জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার ভোট হবে। কূটনৈতিক সূত্র এএফপিকে এ কথা জানিয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের মধ্যে, এপ্রিলের শুরুতে ফিলিস্তিনিরা সদস্যপদ প্রাপ্তির আবেদনটি পুনরুজ্জীবিত করে। ২০১১ সালে বিশ্ব সংস্থায় প্রথম এই আবেদন করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ভেটো প্রয়োগ করে বারবার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছে।
সাধারণ পরিষদ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে একটি নতুন সদস্য রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে, তবে তা নিরাপত্তা পরিষদ এ ব্যাপারে সুপারিশ দেওয়ার পর। আঞ্চলিক ব্লক আরব গ্রুপ মঙ্গলবার একটি বিবৃতি জারি করে ফিলিস্তিনিদের আবেদনের প্রতি তাদের ‘অটল সমর্থন’ নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিক রেজুলেশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফিলিস্তিন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের সদস্যপদ একটি ন্যায়সঙ্গত এবং সঠিক পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
সাধারণ পরিষদে ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হোক’ এই মর্মে সুপারিশ প্রদানের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য আলজেরিয়া খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে কয়েক সপ্তাহ আগে নির্ধারিত বৃহস্পতিবারের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই ভোটাভুটি হচ্ছে, বেশ কয়েকটি আরব দেশের মন্ত্রীগণ এতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনিরা ২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পেয়ে আসছে। পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য বছরের পর বছর ধরে লবিং করে আসছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ড. রিয়াদ মনসুর বলেছেন, ‘আমরা পূর্ণ সদস্য হতে চাইছি। এটা আমাদের স্বাভাবিক ও আইনগত অধিকার।’
ফিলিস্তিনিদের পক্ষে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩৭টি ইতিমধ্যেই একটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সাধারণ পরিষদে তাদের অনুরোধ সমর্থন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু জাতিসংঘের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের চাপ একটি বড় বাধার সম্মুখীন, ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে নিরাপত্তা পরিষদে সদস্যপদের সুপারিশ অবরুদ্ধ করতে পারে।
আরব গ্রুপ মঙ্গলবার বলেছে,‘আমরা নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্যকে খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাই। অন্ততপক্ষে, আমরা কাউন্সিল সদস্যদের এই জরুরি উদ্যোগে বাধা না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার বিরোধিতা করে বলেছে, তারা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে সমর্থন করে তবে তা শুধুমাত্র ইসরায়েলের সাথে আলোচনার পরে। মার্কিন আইনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছে, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ছাড়াই যদি এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে জাতিসংঘের তহবিল কমাতে হবে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এপ্রিলে সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন।
ইসরায়েলের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান ফিলিস্তিনের সদস্যপদ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছেন, এটি হবে ‘ইতিমধ্যেই গণহত্যামূলক সন্ত্রাসের বিজয়।’
হামাস পরিচালিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণে গাজায় ৩৩,০০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।
খবর : বাসস
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবরোধের ডাক দিল ইরান
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবরোধ আরোপ করতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান গতকাল ওআইসি বৈঠকে এ আহ্বান জানান।
পাশাপাশি যেসব মুসলিম দেশে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রয়েছে তাদের বহিষ্কারের দাবিও তোলেন তিনি। এ খবর দিয়েছে আরব নিউজ। খবরে জানানো হয়, সৌদি আরবের জেদ্দায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন চলমান সংঘাত নিয়ে জরুরি ওই বৈঠক ডাকে ওআইসি।
গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের একটি মিসাইল হামলায় পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পরদিনই বৈঠকে বসেন মুসলিম দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওআইসি বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলোকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ ছাড়া ইসরায়েল গাজায় যে যুদ্ধাপরাধ চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাতে ইসলামী দেশগুলোকে আইনজীবীদের একটি দল গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।
গাজার হাসপাতালে হামলার তদন্ত দাবি জাতিসংঘের
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার আল-আহলি হাসপাতালে নৃশংস বোমা হামলার ঘটনায় তদন্তের দাবি করেছে জাতিসংঘ। একইসঙ্গে গাজায় কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেদিকেও নজর রাখার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার রাতে গাজার ওই হাসপাতালে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়। আহত আরো বহুসংখ্যক। এছাড়াও আরো অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভয়াবহ ওই হামলায় শত শত বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার বিবরণ স্পষ্ট করার জন্য জাতিসংঘ তদন্তে জড়িত হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, সংঘাতের এখনও ‘শুরুর দিনগুলো’ চলছে এবং ‘তদন্তের মাধ্যমে কী করা হয় তা জাতিসংঘকে দেখতে হবে’।
তিনি আরো বলেন,“‘তবে এই বিষয়ে কিছু তদন্ত হওয়াটা অপরিহা।”
ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস ইন দ্য নেয়ার ইস্ট বা ইউএনডব্লিউআরএ গাজায় ২০১৪ সালের মতো তদন্ত করতে চায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এই বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই না। তবে ভবিষ্যতে কী হবে সে বিষয়ে আমি কোনো অনুমান করতে যাচ্ছি না।”
মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, “এখন যেটা স্পষ্ট সেটা হচ্ছে- হাসপাতালে হামলার ঘটনায় কিছু তদন্ত হওয়া দরকার এবং আমরা দেখবো সেখানে কি ব্যবস্থা আছে এবং কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি
ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ, ক্ষুব্ধ হয়ে শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তার পদত্যাগ
ইসরায়েলকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সহায়তার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। তার নাম জশ পল। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক পরিচালক।
জশ পল তার পদত্যাগপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। এতে তিনি পদত্যাগের কারণ হিসেবে ইসরায়েলকে আমেরিকার অব্যাহত প্রাণঘাতী অস্ত্র সহায়তার বিষয়ে নিজের মতবিরোধের কথা উল্লেখ করেছেন।
জশ পল বলেন, “আমি শঙ্কিত যে, বিগত কয়েক দশক ধরে আমরা একই ভুল পুনরাবৃত্তি করছি। তাই আমি আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য এটির অংশ হতে অনীহা প্রকাশ করছি।”
জশ পল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে অস্ত্র হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, “একটি পক্ষকে আরো অস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়টিকে তিনি আর সমর্থন করতে পারছেন না।”
তিনি আরো বলেন, মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা আমাদেরই দায়িত্ব, তা যেই করুক না কেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরায়েলকে ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
সূত্র: আল জাজিরা