ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধের জেরে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলো লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়া। এছাড়াও আরো দুটি লাতিন আমেরিকান দেশ পরামর্শের জন্য তেল আবিব থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতদের দেশে ডেকে পাঠিয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে বলিভিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রেডি মামানি এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, বলিভিয়া গাজায় সংঘটিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসন প্রত্যাখ্যান করছে এবং এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলি রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
দেশটির প্রেসিডেন্সি মন্ত্রী মারিয়া নেলা প্রাদা গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
একই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা গাজা উপত্যকায় হামলা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি, যা এ পর্যন্ত হাজার হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করেছে।”
এদিকে, প্রতিবেশী কলম্বিয়া এবং চিলিও গাজায় বেসামরিক মানুষ হত্যার নিন্দা জানিয়ে এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পরামর্শের জন্য তাদের রাষ্ট্রদূতদের ইসরায়েল থেকে ডেকে পাঠিয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
গাজা থেকে জিম্মিদের উদ্ধারে কমান্ডো পাঠিয়েছে আমেরিকা
চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করতে আমেরিকা রণতরী ও অস্ত্রের চালান পাঠানোর পর কমান্ডো বাহিনীও পাঠালো।
বুধবার টাইমস অব ইসরায়েল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় আটক জিম্মিদের খুঁজে বের করার প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে মার্কিন কমান্ডোরা ইসরায়েলে এসেছেন।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে একটি বিশেষ অপারেশন কনফারেন্সে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব ক্রিস্টোফার মায়ার বলেন, “আমরা সক্রিয়ভাবে ইসরায়েলিদের অনেক কিছু করতে সাহায্য করছি।”
তিনি বলেন, “মার্কিন জিম্মিসহ সব বন্দিদের উদ্ধারে ইসরায়েলকে সহায়তা করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। এটা করা সত্যিই আমাদের দায়িত্ব।”
মার্কিন কমান্ডো বাহিনীর কত সদস্য ইসরায়েলে পাঠানো হয়েছে সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি ক্রিস্টোফার মায়ার।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে ইসরায়েলে থাকা একটি দল ছাড়াও কয়েক ডজন মার্কিন কমান্ডোর বিশেষ অপারেশনস বাহিনী ইসরায়েলে পাঠানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মার্কিন স্পেশাল অপারেশনস বাহিনীকে গাজায় যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়নি, তারা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে স্থলঅভিযান পরিচালনায় কৌশলগত পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে। এছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে মার্কিনিদের সরিয়ে নেওয়া ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তার জন্যও কমান্ডোরা কাজ করবে।
নিউ নিয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিম্মিদের উদ্ধারে সহায়তা করার পাশাপাশি যুদ্ধ বিস্তৃতি হলে ইসরায়েল ও লেবানন থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য পশ্চিমা বেশ কয়েকটি দেশ গোপনে ইসরায়েলে বিশেষ বাহিনী পাঠিয়েছে।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল
আজ থেকে গাজার আহত ফিলিস্তিনিদের জন্যও খুলছে রাফাহ ক্রসিং
ইসরায়েলি বোমা হামলায় আহত ফিলিস্তিনিদের খুলে দেওয়া হচ্ছে রাফাহ ক্রসিং। এখন থেকে আহত ফিলিস্তিনিরা রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে মিশরের উত্তর সিনাই অঞ্চলে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এ তথ্য জানিয়েছেন সিনাইয়ের গভর্নর মোহামেদ শোশা।
ভাষণে মোহামেদ শোশা বলেছিলেন, আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য সিনাইয়ের উত্তরাঞ্চলীয় হাসপাতালগুলোর যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ শেষ হয়েছে।
রাফাহ ক্রসিং কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ওয়ায়েল আবু মোহসিন জানিয়েছেন, বুধবার থেকেই আহত ফিলিস্তিনিরা চিকিৎসা নিতে উত্তর সিনাইয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
মিশরের সিনাই অঞ্চল থেকে গাজা উপত্যকাকে পৃথক করা এই সীমান্তপথটি উপত্যকার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। গাজা থেকে বের হওয়ার আরো দুটি সীমান্তপথ রয়েছে, কিন্তু সেগুলো ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবং ইসরায়েলের ইচ্ছা অনুযায়ী সেগুলো খোলা বা বন্ধ থাকে।
৩৬৫ কিলোমিটার আয়তনের ভূখণ্ড গাজায় বসবাস করেন প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি। যাদের এক তৃীতিয়াংশেরও বেশি সরাসরি জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার ত্রাণ এবং আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। অপর দুই সীমান্ত প্রায় সময়েই বন্ধ থাকায় এই রাফাহ ক্রসিং দিয়েই গাজা ভূখণ্ডে প্রবেশ করে ত্রাণ। এ কারণে এই ক্রসিংটি গাজার ফিলিস্তিনিদের ‘লাইফ লাইন’ নামেও পরিচিত।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওই দিন থেকেই সেখানে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী।
ইসরায়েলি বিমান বাহিনী অভিযান শুরুর পর ৯ অক্টোবর সীমান্তে গোলা বর্ষণের কারণে রাফাহ ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছিল মিশর। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মধ্যস্থতায় গত ২১ অক্টোবর তা খুলে দেওয়া হয়। তবে মিসরের পক্ষ থেকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল— এই সীমান্ত পথ দিয়ে কেবল ত্রাণবাহী ট্রাক গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে পারবে এবং ফিলিস্তিন থেকে কোনো ব্যক্তিকে এই সীমান্ত দিয়ে মিশরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বোমা হামলায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৮ হাজার ৫২৫ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে অন্তত ২১ হাজার ৫৪৩ জন।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি
হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করতে চান বাইডেন!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হামাসকে অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে হবে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের একটি পথও খুঁজে বের করতে হবে।
সিবিএস ৬০ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাইডেন ইরান ও হিজবুল্লাহকেও এ সংঘাতে না জড়ানোর ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এছাড়াও মার্কিন জিম্মিদের জীবিত উদ্ধারে সম্ভাব্য সব পথ অবলম্বন করার হুংকারও দিয়েছেন বাইডেন।
বাইডেন বলেছেন, ‘আমি বিস্তারিত আলাপে যাচ্ছি না। তবে আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।’
রবিবার সকালের দিকে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ৩০ মার্কিন নাগরিকের প্রাণ গছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে ১৩ জন মার্কিনি। ধারণা করা হচ্ছে তারা হামাসের কাছে বন্দী।
‘নির্মমতায়’ জড়িত সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার ঘোষণাও দিয়েছেন বাইডেন।
সূত্র: বিবিসি
হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের মোট ২৯১ সেনা নিহত
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর হামাস হামলা করার পর এখন পর্যন্ত তাদের ২৯১ জন সেনা নিহত হয়েছে। এই সংখ্যাসহ ইসরায়েলে নিহতের মোট সংখ্যা ১৪০০ এর বেশি।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাতের দশম দিনে এসে দুই পক্ষে নিহতের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস সদস্যদের বিরুদ্ধে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল ও নৌ হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে গাজা সীমান্তে কয়েক লাখ সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে তারা।
আল-জাজিরার সংগ্রহ করা সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, সংঘাত শুরুর পর গাজা উপত্যকায় নিহত ২৬৭০ আহত ৯ হাজার ৬০০। দখলকৃত পশ্চিমতীরে নিহত ৫৭ জন আহত ১২০০। ইসরায়েলে নিহত ১৪০০ আহত ৩৫০০ এর অধিক
হামাসের হাতে বন্দী ১৫০, জানাল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের কাছে ১৫০ জন বন্দী আছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। গত ৮ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক
নজিরবিহীন হামলার পর তাদেরকে আটক করে নিয়ে যায় হামাস।
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে গত সপ্তাহে ব্যাপক হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, হামাসের হাতে আটক ১৫৫ বন্দীর’ পরিবারের সঙ্গে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছে। এর আগে দেওয়া পরিসংখ্যানে হামাসের হাতে আটক বন্দীর সংখ্যা ১২৬ জন বলে জানানো হয়েছিল।
রবিবার যুদ্ধের সম্মুখভাগ পরিদর্শনে যান আইডিএফপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেরজি হালেভি। তিনি বলেন, খুব শিগগির গাজায় প্রবেশ করবে ইসরায়েলি সেনারা এবং হামাসকে ধ্বংস করবেন তারা।
জেনারেল হালেভি সেনাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো এখন গাজায় প্রবেশ করা। সেখানে যাওয়া যেখানে হামাস প্রস্তুতি নিচ্ছে, কাজ করছে, পরিকল্পনা করছে এবং রকেট ছুড়ছে। তাদের সব দিক দিয়ে হামলা করুন, প্রত্যেক কমান্ডার, প্রত্যেক সদস্য এবং সবাইকে ধ্বংস করুন।