আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।
কাজী নজরুল ইসলাম চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী কিন্তু তাঁর প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ পৃথিবীতে এমন কয়জন আছেন যিনি প্রেমের টানে রক্তের সর্ম্পককে অস্বীকার করে পথে বেরিয়ে পড়তে পারেন?
কাজী নজরুল ইসলাম চির প্রেমের কবি, আবার বিদ্রোহী কবিও। বাংলা কবিতায় নজরুলের আর্বিভাব একেবারেই উল্কার মতো। ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির’ অথবা মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,/ অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-’। এমন উচ্চারণে তিনি নিজেকে একটু আলাদাভাবেই চিনিয়েছিলেন।
তিনি যেমন ছিলেন নির্ভিক, তেমনি রোমান্টিক। রোমান্টিকতার আতিশয্য ও অভিমানে ভরা তার অনেক গান গত শতকের অনেকটা সময় ধরে বাঙালির হৃদয় রাজ্যে বিচরণ করছে। অধিকাংশ গান সুর প্রধান। বৈচিত্রপূর্ণ সুরের লহরী কাব্যকথাকে তরঙ্গায়িত করে এগিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল।
তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
তিনি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে অন্তিম শয্যায় আছেন জাতীয় কবি।
আজ সারা দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হচ্ছে ‘নজরুলজয়ন্তী’। জাতীয় পর্যায়ে কুমিল্লায় আজ (রবিবার) শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। অনুষ্ঠানগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে এ উপলক্ষ্যে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।
এতে সমবেত সংগীত, সমবেত নৃত্য, একক সংগীত ও নাটক পরিবেশিত হবে।