ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস তাদের হাতে আটক তিন ইসরায়েলি নারী বন্দির একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে তিন নারীর একজন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে বক্তব্য দিয়েছেন।
ওই নারী ফিলিস্তিনি বন্দিদের সঙ্গে বিনিময়ের মাধ্যমে তাদেরকে মুক্ত না করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদেরকে যেন ‘এই মুহূর্তে’ মুক্ত করা হয়।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে বড় ধরনের অভিযান চালায় হামাস যোদ্ধারা। আল-আকসা তুফান নামক ওই অভিযানে বহু এক হাজার ইসরায়েলিকে হত্যা করা হয় এবং প্রায় আড়াইশ’র মতো ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারীকে ধরে গাজায় নিয়ে যান ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা।
গত রবিবার গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার এক বক্তব্যে বলেন, তারা ইসরায়েলি কারাগারে আটক সব ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে তাদের হাতে আটক সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি আছেন। কিন্তু নেতানিয়াহু ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এর পরদিন সোমবার হামাস তিন ইসরায়েলি নারীর ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করলো।
ভিডিওতে আটক তিন নারীর একজন হিব্রু ভাষায় দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গত ৭ অক্টোবরের হামলা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং এখনও হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্ত করে নিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন।
হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ভিডিওতে ওই নারী নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে বলছেন, “আমরা জানি যে, একটি যুদ্ধবিরতি হওয়ার কথা ছিল। আপনি আমাদের সবাইকে মুক্ত করে নেবেন বলে আমরা আশা করছি। আপনি আমাদের সবাইকে মুক্ত করে নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”
হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি নারী আরো বলেন, “আমরা নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক…আপনি আমাদের সবাইকে হত্যা করতে চান; আপনি চান [ইসরায়েলি] সেনাবাহিনী আমাদের সবাইকে হত্যা করুক। আপনি আমাদেরকে ফিরে আসতে দিন…. আমাদেরকে আমাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে নিন।”
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসের পক্ষ থেকে ভিডিও প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এটি হামাসের অপপ্রচারণামূলক ভিডিও এবং তিনি এতে কান দেবেন না। যুদ্ধ করে হামাসের হাত থেকে জোর করে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
হামাসের আল-কাসাম ব্রিগেড সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, গাজা উপত্যকার ওপর ইসরায়েলের পাশবিক ও নির্বিচার বিমান হামলায় এরইমধ্যে তাদের হাতে আটক ৫০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
মধ্যপ্রাচ্যে ‘মারাত্মক বিশৃঙ্খলার’ জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করলেন পুতিন
মধ্যপ্রাচ্যে ‘মারাত্মক বিশৃঙ্খলার’ জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মিডলইস্ট আইয়ের খবর অনুসারে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার মধ্যপ্রাচ্যে ‘মারাত্মক বিশৃঙ্খলার’ জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যকে বর্তমান ভয়াবহ সংকট গ্রাস করছে। কে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সংগঠিত করছে এবং কে আজ এর থেকে উপকৃত হচ্ছে? আমার মতে, ইতিমধ্যে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ক্ষমতাসীন এলিটরা এবং তাদের স্যাটেলাইটগুলোই বিশ্বের অস্থিতিশীলতার প্রধান সুবিধাভোগী।’
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের যুদ্ধ নিরসনের মূল চাবিকাঠি হলো একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন।
পুতিন বলেন, এই সংঘাতের পেছনে যারা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করা যেতে পারে। আমরা ইউক্রেনে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।
গাজা যুদ্ধ বাড়তে থাকলে ইসরায়েল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, ইরানের হুঁশিয়ারি
গাজা যুদ্ধ আরো সম্প্রসারিত হলে ইসরায়েল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইরান।
দেশটির রাজনীতি বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাঘেরি-কানি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
তিনি বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ যদি আরও প্রসারিত হয়, তবে তা ইসরায়েলকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।
সোমবার এক টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে এই মন্তব্য করেন আলী বাঘেরি-কানি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে বড় ধরনের অভিযান চালায় হামাস যোদ্ধারা। আল-আকসা তুফান নামক ওই অভিযানে বহু এক হাজার ইসরায়েলিকে হত্যা করা হয় এবং প্রায় আড়াইশ’র মতো ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারীকে ধরে গাজায় নিয়ে যান ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা।
এরপরই পাল্টা যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আট হাজার তিন শতাধিক বেসামরিক নাগরিক হত্যা করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
বাঘেরি-কানি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের অভিযানকে “ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের সামরিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি ভয়াবহ প্রতিঘাত” বলে উল্লেখ করেন।
ইরানের ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যদি যুদ্ধ আরো প্রসারিত হয়, তবে আমরা বলতে পারি না যে ইসরায়েল হেরে যাবে, কারণ ইসরায়েলের কাছে পরাজিত বা বিজয়ী হিসাবে বর্ণনা করার মতো কিছুই থাকবে না।”
সূত্র: প্রেসটিভি