ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক মুক্তি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুর পৌনে ২টার দিকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। এর আগে, সমন্বয়কদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকরা দেখা করতে যান।
নাহিদের বাবা বদরুল ইসলাম জানান, আজ ভোর ৬টায় সবার পরিবারকে ফোন দিয়ে ডিবি অফিসে আসতে বলা হয়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে ডিবি তাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় বাসায় দিয়ে যায়।
বিস্তারিত আসছে
সিলেটে পুলিশ-শিক্ষার্থী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
সিলেটে কোটা ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলি-ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুরে মহানগরের সুবিদবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারসেল ছুঁড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জানা গেছে, কোটা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বুধবারের কর্মসূচি ছিল- ‘মার্চ ফর জাস্টিস’। কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর ১২টায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে মিছিল নিয়ে মহানগরের বন্দরবাজারের দিকে রওনা হয়।
পথিমধ্যে সুবিদবাজার এলাকায় আসলে সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। শিক্ষার্থীরা তখন ব্যারিকেডটি ভেঙে বন্দরবাজার আসতে চাইলে পুলিশ ফের বাধা দেয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় এবং শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ও পুলিশ টিয়ার সেল-ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং বন্দরবাজার আসতে পারেনি।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আহত চবি ছাত্রের মৃত্যু
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
গতকাল সকালে তিনি ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। হৃদয় পটুয়াখালী সদর রোডের নতুন বাজার এলাকার রতন চন্দ্র তরুয়ার ছেলে। এ নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে চট্টগ্রামে মোট ছয়জন মারা গেছেন। জানা যায়, ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন চবি শিক্ষার্থী হৃদয়। ওই দিন সংঘর্ষে দুজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছিলেন।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির বলেন, বহদ্দারহাটের ঘটনায় আহত হৃদয় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ
সারাদেশে ‘কপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেখানেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সকাল ১১টার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা অবস্থান ছাড়ছেন না।
এর আগে ওই এলাকায় অল্প পরিমাণে শহর এলাকার বাস, টেম্পো, অটোরিকশা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল করলেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করার পর যান চলাচল অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। তবে নগরের অন্যান্য এলাকায় কিছু পরিমাণ গণ পরিবহন চলাচল করছে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল খুবই কম।
গত মঙ্গলবার বিকেলে নগরের মুরাদপুর ও শুলকবহর এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মো. ফারুক (৩২), ওয়াসিম আকরাম (২২) ও ফয়সাল আহমেদ (২০) নামের তিনজন নিহত হন।
সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা
নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।
বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
বিবৃতিতে আসিফ মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে আগামীকাল ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করছি।
তিনি আরো বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। সারা দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি, আগামীকালের কর্মসূচি সফল করুন।
অভিভাবকদের উদ্দেশে আসিফ মাহমুদ বলেন, আমাদের অভিভাবকদের বলছি, আমরা আপনাদেরই সন্তান। আমাদের পাশে দাঁড়ান, রক্ষা করুন। এই লড়াইটা শুধু ছাত্রদের না, দলমত নির্বিশেষে এদেশের আপামর জনসাধারণের।
ঢাবি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, হল খালি করার নির্দেশ
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল খালি করতে বলেছে।
আজ দুপুরে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক একেএম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিন্ডিকেট সভায় গতকাল দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন বলেছেন,‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার এবং হলগুলো খালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সরকারি চাকরিতে কোটা বিলুপ্ত করে ২০১৮ সালের সরকারি সার্কুলারকে ৫ জুন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে। এরপর ১০ জুলাই হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট।
সূত্র : বাসস
গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল কর্মসূচি
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আজ গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল কর্মসূচি পালন করবেন আন্দোলনকারীরা।
বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দিবাগত রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আসিফ মাহমুদ বলেন, আজ পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলা এবং গুলিবর্ষণে শহীদ ভাইদের জন্য বুধবার দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। আপনারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলায় জেলায় গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল পালন করুন। ঢাকায় অবস্থানরত সবাই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সময়মতো চলে আসবেন।
প্রসঙ্গত, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন মঙ্গলবার বেশ সহিংস রূপ নেয়। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ছয়জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সারা দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে।
সারা দেশে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি ও শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে রামপুরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডমুখি সড়কে যান চলাচল হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে মেরুল বাড্ডা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডমুখি দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও বনশ্রী ও আবুল হোটেল হয়ে আসা গণপরিবহন দীর্ঘ জটে পড়ে। ফলে অনেকে বিকল্প রাস্তা হিসেবে হাতিরঝিলকে বেছে নিচ্ছেন।
বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও কোটা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ইউল্যাবের সামনের সড়ক অবরোধ করেন তারা। অবরোধের ফলে রাজধানীর গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে ধানমন্ডি সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
নতুন বাজার
রাজধানীর প্রগতির সরণির নতুন বাজার এলাকা অবরোধ করে আন্দোলন করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। এতে বাড্ডা লিংক রোড থেকে কুড়িল বিশ্বরোডমুখি সড়কে যান চলাচল হয়ে যায়।
এ সময় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শনির আখড়া
রাজধানীর চিটাগাং রোডের শনির আখড়া কাজলা রোডের রাস্তায় কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলন করছেন দনিয়া কলেজ ও মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ শিক্ষার্থীরা।
উত্তরা ও বিমানবন্দর সড়ক
কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর উত্তরা ১১ নং সেক্টর চৌরাস্তা জমজম মোড় অবরোধ করেছেন উত্তরা ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বনানী ও কুড়িল বিশ্বরোড
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রাজধানীর বনানী ও কুড়িল বিশ্বরোড সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। কুড়িল বিশ্বরোড সড়ক অবরোধ করেন স্টেট ইউনিভার্সিটি।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীদের অবরোধে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। অনেকেই বাস থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা দেন।
হঠাৎ উত্তপ্ত ঢাবি ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ডাক
ফের বিক্ষোভে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। রবিবার রাত ১১টার দিকে ঢাবির বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে কোটা সংস্কারের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে প্রতিটি হল থেকে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন।
এ সময় তারা বিজয় একাত্তর হলে ঢুকতে চাইলে ছাত্রলীগের বাধার সম্মুখীন হন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে ভেতরে ঢুকে সমর্থকদের নিয়ে আসেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা “চেয়েছিলাম অধিকার,হয়ে গেলাম রাজাকার”, “এক দুই তিন চার, আমরা সবাই রাজাকার”, ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার’ ইত্যাদি স্লোগানও দেন।।
প্রসঙ্গত, চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা চাকরি পাবে না কি রাজাকের নাতিনাতনিরা চাকরি পাবে?
হঠাৎ মধ্যরাতে উত্তাল রাবি, ঢাকা-রাজশাহী সড়ক অবরোধ
মধ্যরাতে হঠাৎ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে। রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় রাবির মেইন গেট সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হল থেকে হঠাৎ বিক্ষোভ শুরু করেন কিছু শিক্ষার্থী। মুহূর্তেই শত শত শিক্ষার্থী বিভিন্ন হল থেকে মিছিলে যুক্ত হন। বিভিন্ন হলসহ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে হাজারো শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এরআগে, সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গঠিত মামলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
কোটা সংস্কারের দাবি, মধ্যরাতে বিক্ষোভে ফুঁসলো ইবি
রবিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে জিয়া মোড় থেক বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ মিলিত হয়। এরপর মিছিলটি নিয়ে পুনঃরায় জিয়া মোড়ে এসে শেষ হয়।
এ সময় ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে মুখরিত হয় ক্যাম্পাস।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আন্দোলনকারীরা বলেন, আজকে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিবেশন ডেকে বিষয়টির সমাধানের দাবি জানাই।
মধ্যরাতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল পুরান ঢাকা
ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ ‘কে বলছে, কে বলেছে সরকার’ স্লোগানে তাঁতি বাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশ থেকে কাঁঠাল তলায় জড়ে হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে একমাত্র ছাত্রী হলের তালা ভেঙে মিছিলে যোগ দেন নারী শিক্ষার্থীরাও।
এরপর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতি বাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এরপর কিছুক্ষণ সেখানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাহাদুর শাহ পার্ক, বাংলা বাজার মোড়ে ঘুরে পুনঃরায় ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিলে কিছু সময়ের জন্য পুরান ঢাকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশের সতর্ক অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে।
মধ্যরাতে উত্তাল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)।
সোমবার (১৫ জুলাই) রাত ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ক্যাম্পাসের হাদি চত্বরের সামনে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে মিছিল দিয়ে তারা শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে অবস্থান করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খান বাহাদুর আহছানউল্লা হল, খান জাহান আলী হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ ক্যাম্পাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা মিছিলে যোগ দেয়।
‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজারকার, কে বলেছে, কে বলেছে, সরকার-সরকার’; ‘চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার (১৪ জুলাই) বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে?
সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি আজ
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আজ রবিবার থেকে সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় শাহবাগ মোড়ে অবরোধ শেষে এই ঘোষণা দেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “রবিবার বিকাল ৩টা থেকে বাংলা ব্লকড কর্মসূচি ঘোষণা করা হল। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।”
শনিবার বিকাল ৩টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে আলাদা ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে হলপাড়া-ভিসি চত্বর-টিএসসি-বকশিবাজার-বুয়েট-ইডেন কলেজ-হোম ইকোনমিকস-নীলক্ষেত-টিএসসি হয়ে বিকাল ৫টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন তারা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘অবরোধ অবরোধ, শাহবাগ অবরোধ’, দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
প্রসঙ্গত, এবার শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবিতে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবিগুলো হল:
১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২. পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)।
৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।
৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক অবরোধ করেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের আশেকপুর বাইপাস এলাকায় অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দু’পাশেই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পরেছেন সাধারণ যাত্রীরা।
আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা কখনোই সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলন করতে চাই না, আমরা পড়াশোনা করতে চাই। কিন্তু আমাদের কিছু করার নাই। কারণ যে পরিমাণ কোটা, তাতে মেধাবীরা দেশে চাকরি না পেয়ে বাইরে চলে যাবেন। দেশে সরকারি চাকরি করার আগ্রহও হারাবেন।’
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বৈষম্যমূলক কোটার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। আমরা ইতোপূর্বেও সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এ বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
কোটা বাতিলের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। এ সময় তারা কোটা বাতিল এবং ১৮ এর পরিপত্র বহালের দাবিতে নানা স্লোগান দেন।
পরে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, উপাচার্যের বাসভবন, রাজু ভাস্কর্য ঘুরে শাহবাগ এসে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
মিছিলটি দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে শাহবাগ মোড়ে এসে থামে। শাহবাগ মোড়ে আগে থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিলেন। তবে আন্দোলনকারীদের বাধা দেয়নি পুলিশ। শাহবাগ মোড়ে থাকা আন্দোলনকারীরা এখন কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্য দিচ্ছেন।
দাবি আদায়ে গতকাল বুধবার বিক্ষোভ-মিছিল এবং প্রায় দেড় ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। আন্দোলনকারীরা ১ জুলাই থেকে টানা কর্মসূচি পালন করছেন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে যাতে শিক্ষার্থীরা যুক্ত হতে না পারেন, সে জন্য আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ফটকে তালা দিয়েছিল ছাত্রলীগ। ফলে মিছিলে আসতে চাইলেও শিক্ষার্থীদের অনেকে আটকা পড়েন। সমালোচনার মুখে পড়ে ফটক খুলে দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে হল থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি।