স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না ছাড়া ইসরায়েলের অস্তিত্ব থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে সৌদি আরব।
একইসঙ্গে ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও পুনর্ব্যক্ত করেছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সম্পদশালী ও প্রভাবশালী দেশটি।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন-ফারহান ব্রাসেলসে আরব ও ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে বৈঠকের পর জানিয়েছেন- ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না থাকলে ইসরায়েলেরও অস্তিত্ব থাকতে পারে না।
তিনি বলেছেন, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমে তারা যে নিরাপত্তা চায় সেটি ইসরায়েল স্বীকার করে না এবং এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়।
সৌদি আরবের শীর্ষ এই কূটনীতিক সাংবাদিকদের বলেন, “ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছাড়া ইসরায়েলের অস্তিত্ব থাকতে পারে না এবং এটা সম্পূর্ণরূপে মেনে নেওয়া প্রয়োজন ইসরায়েলের।”
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন-ফারহান আরও বলেন, “ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই নিরাপত্তা পাবে ইসরায়েল। তাই আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি, ইসরায়েলের নেতারা বুঝতে পারবেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে মিলে কাজ করাটা তাদের স্বার্থেই ভাল। আর সেটি শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী করাই নয় বরং ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।”
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক স্থাপন করবে না বলে জানিয়ে দেয় সৌদি আরব।
সূত্র: আল জাজিরা
নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে, সৌদির কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্র বিক্রি করবে আমেরিকা
সৌদি আরবের কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই ঘোষণা আসতে পারে।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এমন একজন ব্যক্তির বরাতে ফিনান্সিয়াল টাইমস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে প্রস্তুত, সে বিষয়ে ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে সৌদি আরবকে ইঙ্গিত দিয়েছে।
২০২১ সালে আমেরিকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সৌদি আরবের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিশেষ করে ইয়েমেনে ইরানপন্থী হুতি বিদ্রোহীদের ওপর সৌদি সামরিক অভিযানে ব্যাপক প্রাণহানি এবং রিয়াদের মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে নাখোশ ছিলেন বাইডেন। এছাড়া ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড ঘিরেও সৌদির বিরুদ্ধে সরব ছিল মার্কিন প্রশাসন।
বাইডেন সরকারের এমন অবস্থানের জেরে মার্কিন অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা সৌদি আরবের কাছে বেশ কয়েক ধরনের অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। যদিও যুগের পর যুগ ধরে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম মিত্র সৌদির কাছে এসব অস্ত্র বিক্রি আসছিল আগের মার্কিন সরকার।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বুধবার বলেছেন, পারমাণবিক শক্তি, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং রিয়াদ ও তেল আবিবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে একগুচ্ছ চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব।
সৌদির সঙ্গে শান্তি চাইলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ থাকতে হবে
সৌদি আরব বলেছে, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের যেকোনো সমাধানে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যার রাজধানী হবে ‘পূর্ব জেরুজালেম’।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ শনিবার রাতে জাতিসংঘসাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এ কথা বলেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্যের’ ধারণার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন মন্তব্য করলেন।
জেরুজালেম পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে ফিলিস্তিনিদের ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতানিয়াহু
আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তাতে তিনি এই ধরনের শান্তি চুক্তি সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ফিলিস্তিনিদের ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
শুক্রবার সিএনএন ও ফক্স নিউজের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, যদি তিনি ছাড় দিতে রাজি হন, তাহলে তিনি বিশ্বাস করেন যে, তার কট্টর ডানপন্থী দলের সদস্যরাও তা অনুসরণ করবেন।
সিএনএন-এর ক্যাটলান কলিন্স নেতানিয়াহুকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি সৌদি আরবের সাথে এই চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য আপনার জোটকে ভেঙে দিতে ইচ্ছুক?
জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, আমি মনে করি না যে এর (জোট ভাঙার) প্রয়োজন হবে।
ওই সাংবাদিক ফের প্রশ্ন করেন, আপনি কি মনে করেন যে তারা এটির (ফিলিস্তিনকে ছাড় দেওয়া) সাথে যাবে? নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি ছাড় দেই কিনা সেটিই বিষয়।’
উল্লেখ্য, এর আগে নেতানিয়াহুর জোটের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, ফিলিস্তিনকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
আপনার মন্তব্য লিখুন