রাজধানীর উত্তরায় জুলাই আন্দোলনে শহীদ ছাত্রজনতার পরিবারের সদস্যরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) উত্তরার আজমপুর শহীদ মুগ্ধ মঞ্চে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ, ছত্রিশের সাহসিনী ও গ্লোবাল নলেজ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান।
সম্মেলনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, সরকার শহীদদের ভুলে গেছে। শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ রাখছে না। শহীদদের হত্যায় জড়িত পুলিশকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না এবং অন্যান্য আসামিরাও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
শহীদ নাঈমা সুলতানার মা আইনুন নাহার বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে মিছিলে যেতে দেইনি। তাকে সারাক্ষণ বাসায় রেখেছি। কিন্তু বাসায় থেকেও মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। … কোথাও পুলিশ দেখলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। তারা আমার মেয়েকে কতটা কষ্ট দিয়ে মেরেছে!’
শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা জীবনের পরোয়া করেনি। … গুলি খাওয়া ছেলের লাশ বাবা-মার সামনে কেমন তা একমাত্র শহীদ পরিবাররাই জানে। … অথচ এই অবস্থায় আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি খুনীদের বিচার এবং শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবি জানান।
শহীদ জাবির ইব্রাহীমের মা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমার জাবিরকে কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন? … আমার জাবিরের হত্যার বিচার চাই।’ তার স্বামী কবির হোসেন বলেন, ‘দুই হাজার ছাত্রজনতা যদি শহীদ হয় তাহলে দুই হাজার পুলিশ খুনি।’
শহীদ সিফাত হাসানের বাবা বলেন, ‘আমাদের যে দুই হাজার ছেলেমেয়ে নিহত ও ৩০ হাজার আহত হলো এর বিচার আর হবে কিনা আমি জানি না। এই সরকার টাকা দিয়ে আমাদের সন্তানদের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না।’
শহীদ মীর মুগ্ধের বাবা মীর মুস্তাফিজুর রহমান জুলাই আন্দোলনকে যৌক্তিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘কোনো গণতান্ত্রিক সরকার যৌক্তিক আন্দোলনে গুলি চালাতে পারে তা বিশ্বাসযোগ্য না।’
শহীদ মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ইয়াসিনের মা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা তার ছেলে হত্যার অভিযোগ করেন।
সম্মেলনে শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা, শহীদ জাহিদুজ্জামান তানভীরের বোন, শহীদ শাফিক উদ্দীন আহনাফের মা, শহীদ রিদোয়ান শরীফ রিয়াদের বোন, শহীদ রায়হানের বোন, শহীদ সাইফ আরাফাত শরীফের বোন, শহীদ শাহাদাত হোসেন শাওনের বাবা, শহীদ ইমাম হাসানের ভাই সহ আরও অনেক শহীদ পরিবারের সদস্য বক্তব্য রাখেন।
গ্লোবাল নলেজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাবেয়া আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদ পরিবারকে যথাযথ মর্যাদা ও আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা, উত্তরায় শহীদ স্মৃতি পাবলিক লাইব্রেরী ও শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা, আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের মানসিক সহায়তা প্রদান এবং জুলাই বিপ্লবের ইতিহাসে নারী ও শিশুদের অবদান তুলে ধরার দাবি জানানো হয়।
আপনার মন্তব্য লিখুন