বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর বৃহত্তম জোট ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) গাজায় সামরিক সংঘাত বৃদ্ধি ও নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করতে জরুরি সভা আহ্বান করেছে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বুধবার সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকের জন্য সদস্য দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
শনিবার এক বিবৃতিতে এ আমন্ত্রণ জানায় সংস্থাটি। বর্তমানে ওআইসির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে সৌদি আরব। ওআইসির বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গাজার ক্রমবর্ধমান সামরিক পরিস্থিতি এবং সেইসঙ্গে অবনতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটি মন্ত্রী পর্যায়ে একটি জরুরী ওপেন-এন্ডেড বিশেষ সভার আহ্বান করেছে। বেসামরিক নাগরিকদের জীবন এবং এই অঞ্চলের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হবে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ওআইসির জরুরি বৈঠকের ডাক এমন এক দিনে এসেছে যখন সৌদি আরব ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা স্থগিত করেছে।
ফিলিস্তিনিরা কখনও গাজা ছেড়ে যাবে না : হামাস প্রধান
হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষ কখনো গাজা ছেড়ে যাবে না। গাজার বাসিন্দারা তাদের ভূমিতেই রয়েছে।
শনিবার এক বক্তৃতায় হামাস প্রধান এ সব কথা বলেন। হামাস প্রধান আরও বলেন, ফিলিস্তিনিরা কখনো গাজা ছাড়বে না অথবা পালিয়ে যাবে না। যেসব ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের বর্বর অত্যাচারের মুখোমুখি হচ্ছেন তাদের আমি স্যালুট জানাই। তারা তাদের ভূখণ্ড রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
ইসমাইল হানিয়া বলেন, ইহুদিবাদীরা যত কিছুই করুক হামাস বেসামরিকদের ওপর হামলা না চালাতে সব সময় বদ্ধপরিকর ছিল। হামাস একটি স্বাধীনতাকামী দল, যেটি সবসময় এই নীতিগুলো মেনে চলে। এ সময় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ানদের সহায়তায় ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে।
গাজায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের সমালোচনা করেছেন হানিয়া। তিনি জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিতে তিনি যেন ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন।
গাজা নিয়ে ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি ইরানের
ইসরায়েল গাজায় হামলা বন্ধ না করলে ‘সুদূরপ্রসারী পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি মিশন।
শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলি বর্ণবাদ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং সুদূরপ্রসারী পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
এর আগে শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানির সঙ্গে এক বৈঠকে একই ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করেন।
আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেন, ইহুদিবাদী সরকার প্রতিদিন শত শত ফিলিস্তিনিকে শহীদ করছে। এই যুদ্ধাপরাধ, গাজায় মানব অবরোধ এবং পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, খাদ্য ও ওষুধ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণ ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধ অব্যাহত থাকলে এ অঞ্চলের পরিস্থিতি যে একই থাকবে তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। সূত্র : সিএনএন
ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ আখ্যায়িত ইরানের
ইরান ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস লক্ষ্য অর্জনে একে অপরকে ‘সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে’ একমত হয়েছে।
গতকাল শনিবার হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং এর পরই এই বার্তা দেওয়া হয়।
বৈঠকে ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলা নিয়েও আলোচনা করা হয়। তখন এই হামলাকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ বলেও আখ্যায়িত করেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আজ রবিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহ শনিবার কাতারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে দেখা করেছেন।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, কাতারে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে তারা ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর মারাত্মক হামলা নিয়ে আলোচনা করেন এবং ‘হামাসের লক্ষ্য অর্জনে তারা সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে’ সম্মত হয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে ওই অভিযান পরিচালনা করে এবং এতে অন্তত ১,৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে চালানো বৃহত্তম এই অভিযান তেল আবিব ও তার পৃষ্ঠপোষকদের সব হিসাব-নিকাষ পাল্টে দিয়েছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের প্রক্রিয়া স্থগিত করল সৌদি
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের তীব্র যুদ্ধ চলছে। এর প্রভাব পড়েছে সৌদি-ইসরায়েল আলোচনায়। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে সম্ভাব্য আলোচনা স্থগিত করেছে সৌদি আরব। গতকাল সৌদি-ইসরায়েল আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
৭ অক্টোবর ভোরের দিকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ হামলা চালায় গাজার ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী হামাস। এখনো তারা স্বল্প পরিসরে রকেট হামলা চালাচ্ছে। এর জবাবে গাজা উপত্যকায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। দিনদিন সেই হামলা জোরালো হচ্ছে। উভয়পক্ষের চলমান এ হামলা-পাল্টা হামলার এক সপ্তাহ গতকাল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৭২৪ শিশুসহ ২ হাজার ২১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৭১৪ জন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ৩০০ জন নিহত হয়েছেন।
আহত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার। সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মার্কিন কর্মকর্তাদের অবগত করেছে দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব কখনোই ইসরায়লকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে সম্পাদিত তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তিতেও অংশ নেয়নি সৌদি আরব।
যদিও ওই চুক্তির পর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে উপসাগরীয় অঞ্চলের বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মরক্কো। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকে একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে কয়েক মাস ধরে সৌদি আরবকে চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে নিজেদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি হাতে নেওয়ার শর্ত দিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। গত মাসে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুবরাজ মোহাম্মদ সালমান বলেছিলেন, আমরা একটি চুক্তির কাছাকাছি যাচ্ছি। তবে ফিলিস্তিন ইস্যু রিয়াদের জন্য ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলেও জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সেই অংশটির সমাধান করতে হবে। আমাদের ফিলিস্তিনিদের জীবন সহজ করতে হবে।’ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল সফর শেষে গতকাল সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে রিয়াদ সফর করছেন। তার এ সফরের সময় ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিকের আলোচনা স্থগিতের খবর এলো।