শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ৭৩ বছর বয়সী প্রবীণ রাজনীতিবিদ দিনেশ গুণাবর্ধনে। আজ শুক্রবার দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন, এরপরই শপথ নেন শ্রীলঙ্কান পার্লামেন্টের জ্যেষ্ঠ এই সদস্য। খবর রয়টার্স ও আল-জাজিরার।
কলম্বোর ফ্লাওয়ার রোডে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শপথ নেন দিনেশ গুণাবর্ধনে। এর আগে, শ্রীলঙ্কায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আজ নতুন মন্ত্রীসভা নিয়োগ করবেন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া দিনেশ গুণাবর্ধনেকে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসে তথা প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের মিত্র বলেই অনেক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে তার স্কুল সহপাঠী দিনেশ গুণাবর্ধনেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। গুণাবর্ধনে নিজেও বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বুধবার দেশটির পার্লামেন্টে ১৩৪ ভোট পেয়ে রনিল বিক্রমাসিংহে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র শ্রীলঙ্কার নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী দুল্লাস আলাহাপেরুমা পান ৮২ ভোট এবং অনুরা কুমার পান ৩ ভোট।
পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২২৩ জন সংসদ সদস্য ভোট দিয়েছেন। তবে দুইজন সংসদ সদস্য ভোটদানে বিরত থাকেন। চারটি ভোট বাতিল বলে বিবেচিত হয় এবং বৈধ ভোটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২১৯টি। এর আগে গত ১৪ জুলাই গোতাবায়া রাজাপাকসে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠালে পদটি শূন্য হয়।
এর আগে শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে সে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। আজ বুধবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের সংসদ সদস্যরা তাকে নির্বাচিত করলেন।
বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার সংসদে ভোটে রনিল পেয়েছেন ১৩৪ ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী এসএলপিপির সমালোচক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দুল্লাস আলাহাপেরুমা ৮২ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।
আগেই বলা হচ্ছিল, ২০ জুলাই শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়া হবে।
এবার সংকটকালে দ্রুততার সঙ্গে নেতা নির্বাচনের প্রয়োজন হওয়ায় বড় পরিসরে ভোটের আয়োজন বাদ দেওয়া হয়েছে। জনগণের ভোটের বদলে পার্লামেন্টে জনপ্রতিনিধিদের ভোটেই নির্বাচিত হলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই হয়েছে ত্রিমুখী।
রনিল বিক্রমাসিংহেকে আগে থেকেই এগিয়ে রাখছিলেন বিশ্লেষকরা। যদিও বিক্ষোভকারীরা তাকে রাজাপক্ষে পরিবারের মিত্র হিসেবেই দেখছে।
টানা কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে সম্প্রতি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে। প্রথমে মালদ্বীপ, তারপর সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
সেখান থেকেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন গোতাবায়া। এর আগে তার দুই ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং বাসিল রাজাপক্ষে যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
লঙ্কান পার্লামেন্টের এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজাপক্ষেদের দল এসএলপিপি। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তারা রনিল বিক্রমাসিংহেকে সমর্থন দিয়েছেন। রনিল প্রেসিডেন্ট হওয়ায় শ্রীলঙ্কা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এর আগে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েই দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন রনিল।
সূত্র : বিবিসি।
আজ শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, কে দেখাবেন চমক? । WB
আজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কায়। দেশটির বিরোধীদলীয় প্রার্থী সাজিদ প্রেমাদাসা শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ানোর কারণে অনেক পাল্টে গেছে হিসাব।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলেও ব্যাপক বিভাজন দেখা দিয়েছে। এর ফলে অপ্রত্যাশিত কোনও ফলাফলও দেখা যেতে পারে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে প্রার্থী তিনজন। তারা হলেন- অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ক্ষমতাসীন দলের ডুলাস আলাহাপেরুমা ও বামপন্থী জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) দলের অনুর কুমার দিসানায়েক।
পার্লামেন্টের ২২৫ সদস্যের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গোটাবায়া রাজাপাকসের উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থনৈতিক সংকটের ফলে সৃষ্ট ক্ষোভে গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
গোতাবায়া পালিয়ে যাওয়ার আগে রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট করে যান। এর আগে তার ভাই মহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলে তিনিই তাকে প্রধানমন্ত্রী করে যান। গোতাবায়ার দল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রনিল বিক্রমাসিংহেকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বেন ডুলাস আলাহাপেরুমা। ৬৩ বছর বয়স্ক ডুলাস কট্টর বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী।
তবে তার রয়েছে পরিচ্ছন্ন ইমেজ। তিনি ক্ষমতাসীন দল এসএলপিপি’র মন্ত্রী ছিলেন। পরে পদত্যাগ করেন। তার দলের অনেকের সমর্থন তিনি পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনে অপর প্রার্থী হচ্ছেন অনুর কুমার দিসানায়েক। তার জয়ের সম্ভাবনা কম থাকলেও তিনি ভিন্ন সমীকরণ তৈরি করতে পারেন।
শ্রীলঙ্কায় ১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম পার্লামেন্টের মাধ্যমে নির্বাচন হচ্ছে। এর আগে ১৯৮২, ১৯৮৮, ১৯৯৪, ১৯৯৯, ২০০৫, ২০১০, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
মালদ্বীপে পালালেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া । WB
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তার পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভের মুখে গোতাবায়া দেশ ছাড়লেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিবিসির প্রতিবেদনে এতথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে, দেশ ছাড়ার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। কিন্তু বিমানবন্দরের অভিবাসন কর্মকর্তাদের কেউ তার পাসপোর্টটি সিল করার জন্য ভিআইপি স্যুটে যাননি। তবে বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে তিনি অন্য কোনো অভিবাসন ডেস্কে যাওয়ার ঝুঁকিও নেননি।
এরপর প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও তার স্ত্রীকে ছাড়াই আরব আমিরাতের উদ্দেশে ৪টি ফ্লাইট বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। তারপরেও দেশ ছাড়ার চেষ্টা থেমে ছিল না তার।
দেশজুড়ে গত কয়েক শতকের মধ্যে ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের কারণে তীব্র চাপের মুখে পড়েছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজাপাকসে জানিয়েছিলেন যে, তিনি বুধবার পদত্যাগ করবেন। একই সঙ্গে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা জানিয়েছিলেন।
তবে শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর জানিয়েছে, গোতাবায়া সোমবার তার পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এটি আগামীকাল বুধবার থেকে কার্যকর হবে। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগপত্র স্বাক্ষর হওয়ার পর তা এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হয়েছে। এটি তার মাধ্যমে পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে পাঠানো হবে। আগামীকাল গোতাবায়ার দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর দেশটির পার্লামেন্ট স্পিকার এ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন।
আপনার মন্তব্য লিখুন