সর্বনাশা ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড মরক্কো। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এই খবর প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন দু’হাজারের বেশি মানুষ। দক্ষিণ মারাকেশ এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্য়ু হয়েছে। উত্তর আফ্রিকার দেশটির এই এলাকা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, মত বিশেষজ্ঞদের।
রবিবার সকালে মরক্কোর অন্তর্দেশীয় মন্ত্রণালয়ের তরফে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ২ হাজার ৫৯। এদের মধ্যে ১ হাজার ৪০৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ভূমিকম্পে দেশের একটি বড় অংশ তছনছ হয়ে যাওয়ায় তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মহামেদ। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনীকে নামানো হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও অনেকে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মরক্কোর মারাকেশ এলাকা পর্যটনের জন্য বিখ্যাত। গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই সেখানকার দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকা কেঁপে ওঠে। রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৮। উল্লেখ্য, রাবাত, ক্যাসাব্লাঙ্কা, এসাউরা-র মতো উপকূলবর্তী শহরগুলিতেও কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের ১৯ মিনিটের মধ্যেই শুরু হয় আফটার শক। রিখটার স্কেলে সেই কম্পনের তীব্রতার ছিল ৪.৯।
মরক্কোর মারাকেশে রয়েছে একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপত্য। ভূমিকম্পে ঐতিহ্যবাহী মদিনা-র মারাত্মক ক্ষতি হয়। এছাড়াও পুরোপুরি ধূলোয় মিশে গিয়েছে কুতুবিয়া মসজিদের মিনার। প্রতি বছর এই মসজিদ দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ মরক্কোর মারাকেশে ভিড় জমান। বর্তমানে সেখানবার অধিকাংশ বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যম BBC-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মারাকেশ, আল-হাউজ, উয়ারজাজেট, আজিলাল, চিচাওয়া ও তারউদান্তের পুর এলাকায় থেকে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছে। সূত্রের খবর, এখনও অ্যাটলাস পাহাড়ের দুর্গম গ্রামগুলিতে উদ্ধারকারী দল পৌঁছতে পারেনি। যা মরক্কো প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়েছে।
শনিবার ভূমিকম্পের খবর আসতেই শোকপ্রকাশ করেন আমেরিকা, রাশিয়া ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রপ্রধানরা।
প্রসঙ্গত, আফ্রিকা ও ইউরেশিয়ান প্লেটের মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত মরক্কোর এই এলাকা ভূমিকম্প প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত। ২০০৪-এ মরক্কোর আল হোসিমা এলাকায় ভূমিকম্প হয়। তাতে প্রাণ হারান ৬২৮ জন। সেই ঘটনার ১৯ বছর পর ফের ভয়াবহ ভূমিকম্প হল উত্তর আফ্রিকার এই দেশে।