মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ড. মাহাথিরের আমন্ত্রণে কুয়ালালামপুরে তার কার্যালয়ে গত ২৮ মার্চ প্রফেসর ইউনূস এ বৈঠকে যোগ দেন।
ড. মাহাথির ও তার স্ত্রী ড. সিতি হাসমা উভয়েই প্রফেসর ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা কার্যক্রমের অনুরাগী। ৯০ মিনিট ব্যাপী এই বৈঠকে ড. মাহাথির জানতে চান তরুণদেরকে উদ্যোক্তায় পরিণত করতে এবং একটি “তিন শূন্য”-র পৃথিবী সৃষ্টিতে প্রফেসর ইউনূসের আন্দোলনে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উৎসাহী ভূমিকা পালন করছে কিনা।
এ ছাড়াও তারা ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং এই পরিস্থিতি একটি বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়ার বিপদ নিয়েও আলোচনা করেন। তারা বিশ্বব্যাপী তরুণদেরকে কীভাবে সকল ধরনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে চালিত করা যায় এবং যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে আলোচনায় বসতে সকল পক্ষের উপর কীভাবে চাপ সৃষ্টি করা যায় তা নিয়েও আলোচনা করেন।
ড. সিতি হাসমা মালয়েশিয়ায় প্রয়োগের উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্রঋণের ওপর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে তার কয়েকবার বাংলাদেশ সফরের স্মৃতিচারণ করেন। ড. মাহাথির মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিষ্ঠিত ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টারসমূহের বিভিন্ন কর্মসূচির অগ্রগতি বিষয়ে তাকে নিয়মিত অবহিত করতে প্রফেসর ইউনূসকে অনুরোধ করেন।
ইউনূস সেন্টারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরও জানানো হয়, ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী ড. নোরাইনি আহমদ প্রফেসর ইউনূসের সম্মানে একটি নৈশভোজের আয়োজন করেন।
প্রফেসর ইউনূসের বক্তব্য শোনার জন্য তিনি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের এই নৈশভোজে উপস্থিত রাখেন।
মন্ত্রী ছাত্রদেরকে উদ্যোক্তায় পরিণত করতে উচ্চশিক্ষাকে কীভাবে পুনর্গঠিত করা যায় তা নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের পরামর্শ চান।
প্রফেসর ইউনূস সামাজিক ব্যবসা ভেঞ্চার ক্যাপিটেল ফান্ড গঠনের মাধ্যমে কীভাবে তরুণদেরকে উদ্যোক্তায় রূপান্তরিত করা যায় সে ব্যাপারে তার বক্তব্য এবং অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। মন্ত্রী মালয়েশিয়ার একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি চালু করার জন্য প্রফেসর ইউনূসের নিকট সক্রিয় সহযোগিতা চান। প্রফেসর ইউনূস তাকে এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো রকম সরকারি অর্থ বরাদ্দ না রাখার ব্যাপারে প্রফেসর ইউনূস পরামর্শ দেন। তিনি অভিমত প্রকাশ করেন যে সরকারি অর্থ পুঁজি হিসেবে দিলে এই অর্থ কোনোদিন ফেরত পাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে একটি বিজনেস প্ল্যান তৈরির জন্য উভয় পক্ষ সম্মত হয়।
ওদিকে, ব্যাংক মুয়ামালাত মালয়েশিয়া বেরহাদ-এর চেয়ারম্যান দাতুক সেরি তাজুদ্দিন আতান ও প্রফেসর ইউনূসের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চেয়ারম্যান তার পুরো ব্যাংকটিকে সামাজিক ব্যবসা ব্যাংকে রূপান্তরিত করার একটি প্রস্তাব প্রফেসর ইউনূসের নিকট তুলে ধরেন।
প্রফেসর ইউনূস এ বিষয়ে সার্বিক নির্দেশনা দিতে সম্মত হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সার্বিক ভাবে প্রস্তুত আছেন বলে মি. আতান প্রফেসর ইউনূসকে জানান। এ বিষয়ে তিনি প্রফেসর ইউনূসের সম্মতি চান। তিনি জানান যে, তার এই অনুরোধের পেছনে তার বিনিয়োগকারীগণ ও পরিচালনা পরিষদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। প্রফেসর ইউনূস ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের এই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি তাদের এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি এই উত্তরণের কাজটি শুরু ও তার ব্যবস্থাপনার মূল প্রক্রিয়াটি নিয়ে আলোচনা করেন। মি. আতান বলেন যে, তিনি প্রফেসর ইউনূসের নির্দেশনা পেলে এই রূপান্তরের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করবেন। প্রফেসর ইউনূস এ বিষয়ে আরও গভীরভাবে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য মি. আতানের সঙ্গে আলাপ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এই আলোচনাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য বাংলাদেশে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাবার অনুমতি চান ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মি. আতান।
ব্যাংকের চিফ স্ট্র্যাটেটি অফিসার মি. ফাওরুজ রাডি যিনি পুরো আলোচনাকালে মি. আতানের সঙ্গে ছিলেন, তাকে এই প্রক্রিয়াকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
আপনার মন্তব্য লিখুন