বর্তমানে বিশ্বজুড়ে চলছে এআই উন্মাদনা, সেই সঙ্গে রয়েছে ডিপফেইক ছবির ছড়াছড়ি। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ছবিকে প্রচলিত ভাষায় বলা হয়, ‘ডিপফেইক’। বর্তমানে অনেকেই অনলাইনে দেখা যে কোনো ছবি আর আগের মতো বিশ্বাস করতে পারেন না, কারণ বিভিন্ন এআই এডিটিং টুলের মাধ্যমে এমন ছবি তৈরি সম্ভব যা দেখতে একেবারেই বাস্তবের মত।
এখন তো বিভিন্ন স্মার্টফোনে সরাসরিই এআই এডিটিং ফিচার চলে আসছে, যেমন পিক্সেল ৯-এ গুগলের ‘অ্যাড মি’ ফিচার। এ ফিচারের মাধ্যমে যে ছবি তুলছেন, তাকেই ছবিতে আনা যায় এআই কারিশমা। এরই মধ্যে এসে যোগ হয়েছে ছবি তৈরির একটি প্ল্যাটফর্ম, মিডজার্নি। যা ডিপফেইক তৈরি একেবারেই সহজ করে তুলেছে। এ অবস্থায় কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ছবি শনাক্ত করবেন? এ নিয়ে একটি নির্দেশনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর বিস্তারিত-
ছবিটি জুম ইন করে দেখুন
অনেক বেশি এডিট করা ছবি নাকি এআইয়ের তৈরি ছবি সেটি বোঝার কিছু সহজ লক্ষণ রয়েছে, যা বেশিরভাগ ডিপফেইক ছবিতেই দেখা যায়। ছবিতে থাকা মানুষের চোখ, মুখের প্রান্তের দিকে যদি জুম করেন, অনেক ক্ষেত্রে কিছু অসঙ্গতি বা অস্পষ্টতা দেখতে পারেন যা সাধারণত এআই ছবির লক্ষণ। এআইয়ের তৈরি ছবির বেলায় অন্যতম সমস্যার জায়গা হল হাত ও আঙুল, তাই সেখানে জুম করলে অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করতে পারেন। এ ছাড়া, মুখ প্রতিস্থাপন করা হলে প্রায় পুরো মুখের চারপাশ হালকা ঝাপসা দেখতে পারেন। ভিডিওর বেলায় কথার সঙ্গে ঠোঁটগুলো ঠিকমত নাও মিলতে পারে।
আবেগের কথা ভাবুন
মানুষের জটিল সব আবেগের প্রকাশ নিয়ে বিভিন্ন ডেপফেইক প্রোগ্রাম ও ফেইস সোয়াপ অ্যাপ সমস্যায় পড়তে পারে। আসল মুখের অভিব্যক্তি অবিশ্বাস্যভাবে সুনির্দিষ্ট ও জটিল হয়ে থাকে, যা হুবহু তুলে ধরা যে কোনোভাবেই বেশ কঠিন। ফলে কেউ যদি হাসির দিকে তাকান যা একটু বেশিই অনমনীয় বলে মনে হয়, বা চেহারায় হাসি থাকলেও মুখ ও চোখ অবিশ্বাস্যভাবে মলিন মনে হয়, তবে এটি এআইয়ের তৈরি ছবি শনাক্তের আরেক সূত্র হতে পারে।
পুরো ছবির দিকে তাকান
এটি বোঝা কিছুটা কঠিন মনে হতে পারে, বেশিরভাগ এআই জেনারেটর এখনও এমন ছবি তৈরি করতে পারে না, যা পুরোপুরিই আসলের মতো দেখায়, কারণ সেটি করতে গেলে এগুলো খুবই নিখুঁত হতে হবে। অর্থাৎ একটি গ্রুপ ছবির কথাই চিন্তা করুন, এমন হতে পারে সেখানে সবার মুখে সমান আলো রয়েছে, তেমন অস্পষ্ট ছায়া বা পার্থক্য ছাড়াই। এতে ছবির লোকজন প্লাস্টিকের তৈরি বলে মনে হতে পারে, যা দেখে কিছুটা আঁচ করতে পারেন এটি আসল না নকল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি একক পিক্সেলের কোনো ত্রুটি ধরতে পারা বেশ কঠিন হলেও কারও কোনো ছবি নিয়ে এমন সংশয় থাকলে ছবিটি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা উচিত।
ব্যাকগ্রাউন্ড এড়িয়ে যাবেন না
মানুষ রয়েছে এমন ছবিতে অনেকেই কেবল মানুষের চেহারা, চুল বা হাতের দিকে তাকিয়েই আসল নকল বোঝার চেষ্টা করতে পারেন। তবে, অনেক সময়ই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে স্পষ্টভাবেই গরমিল থাকতে পারে। এআইয়ের তৈরি ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে এমন সব স্থাপত্য বা বস্তু থাকতে পারে যার কোন অর্থই নেই।
ছবির আসল প্রেক্ষাপট খুঁজুন
এ কৌশলটি ছবির চুলচেরা বিশ্লেষণের বদলে কেবল সাধারণ একটি ওয়েব সার্চের কথা মনে করিয়ে দেয়। যে কোনো ছবির কনটেন্ট কতটা সত্য তা জানতে ওয়েব সার্চ করা তেমন কঠিন কিছু নয়। এটি বিশেষভাবে কাজে আসে যদি ছবিটি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা কোনো জনপ্রিয় ব্যক্তির হয়। এর কারণ, একটি নির্দিষ্ট তারিখ বা সময়ে তারা কোথায় ছিলেন তা খুঁজে পাওয়া বেশ সহজ হতে পারে। কপাল ভালো থাকলে ওই ছবিটি নিয়েই অনলাইনে কোনো প্রতিবেদন পেয়ে যেতে পারেন।
হ্যাকারদের নকল লিংক চেনার উপায়
না বুঝে প্রায়ই হ্যাকারদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকে। হ্যাকাররা বিভিন্নভাবে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফিশিং। বিভিন্ন ব্যাংক, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, জি-মেইল, বিভিন্ন সংস্থার লগইন পেইজের মতো ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ব্যবহারকারীদের কাছে মেসেজ পাঠায়। সেসব ওয়েবসাইটে ঢুকলেই ব্যবহারকারীর মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে ম্যাওয়্যার ঢুকে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে সেসব ডিভাইসের অ্যাক্সেস পেয়ে যাচ্ছে হ্যাকাররা।
অনেক সময় হয়তো খেয়াল করেছেন নামিদামি কোনো সংস্থা, ব্র্যান্ড বা সাইট থেকে আপনার কাছে মেসেজ বা ই-মেইল আসছে। বিভিন্ন অফারের কথা জানানো হচ্ছে এবং সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কিংবা সেখানে জয়েন হতে লিংকে প্রবেশ করার জন্য অনুরোধ করছে। আপনার কাছে এটি আসল মনে হলেও আসলে এগুলো হ্যাকারদের প্রতারণার ফাঁদ। সাধারণভাবে এসব ওয়েবসাইট দেখতে একেবারে আসল ওয়েবসাইটের মতোই। তবে খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করলে আসল নকল চিনতে পারবেন।
যেই ই-মেইল অ্যাড্রেস থেকে এসেছে সেই ই-মেইল বা মেসেজ এসেছে সেটিকে যাচাই করুন। ওয়েবসাইটের ডোমেইন চেক করুন। ভালোভাবে খেয়াল করুন সেই ওয়েবসাইটের ইউআরএলটিতে এইচটিটিপি আছে কি না। সেই সঙ্গে ইউআরএলের বানান ঠিক আছে কি না। ভুয়া বা নকল ওয়েবসাইটের ইউআরএলে সাধারণত এই ভুলগুলো থাকে।
ভুয়া বা ভুল তথ্য শনাক্তকরণের জন্য প্রথমেই দেখবেন, হোয়াটসঅ্যাপে, ফেসবুকে বা যে কোনো সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা মেসেজটির পাশে ‘ফরওয়ার্ড’র চিহ্নটি আছে কি না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়া মেসেজগুলো ফরওয়ার্ড হয়ে বিভিন্ন মানুষের মেসেজে আসে।
ফরোয়ার্ড করা মেসেজগুলো যিনি সেন্ড করেন, তিনি কিন্তু লিখেন না। ওই ব্যক্তিও হয়তো অন্য কারও কাছ থেকে ফরওয়ার্ডকৃত মেসেজটি পেয়েছেন। পরবর্তীতে হয়তো তিনি মেসেজটি আপনাকে পাঠিয়েছেন। তাই পরিচিতজনের কাছ থেকেও যদি এমন ফরওয়ার্ডকৃত মেসেজ পেয়ে থাকেন, তবে তার সত্যতা জানুন আগে।
অনেক সময় ভুয়া মেসেজগুলোতে দেখবেন, বানান ভুল বা অনেক অক্ষর থাকতে পারে। যেগুলো কোনো অর্থ প্রকাশ করে না ঠিকই, কিন্তু ওই লেখাগুলো হাইপারলিংক করা থাকায় ট্যাপ করলেই আপনি অন্য একটি পেজে ঢুকে যাবেন। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেখানে একটি ফরমে আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট কার্ডের নম্বর বা পাসপোর্টের নম্বর চাইতে পারে। ভুলেও এসব তথ্য কোনো পেজে যুক্ত করবেন না। এগুলো হ্যাকারদের কাজ।