শপথ নিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের ৫০ সংসদ সদস্য। মঙ্গলবার বিকাল তিনটা ৪০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের শপথ গ্রহণ কক্ষে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, চীফ হুইপ নুরে ই আলম চৌধুরী, হুইপ আবু সাঈদ স্বপন, ইকবালুর রহিমসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
প্রথমে আওয়ামী লীগের ৪৮ জন, পরে জাতীয় পার্টির ২ জন শপথ নেন। শপথ গ্রহণ শেষে শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন তারা। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালাম। নবনির্বাচিত নারী এমপিরা বিকেল পৌনে ৫টায় সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবেন।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। গত রবিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে সংরক্ষিত নারী আসনে কোনো প্রার্থীই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায়, নির্বাচন কমিশন সবাইকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে। এরপর মঙ্গলবার নির্বাচনি ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। গেজেটের কপি নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে পাঠানো হয়।
সংরক্ষিত আসনে এমপি পদে চমক
গতকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের ৪৮ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সংরক্ষিত আসনেও নানা চমক এনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাদশ জাতীয় সংসদের পাঁচজন ছাড়া বাকি সবাই নতুন মুখ। এর মধ্যে ৩৪ জন প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন।
নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হওয়া, মনোনয়ন পেয়েও আদালতের নিষেধাজ্ঞায় বাদ পড়া, মনোনয়নবঞ্চিত নেত্রীরাও পেয়েছেন চূড়ান্ত মনোনয়ন। দলের দুর্দিনের ত্যাগী নেত্রী, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ত্যাগী পরিবার, সাবেক এমপি-মন্ত্রীর সন্তান, সমাজের আলোকিত পেশাজীবী নারীকেও বেছে নেওয়া হয়েছে মনোনয়নের ক্ষেত্রে। ১৪-দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি থেকে একজনকে দেওয়া হয়েছে মহিলা আসনের মনোনয়ন। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
এদিকে গতকাল রাতে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থী তালিকা পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ। চিঠিতে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগ, জোটভুক্ত ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের অনুকূলে প্রাপ্ত ৪৮টি সংরক্ষিত আসনে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রদান করা হলো। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। এর আগে সকালে সংরক্ষিত আসনের ১ হাজার ৫৪৯ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে, পরে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারে তালিকা প্রকাশ করা হয়। সংসদীয় বোর্ডের সভায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার
সভাপতিত্বে অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। তালিকায় যেমন রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রীয় নারী নেত্রী আছেন, তেমন আছেন একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীও। জাতীয় এমনকি স্থানীয়ভাবেও যাদের খুব একটা প্রভাব নেই কিন্তু রাজনৈতিকভাবে নিঃস্বার্থ ও ত্যাগী তারাও আছেন তালিকায়। আগামী রবিবার নির্বাচন কমিশনে এ তালিকা দেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী জনগণের ভোটে নির্বাচিত ৩০০ এমপির ভোটে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিরা নির্বাচিত হবেন। তবে অতীতে ভোট হওয়ার কোনো নজির নেই। এবারও ভোট হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রথম নারী সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনও চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের দুবার সাধারণ সম্পাদক ও দুবার সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ফরিদা ইয়াসমিন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
তারানা হালিম, আরমা দত্ত, মেহের আফরোজ চুমকি, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, ফরিদুন্নাহার লাইলী, নাজমা আক্তার, ওয়াসিকা আয়শা খান, কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, রোকেয়া সুলতানার মতো চেনা সব মুখও স্থান পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের এমপি পদে।
একাদশ জাতীয় সংসদের এমপি পদে দায়িত্ব পালন করা ওয়াসিকা আয়শা খান, অপরাজিতা হক, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, নাহিদ ইজহার খান ও আরমা দত্ত দ্বিতীয়বারের মতো এমপি পদে মনোনয়ন পেলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনি লড়াইয়ে হেরে যান সানজিদা খানম ও মেহের আফরোজ চুমকি। তাঁদের দুজনকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেলেও উচ্চ আদালতের রায়ে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী ড. শাম্মী আহমেদও পেয়েছেন মনোনয়ন। মনোনয়ন চেয়েও না পাওয়া সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরাকে সংরক্ষিত আসনে এমপি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনের সংখ্যানুপাতে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী সদস্য মনোনয়ন দেওয়ার কথা ছিল ৩৮টি। তবে যে ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য জয় পেয়েছেন, তারাও প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের হওয়ায় দলের সভানেত্রী তথা শেখ হাসিনার ওপর তাদের ভাগের ১০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন দেওয়ার ভার অর্পণ করেন।
সে হিসেবে আওয়ামী লীগ ৪৮ আসনেই সংরক্ষিত নারী এমপির তালিকা চূড়ান্ত করে তা ঘোষণা করেছে। সভা শেষে ওবায়দুল কাদের জানান, সংরক্ষিত নারী আসনে ১ হাজার ৫৫৩ জনের মনোনয়নপত্র যাচাইবাছাই শেষে ৪৮টি বেছে নিতে হয়েছে। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি ও সর্বসম্মতিক্রমে ৪৮ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর নাম প্রকাশ করছি। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন আওয়ামী লীগের এসব প্রার্থী।
৪৮ সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন যাঁরা : রেজিয়া ইসলাম (পঞ্চগড়), দৌপদী দেবী আগরওয়াল (ঠাকুরগাঁও), মোছা. আশিকা সুলতানা (নীলফামারী), আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা (জয়পুরহাট), কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর), জারা জেবিন মাহবুব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), রুনু রেজা (খুলনা), ফরিদা আক্তার বানু (বাগেরহাট), মোসা. ফারজানা সুমি (বরগুনা), খালেদা বাহার বিউটি (ভোলা), নাজনীন নাহার রশীদ (পটুয়াখালী), ফরিদা ইয়াসমিন (নরসিংদী), উম্মি ফারজানা ছাত্তার (ময়মনসিংহ), নাদিয়া বিনতে আমিন (নেত্রকোনা), মাহফুজা সুলতানা মলি (জয়পুরহাট), আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জামান কল্পনা (ঝিনাইদহ), আরমা দত্ত (কুমিল্লা), লায়লা পারভীন (সাতক্ষীরা), সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান (খুলনা), বেদৌরা আহমেদ সালাম (গোপালগঞ্জ), শবনম জাহান (ঢাকা), পারুল আক্তার (ঢাকা), সাবেরা বেগম (ঢাকা), আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ (বরিশাল), নাহিদ ইজাহার খান (ঢাকা), ঝর্ণা হাসান (ফরিদপুর), সাবেক মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা (মুন্সীগঞ্জ), শাহেদা তারেখ দীপ্তি (ঢাকা), অণিমা মুক্তি গোমেজ (ঢাকা), শেখ আনার কলি পুতুল (ঢাকা), মাসুদা সিদ্দিক রোজি (নরসিংদী), আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম (টাঙ্গাইল), আওয়ামী লীগের শিক্ষা সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার (টাঙ্গাইল), মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর), অপরাজিতা হক (টাঙ্গাইল), হাছিনা বারী চৌধুরী (ঢাকা), নাজমা আক্তার (গোপালগঞ্জ), রুমা চক্রবর্তী (সিলেট), আওয়ামী লীগের কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর), আশ্রাফুননেছা (লক্ষ্মীপুর), কানন আরা বেগম (নোয়াখালী), শামীমা হারুন লুবনা (চট্টগ্রাম), ফরিদা খানম (নোয়াখালী), দিলোয়ারা ইউসুফ (চট্টগ্রাম), আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান (চট্টগ্রাম), ডরথি তঞ্চঙ্গা (রাঙামাটি), আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম (ঢাকা), নাছিমা জামান ববি (রংপুর)। এদের মধ্যে কানন আরা বেগমকে ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলের বিবেচনায় মনোনীত করা হয়।