেল আবিবের ভুল পদক্ষেপ।
রুশ নেতা বলেন, তিনি ফোন কলে বিশ্বের অন্য নেতাদের বলেছেন, রক্তপাত বন্ধ না হলে আরো বিস্তৃত পরিসরে যুদ্ধের দাবানল ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
পুতিন বলেন, “আজকে আমাদের প্রধান কাজ রক্তপাত ও সহিংসতা বন্ধ করা।”
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ না করলে সংকট আরো গুরুতরভাবে ছড়িয়ে পড়বে যার পরিণতি হবে বিপজ্জনক ও ধ্বংসাত্মক। শুধুমাত্র তা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের জন্য নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের সীমানার বাইরে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কিছু পশ্চিমা শক্তির নিন্দা করে বলেন, তারা আরো উত্তেজনা সৃষ্টি করতে এবং যতটা সম্ভব অন্যান্য দেশ ও জাতিকে সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে চাইছে। এ উদ্দেশ্যে তারা লাখ লাখ মানুষের জাতীয় ও ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে।
সূত্র: রয়টার্স
হামাস-ইসরায়েল সংঘাত মানবতাবিরোধী অপরাধ: সাবেক আইসিসি প্রধান
হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান লুইস মোরেনো ওকাম্পো।
বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
লুইস বলেছেন, হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে উভয়পক্ষই গণহত্যা চালাচ্ছে।
এ সময় তিনি গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে ইসরায়েলের নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করেন। আইসিসির সাবেক প্রধানের মতে, হামাসের হামলায় এ পর্যন্ত ১৪০০ ইসরায়েলি প্রাণ হারিয়েছেন যা স্পষ্ট গণহত্যা। এছাড়া ২২০ জনের বেশি দেশি-বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করাকেও তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে উল্লেখ করেন।
অবরোধে বিপর্যস্ত গাজাবাসীর কথা উল্লেখ করে তেল আবিবের সমালোচনা করেন লুইস। তিনি বলেন, এটি অবশ্যই মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা।
তিনি আরো বলেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। তবে কোনো অঞ্চলকে অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেওয়া যায় না।
গাজায় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার বন্ধ করাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গত ৭ অক্টোবর নজিরবিহীন হামলা চালায় গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিন প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস। এরপর ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে গাজার বেসামরিক লাখ লাখ বাসিন্দা। প্রায় তিন সপ্তাহে গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।
সূত্র: বিবিসি
পশ্চিম তীরে ‘আগুনে পেট্রোল ঢালছে’ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা: বাইডেন
পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান হামলা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলা ও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ক্রমাগত বোমাবর্ষণের পর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বেড়ে গেছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মতে, বসতি স্থাপনকারীদের হাতে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে এবং বেশ কয়েকটি ছোট বেদুইন সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেছে, তাদের অন্য এলাকায় সরে যেতে বাধ্য করেছে।
বুধবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজের সঙ্গে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে বাইডেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার জন্য মার্কিন সমর্থন লোহার মতো দৃঢ় বলে উল্লেখ করেন।
তবে একই সঙ্গে তিনি পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কিছু ইসরায়েলির আচরণের কঠোর নিন্দা জানান।
বাইডেন বলেন, “পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ‘চরমপন্থী বসতি স্থাপনকারীদের’ হামলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “এটা থামাতে হবে। তাদের জবাবদিহি করতে হবে। এটা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”
এ সময় পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলাকে ‘আগুনে পেট্রোল ঢেলে দেওয়া’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “তারা এমন জায়গায় ফিলিস্তিনিদের আক্রমণ করছে যেখানে তাদের (ফিলিস্তিনিদের) অধিকার রয়েছে এবং… এটি এখনই বন্ধ করতে হবে।”
তবে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলা থামানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নেবে, সে সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে কিছুই বলেননি বাইডেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স
আপনার মন্তব্য লিখুন