ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ইতোমধ্যে ছয় দফায় ৪৮৬ আসনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সপ্তম ও শেষ দফায় আগামী ১ জুন ভোট গ্রহণ হবে ৫৭টি লোকসভা আসনে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ৯টি আসন। গণনা আগামী ৪ জুন।
ফল ঘোষণার ঠিক তিন দিন আগে অর্থাৎ শেষ দফায় ভোটের দিনই সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে বিরোধী দলের জোট ইন্ডিয়া। ১ জুন এই বৈঠক হবে দিল্লিতে। ইতোমধ্যেই বিরোধীদলের সমস্ত শরিক দলগুলিকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। চলমান নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোট ভালো ফল করলে সেক্ষেত্রে জোটের ভূমিকা কি হবে, রণনীতি কি হবে- সে সব বিষয় নিয়ে মূলত আলোচনা হতে পারে।
গত শনিবার ষষ্ঠ দফার ভোট শেষে কংগ্রেসের দাবি, এই নির্বাচনে ইতোমধ্যেই ইন্ডিয়া জোট ম্যাজিক ফিগার ২৭২ এর লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে, সবমিলিয়ে তারা ৩৫০ আসনে জয় পেতে পারে। কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয় রাম রমেশও দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন দলের ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট’ (এনডিএ)কে সরিয়ে এবার সরকার গঠন করতে চলেছে ইন্ডিয়া জোট।
কিন্তু আমন্ত্রণ পেলেও ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে হাজির থাকছেন না জোটের অন্যতম শরিক দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি। সোমবার কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থনে বড় বাজারে একটি নির্বাচনের সভায় উপস্থিত ছিলেন মমতা। সেই সভা থেকেই জোটের বৈঠকে যোগ না দেওয়ার বিষয়টি জানান। মমতা বলেন, ইন্ডিয়া জোট ১ জুন বৈঠক ডেকেছে। আমি বলেছি ১ তারিখ আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এখানে ৯টা আসনে ভোট রয়েছে। ওইদিন পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, বিহারসহ অনেক রাজ্যেও ভোট রয়েছে। আর ভোটের দিন ৬ টার সময় ভোট শেষ হলেও লাইনে অনেক লোক থাকার কারণে কোথাও কোথাও ভোট শেষ হতে রাত ১০টা বেজে যায়। সেক্ষেত্রে আমি কীভাবে যাব? একদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল, ত্রাণ শিবির, অন্যদিকে নির্বাচন- সব কিছুই করতে হবে। কিন্তু আমার প্রথম অগ্রাধিকার ত্রাণ শিবির। ওদের দেখা, ওদেরকে ঘর বানিয়ে দেওয়া, ওদের পাশে দাঁড়ানো, সহায়তা করা। আমি এখন হয়তো নির্বাচনী প্রচারণা করছি, কিন্তু আমার মন পড়ে রয়েছে ত্রাণ শিবিরের দিকে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সরকারকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনতে অগ্রণী ভূমিকা ছিল মমতা। বিরোধীদলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র নামকরণ মমতারই মস্তিষ্ক প্রসূত। প্রায় ২৮টি দলের অন্তর্ভুক্তি রয়েছে এই জোটে।
কিন্তু সম্প্রতি নির্বাচনী প্রচারণা থেকে মমতা ঘোষণা দেন, এবারের নির্বাচনে এই জোটই ক্ষমতায় আসছে। তবে সেই মন্ত্রিসভায় যোগ না দিয়ে বাইরে থেকে তার দল সমর্থন জানাবে। মমতাকে এই মন্তব্যকে ঘিরে সে সময় নানা রকম জল্পনা ছড়িয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করে কংগ্রেস, সিপিআইএমসহ জোটের অন্যতম শরিক দলগুলিকেও খোঁচা মারতে দেখা গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে এবার জোটের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার কথা জানালেন মমতা। স্বাভাবিকভাবেই ফের একবার মমতার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা!
বিজেপির বিরুদ্ধে ২৬ দলের বৃহৎ নির্বাচনী জোট ‘ইন্ডিয়া’
২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে ২৬টি বিরোধী দল গতকাল নির্বাচনী জোট করেছে। জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ অর্থাৎ ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’। নতুন জোট করার জন্য কংগ্রেস এবং অবিজেপি দলগুলো কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু শহরে সোমবার বৈঠক শুরু করে। বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে তারা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়।
বৈঠক শেষে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘আমি খুশি যে বেঙ্গালুরুতে ২৬টি দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য উপস্থিত রয়েছে। বৈঠকের উদ্দেশ্য নিজেদের জন্য ক্ষমতা অর্জন করা নয়। দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার রক্ষার জন্যই এ বৈঠক। দেশের স্বার্থে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা খুব জরুরি। আসুন আমরা সবাই ভারতকে প্রগতি, কল্যাণ ও প্রকৃত গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে নেওয়ার সংকল্প করি।’
বিরোধী জোটের নেতৃত্ব কে দেবেন বা ইন্ডিয়ার নতুন মুখ কে হবেন, এ ব্যাপারে খাড়গে জানান, ‘একটি কোঅর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বিরোধী দলগুলোর এ মহাজোটের কাজকর্ম করার জন্য দিল্লিতে একটি অফিস করা হবে।’
মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ১১টি রাজ্যে ক্ষমতায় আছি। আর বিজেপি নিজে থেকে ৩০৩টি আসন পায়নি। তার শরিক দলগুলোর ভোট ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসেছে এবং তারপর তাদের পরিত্যাগ করেছে। বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা এবং তাঁদের নেতারা তাঁদের পুরনো শরিক দলগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে রাজ্যে রাজ্যে ছুটছেন। আসলে আমাদের আজকের বৈঠকের ঐক্য দেখে তারা ভীত যে আগামী বছর তাদের পরাজয় ঘটবে।’
খাড়গের অভিযোগ : ‘সরকারি প্রতিটি এজেন্সিকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করা হচ্ছে।’ মুম্বাইতে বিরোধী দলের পরবর্তী বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি। যদিও দিনক্ষণ এখনো স্থির হয়নি। দুই দিনের এ কনক্লেভে সোমবার ছিল নৈশভোজ ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক। গতকাল হয়েছে মূল বৈঠক। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে, আরজেডি, জেডিইউ, ন্যাশনাল কনফারেন্স পার্টি, পিডিপি, সমাজবাদী পার্টি, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা, এনসিপি, সিপিআইএম, শিবসেনাসহ ২৬টি বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা।
এদিনের বৈঠক থেকে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে আক্রমণ করে একাধিক দলের নেতারা বলেন, তাঁদের উদ্দেশ্য একটাই- দেশ, গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষা করা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী জানান, ‘আমাদের আজকের আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ এবং সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।’ জোটের নতুন নামকরণ নিয়ে রাহুল জানান, ‘এটি ইন্ডিয়া এবং বিজেপি, ইন্ডিয়া এবং নরেন্দ্র মোদির মধ্যে লড়াই। ভারত একত্র হবে ইন্ডিয়া জিতবে।’ তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘এ বৈঠক অত্যন্ত ভালো ও ফলপ্রসূ হয়েছে।