গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে থামাতে ব্যর্থ হলে আমেরিকাকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইরান।
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মাদ রেজা আশতিয়ানি রবিবার এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, “মার্কিনিদের প্রতি আমাদের উপদেশ হচ্ছে, অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে একটি অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠা করা হোক। তা না হলে আমেরিকার বিরুদ্ধে কঠোর আঘাত হানা হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা সব সময় ইসরায়েল সরকারের প্রতি সমর্থন করা থেকে বিরত থাকার জন্য আমেরিকাকে পরামর্শ দিয়ে এসেছি।”
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু কৌশলগত ভুল করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটন ইরানকে যে বার্তা পাঠিয়েছে তা মার্কিন সরকারের ভয় ও হতাশা থেকে উৎসারিত।
জেনারেল আশতিয়ানি বলেন, মার্কিনিরা এখন ইসরায়েলিদের সঙ্গে [গাজা উপত্যকার] জলাভূমিতে হাবুডুবু খাচ্ছে এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তড়পাচ্ছে।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আকস্মিকভাবে নজিরবিহীন অভিযান পরিচালনা করে। এরপর ইসরায়েল তার বর্বর যুদ্ধ মেশিন চালু করে। সেদিন থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দখলদার সেনাদের পাশবিক হামলায় ৪,৮০০ শিশু ও ২,৫৫০ নারীসহ ৯,৭৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীর জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য ও খাবার পানির সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দিয়েছে তেল আবিব। ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পর ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন সেনা ঘাঁটিগুলোর ওপর প্রতিরোধ যোদ্ধারা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, গত ১ নভেম্বর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গাজা উপত্যকার ওপর বর্বরতা বন্ধ করতে ইসরায়েলকে বাধ্য করার জন্য তেল আবিবের কাছে তেল ও অন্যান্য পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিতে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
সূত্র: প্রেসটিভি
গাজা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘ
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আগামীকাল আরেকটি জরুরি বৈঠক করবে।
জাতিসংঘে সংযুক্ত আরব আমিরাত মিশনের এক মুখপাত্র এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘গাজার পরিস্থিতির অবনতি এবং আল-শিফা হাসপাতালে হামলা এবং জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বারবার হামলার প্রেক্ষাপটে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন আগামীকাল ৬ নভেম্বর বিকাল ৩টায় আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
গাজায় ‘অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর প্রধানদের
এক বিরল যৌথ বিবৃতিতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর প্রধানরা গাজায় ‘অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি’র আহ্বান জানিয়েছে।
গার্ডিয়ানের খবর অনুসারে, জাতিসংঘের প্রধান মানবিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থার নেতারা গাজায় ‘তাৎক্ষণিক মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছেন। বিরল এই যৌথ বিবৃতিতে পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ওসিএইচএ, ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের প্রধানরা রয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রায় এক মাস ধরে ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ক্রমবর্ধমান প্রাণহানি হওয়ায় বিশ্ববাসী বিস্মিত ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে এবং ২০০ জনেরও বেশি জিম্মি হয়েছে, ইসরায়েলি সম্প্রদায়ের ওপর রকেট নিক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান ‘নৈতিকভাবে নিন্দনীয়’ : জর্ডানের রানী
জর্ডানের রানী রানিয়া বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান ‘নৈতিকভাবে নিন্দনীয়’ এবং হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জর্ডানের বাদশাহ বলেন, গাজাকে হামাসের কবল থেকে মুক্ত করার ইসরায়েলে প্রচেষ্টা ‘অদূরদর্শী এবং পুরোপুরি যৌক্তিক নয়’। কারণ এই সংঘাতের মূল কারণ ‘অবৈধ দখলদারিত্ব’।
তিনি বলেন, আমরা যদি মূল কারণগুলি সমাধান না করি, তাহলে যোদ্ধাদের হত্যা করেও লাভ নেই। যে জন্য যোদ্ধা তৈরি হচ্ছে আপনি সে ‘কারণ’ কে হত্যা করতে পারবেন না। হামাস যা করেছে, এসব ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে তা করতে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও অনুপ্রাণিত আরেকটি দল আবির্ভূত হবে।