ইরানের দ্বিতীয় দফা অর্থাৎ রান-অফে গড়িয়েছে নির্বাচন। আগামীকাল সেই ভোট। তাতে লড়বেন সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং সাঈদ জালিলি। এর আগে গত শুক্রবার হওয়া নির্বাচনে কোনো প্রার্থী এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় ভোট দ্বিতীয় ধাপে গড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ভোটের গণনায় এগিয়ে আছেন কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলি এবং সংস্কারপন্থি নেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান।
দুই প্রার্থীর মধ্যে পেজেশকিয়ান একজন কার্ডিয়াক সার্জন। তিনি মনে করেন, পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ইরানের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি গত চার বছরে ৪০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের হার উল্লেখ করেছেন।
অিন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কট্টরপন্থি সাঈদ জালিলি। তিনি ২০১৫ সালে ইরানের ওই পারমাণবিক চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন। মঙ্গলবার বিতর্কের সময় জালিলি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলোকে সম্মান করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এ ছাড়া পেজেশকিয়ানের পরিকল্পনায় নিষেধাজ্ঞার প্রতি কোনো নিন্দা না থাকায় জালিলি তার সমালোচনা করেছেন। মঙ্গলবার উভয় প্রার্থীই দেশটির অর্থনীতি এবং পারমাণবিক ইস্যুতে তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন আগামী শুক্রবারের নির্বাচনে এ দুই নেতার কে নির্বাচিত হচ্ছেন তার ওপরেই নির্ভর করছে ইরানের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।
ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গণনা: কট্টরপন্থী জালিলি এগিয়ে
শুক্রবার পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানে আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল আটটায় (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায়) ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শিডিউড অনুযায়ী টানা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলার কথা। তবে এরপরও ভোটার উপস্থিতি থাকায় ভোটদানের সময় বাড়ানো হয়। ভোটগ্রহণ শেষে এখন চলছে গণনা।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে থেকে জানা গেছে, দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুগত সাঈদ জালিলি ভোট গণনায় এগিয়ে রয়েছেন। তারপরেই অবস্থান করছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পাজেশকিন।
ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহসেন ইসলামী রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত ১ কোটিরও বেশি ভোট গণনা করা হয়েছে। যার মধ্যে কট্টরপন্থী সাবেক পারমাণবিক আলোচক সাঈদ জালিলি ৪২ লাখ ৬০ হাজার ভোট পেয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাসুদ পাজেশকিন পেয়েছেন ৪২ লাখ ৪০ হাজার ভোট।
একাধিক নির্বাচনী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৪০ শতাংশ ভোটার। দেশটির ধর্মীয় নেতারা যে পরিমাণ ভোটার উপস্থিতির আশা করেছিলেন, এটি তার চেয়ে অনেক কম। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রাজধানী তেহরান এবং অন্যান্য শহরের ভোটকেন্দ্রগুলো খালি ছিল।
ইরানের আধাসরকারি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ‘রানঅফে’ গড়াবে তা অনেকটাই নিশ্চিত।
ইরানের নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেসব প্রার্থী অংশ নেবেন তাদের মধ্যে কেউ যদি সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে চান তাহলে তাকে মোট ভোটের ৫০ শতাংশ বা তারও বেশি ভোট পেতে হবে।
কোনও প্রার্থী এই ‘ম্যাজিক ফিগার’ স্পর্শ করতে না পারলে নির্বাচন গড়াবে রানঅফে। যেখানে সর্বোচ্চ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এই রানঅফে যে প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
গত ২০ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ইব্রাহিম রাইসি। এরপর দেশটিতে আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৬ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দু’জন নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে শুক্রবারের নির্বাচনে চার প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হয়।
নির্বাচন বিষয়ক বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছিল সংস্কারবাদী মাসুদ পাজেশকিন সর্বোচ্চ ভোট পাবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন।
সূত্র: রয়টার্স