এবার রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত আইওয়া অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক সাফল্য পেলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। নতুন এক জনমত জরিপে সেখানে ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন কমলা।
অথচ এই আইওয়ায় ২০১৬ ও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সহজ জয় পেয়েছিলেন ট্রাম্প।
আইওয়ার ডেজ মইনেস রেজিস্ট্রার/মিডিয়াকম আইওয়ার পোলের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চূড়ান্ত ভোটের বাকি আর মাত্র দু’দিন। আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বব্যাপী বহুল আলোচিত এই ভোট। শেষ সময়ে আইওয়ায় জনমত জরিপে এগিয়ে যাওয়া ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলার জন্য নিশ্চিতভাবে দারুণ এক সুখবর। কমলার এই অপ্রত্যাশিত এগিয়ে যাওয়ার পেছনে নারী ভোটাররা ভূমিকা রেখেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
গত ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর এই জরিপ পরিচালিত হয়। মোট ৮০৮ জন ভোটার জরিপে অংশ নেন। শনিবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। জরিপে কমলা পেয়েছেন ৪৭ শতাংশ সমর্থন। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ।
এর আগে সেপ্টেম্বরের জরিপে ট্রাম্প ৪ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন।
জরিপ পরিচালনাকারী পত্রিকা দ্য রেজিস্টার বলেছে, জনমত জরিপে দেখা গেছে- নারীরা, বিশেষ করে বয়স্ক ও রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নারীদের ভোট কমলার দিকে গেছে।
ট্রাম্প ২০১৬ সালে আইওয়ায় ৯ শতাংশের বেশি পয়েন্ট ব্যবধানে এবং ২০২০ সালে ৮ পয়েন্ট ব্যবধানে জিতেছিলেন।
সূত্র: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এবার কাকে চায় কোন দেশ?
বিশ্ব পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ অনেকটাই নির্ভর করে যাদের ওপর। আর তাই কেবল দেশটির জন্য নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই নজর থাকে শত্রু-মিত্র সবার। পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে চীন-রাশিয়া-ইরানের মতো দেশগুলোর বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগও ওঠে কখনও কখনও। কমালা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প? মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এবার কাকে চায় কোন দেশ?
বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে ডেমোক্র্যাটদের বর্তমান শাসনামলে দুই মেরুতে পৌঁছেছে দুই দেশের সম্পর্ক। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালেও এতটা শীতল ছিলো না মস্কো-ওয়াশিংটন সম্পর্ক। এমনকি, ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুসম্পর্ক নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা তাই মনে করছেন, ট্রাম্পকেই ওভাল অফিসে দেখতে চান রুশ প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইস্যুতে ইরানের অবস্থান আবার সম্পূর্ণ বিপরীত। আলোচিত আইআরজিসি কমান্ডার কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার জেরে ট্রাম্পকে রীতিমতো শত্রু ঘোষণা করেছে ইরান। এবারের নির্বাচনেও ট্রাম্পবিরোধী প্রপাগাণ্ডা ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে দেশটির বিরুদ্ধে।
রিপাবলিকান কিংবা ডেমোক্রেট-ক্ষমতায় যে দলই থাকুক, দুই দলেরই রয়েছে কঠোর চীন বিরোধী নীতি। ক্ষমতায় এসে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপ করে চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট বদল হলেও বাইডেন প্রশাসনও সরে আসেননি ট্রাম্পের নীতি থেকে। যদিও, সম্প্রতি এক ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, শি জিন পিংয়ের সাথে বেশ সুসম্পর্ক রয়েছে তার।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন ট্রাম্পেরই বেশি। নিজেকে তেলআবিবের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন নিজেই। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। গাজায় আগ্রাসন ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের অকুণ্ঠ সমর্থনের পরও বলা হচ্ছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে অখুশি হবেন না নেতানিয়াহু।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুসম্পর্কের নজির রয়েছে। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে দিল্লি সফরেও এসেছিলেন রিপাবলিকান এই নেতা। অন্যদিকে, বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সবার আগে যে ক’জন বিশ্বনেতা অভিনন্দন জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে শুরুর দিকেই রয়েছে মোদির নাম। যদিও, শিখ নেতা হত্যা চেষ্টা ইস্যুতে সম্প্রতি ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে তৈরি হয়েছে টানাপোড়েন।
ইউরোপীয় নেতাদের বেশিরভাগই অবশ্য ক্ষমতায় দেখতে চান হ্যারিসকেই। বেশ কয়েকবারই ন্যাটো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এছাড়াও আরও নানা ইস্যুতে রিপাবলিকান প্রার্থীর সাথে মতবিরোধ রয়েছে ইউরোপীয় নেতাদের।
প্রেসিডেন্ট পদে ফিরলে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানকে দেয়া সামরিক সহায়তায় লাগাম টানতে পারেন ট্রাম্প- এমন ধারণা অনেক বিশ্লেষকের।
কমলা হ্যারিসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে নতুন মোড়
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছেন কমলা হ্যারিস। জো বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা। সোমবার অধিকাংশ ডেলিগেটরা তার পক্ষে দাঁড়ান, যা তাকে প্রার্থী হিসেবে আরও এগিয়ে দিয়েছে।
বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারিতে ডেলিগেটরা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচন করেন। সাধারণত প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন। তবে বয়স ও শারীরিক সমস্যার কারণে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। বাইডেন নিজেই তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলাকে সমর্থন জানান এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির অর্থদাতারাও কমলাকে সমর্থন করেছেন, যা তাকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কমলা হ্যারিস ইতোমধ্যে প্রায় ৪ হাজার ডেলিগেটের মধ্যে ১ হাজার ৯৭৬ জনের সমর্থন পেয়েছেন। এই সমর্থন প্রার্থী মনোনীত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। ডেলিগেটদের সমর্থন নিশ্চিত হওয়ার পর, কমলা হ্যারিস নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প নারী নিপীড়নকারী এবং নিজের স্বার্থে আইন ভঙ্গ করেন।
৫৯ বছর বয়সী কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হবেন। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা তার প্রতি বড় আশা রাখছেন। সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এবং বাইডেনও তার প্রশংসা করেছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির চাঁদাদাতারাও কমলার প্রচারে ২৪ ঘণ্টায় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার দান করেছেন, যা নির্বাচনী ইতিহাসে এক দিনে সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি না: বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না জো বাইডেন। এ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। স্থানীয় সময় বুধবার (৩ জুলাই) ডেমোক্রেটিক দলের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে থাকা কিছু কর্তা ব্যক্তির সঙ্গে এক ফোনকলে এসব কথা বলেন বাইডেন।
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে ধরাশায়ী হওয়ার পর থেকে আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যেতে বাইডেনের ওপর চাপ ক্রমে বাড়ছে। এমনকি নিজের দল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতর থেকেও চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতেই বাইডেনের এই ফোনকল।
সূত্র বলছে, ফোনকলে বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনী দৌঁড় থেকে কেউ তাকে বাইরে ঠেলে দিচ্ছে না। তিনি দলের মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
এদিকে দলের অভ্যন্তরীণ এমন চাপের মুখে বাইডেন পদত্যাগ করতে পারেন— এমন একটি আলোচনা চাউর হয়েছিল। তবে বুধবার এক প্রশ্নের জবাবে বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জন-পিয়ের। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বাইডেন পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করবেন কি না? জবাবে কারিন বলেন, ‘অবশ্যই, না’।
সূত্র: বিবিসি
ট্রাম্প শত্রু দেশের প্রতি অনুগত, গণতন্ত্রের জন্য হুমকি: বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। শত্রু দেশ রাশিয়ার প্রতি তিনি অনুগত। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সমস্যা সমাধানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃস্পতিবার (০৭ মার্চ) স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের ভাষণে এভাবেই নিজের পূর্বসূরি ও আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির বাইরে গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে ভাষণের শুরুতেই উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরা নিজেদের প্রতিরক্ষায় আরও ব্যয় না করলে দেশগুলোর ওপর হামলা চালাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। বাইডেনের ভাষায়, আমি মনে করি, এটা আপত্তিকর, বিপজ্জনক ও অগ্রহণযোগ্য।
মার্কিন কংগ্রেসে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৬৮ মিনিট ভাষণ দেন বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি ছিল তাঁর তৃতীয় স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ। বার্ষিক এ ভাষণে ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়, গাজা সংঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
সেখানে বাইডেন অভিযোগ করে বলেন, ট্রাম্প ও তার দল রিপাবলিকান দলের সমর্থকেরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ইতিহাস বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের জয়ের পর সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে হামলা-ভাঙচুর চালান ট্রাম্পের সমর্থকেরা।
ভাষণে ৮১ বছর বয়সী বাইডেন বলেন, ৬ জানুয়ারি যা ঘটেছিল, তা আমার পূর্বসূরি ও এখানে আপনাদের কয়েকজন ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন। তবে আমি সেটা করব না। আপনি যখন নির্বাচনে জিতবেন, তখনই শুধু দেশকে ভালোবাসবেন, তা হতে পারে না।
আপনার মন্তব্য লিখুন