ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে সংঘাত ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কান বুধবার (১১ অক্টোবর) মধ্যরাতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার ইসরায়েলের আর্মি রেডিও জানিয়েছিল, গত শনিবার থেকে হামাস প্রাণঘাতি ও রক্তক্ষয়ী হামলা চালানো শুরুর পর ১ হাজারের বেশি ইসরায়েলির মৃত্যু হয়েছে।
কোনো পূর্ব সতর্কতা ও হুমকি-ধামকি ছাড়াই হঠাৎ করে শনিবার সীমান্ত প্রাচীর ভেঙে ইসরায়েলের ভেতর ঢুকে পড়েন হামাসের ১ হাজার যোদ্ধা। তারা সেখানে প্রবেশ করেই গুলি চালানো শুরু করেন। এছাড়া হামাসের যোদ্ধারা অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ইসরায়েলিদের বাড়িতে গিয়েও হামলা চালান।
অপরদিকে হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে শনিবার থেকেই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েল। আর তাদের এসব হামলায় গাজায় প্রায় ৯০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার ফল ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ: পুতিন
ইসরাইল- হামাস যুদ্ধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি সর্বশেষ ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের বিষয়ে প্রথম কোনো মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রকে নিশানা করেছেন। এই যুদ্ধকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার ফল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সফররত ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-সুদানির সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে পুতিন বলেন, অনেকে আমার সঙ্গে একমত হবেন যে, এটি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির ব্যর্থতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতাকে একচেটিয়া করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন সমঝোতা ইচ্ছাই তাদের নেই। বরং, বিপরীতে এই কাজে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছে।
একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনাকারী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবগুলো উপেক্ষা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি জনগণের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করে পুতিন বলেন।
মিশরের গোপন তথ্য ফাঁস, ইসরায়েলে তোপের মুখে নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের নজিরবিহীন যুদ্ধ চলছে। এরই মধ্যে বুধবার পঞ্চম দিনে প্রবেশ করেছে এই যুদ্ধ। বিগত চার দিনের সংঘাতে বহু সংখ্যক প্রাণহানি ঘটেছে উভয় দেশেই। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনে প্রাণ গেছে ৯০০ জনের।
এদিকে, গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের আকস্মিক হামলায় এখনো ঘোরের মধ্যে আছেন ইসরায়েলিরা। হঠাৎ করে কীভাবে কী হয়ে গেল বুঝে উঠতেই কষ্ট হচ্ছে তাদের।
হামাসের হামলার ব্যাপকতা যে কতটা বিস্তৃত ছিল, এখন সেটিই ধীরে ধীরে প্রকাশ হচ্ছে, সঙ্গে বাড়ছে ইসরায়েলিদের ক্ষোভ। অনেক ইসরায়েলি মনে করছেন, তারা নিজ সরকারের দ্বারাই ধোঁকার শিকার হয়েছেন। কারণ সরকার তাদের একাধিকবার আশ্বস্ত করেছে— গাজা থেকে হামলার কোনো হুমকি নেই।
এরমধ্যে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিবেদনে দাবি করেছে, হামাস গত শনিবার ভোরে ভয়াবহ এ হামলা চালানোর আগে— এ ব্যাপারে কিছু তথ্য জানতে পেরেছিল মিশর। আর সেসব তথ্য তারা ইসরায়েলকে জানিয়েছিল এবং সতর্ক হওয়ার জন্য বলেছিল। মিশর বলেছিল, “গাজায় বড় কোনো কিছু হতে পারে।”
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার সেগুলো আমলে নেয়নি। যদিও নেতানিয়াহু মিশরের তথ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তবে মিশরের দেওয়া ওই সতর্কতার আরো কিছু গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে। নতুন তথ্য ফাঁস হওয়ার পর আরো ক্ষুব্ধ হয়েছেন ইসরায়েলিরা। তারা এখন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সাংবাদিক হুদা আব্দেল হামিদ পূর্ব জেরুজালেম থেকে জানিয়েছেন, এই ইস্যুটা কত দূর যাবে সেটি নিশ্চিত নয়। তবে যুদ্ধের মধ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ঐক্য সরকার গঠনের জন্য নেতানিয়াহুর উপর বিষয়টি চাপ ফেলেছে। কারণ এখন তাকে দেখাতে হবে, এই যুদ্ধের মধ্যে তিনি একটি ঐক্য সরকারকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, একটি ঐক্যবদ্ধ দেশকে গাজার বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।