জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার গ্রুপ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা ইমরান খানের দ্রুত মুক্তি দাবি করেছে। জেনেভা-ভিত্তিক এই সংগঠনটি সোমবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে থাকা মামলাটি পর্যালোচনা করার দাবি জানায়।
পাকিস্তানের সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে থাকা ইমরান খানের সমর্থক এমপিরা জাতিসংঘের এই বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, দুর্নীতির মামলায় ইমরান খানকে আটক করার কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না, বরং তাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইমরান খানকে তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের জন্য আটক করা হয়েছিল এবং তিনি ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সংগঠনটি ইমরান খানের দলের প্রতি অবিচার এবং নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর নির্যাতনের বিষয়গুলোও তুলে ধরেছে।
এদিকে, পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী আজম নাসের তারার এই বিবৃতির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ইমরান খান ইতোমধ্যে একাধিক মামলায় জামিন পেয়েছেন এবং তার বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে চলছে। আইনমন্ত্রী আজম নাসের তারার দাবি করেন, এ অবস্থায় এমন বিবৃতি আমাদের সংবিধান, আইন এবং আন্তর্জাতিক নীতিকে খর্ব করে।
২০২২ সালে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে একাধিক মামলায় ইমরান খানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে তিনি কারাগারে আছেন। সে সময় একটি আদালত রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি করার অভিযোগে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়, যা তাকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তার দলের অংশগ্রহণে বাধা দেয়। ইমরানের দল দাবি করেছে, নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে তাদের নিরঙ্কুশ বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ইমরান খানের গ্রেপ্তার বাতিল, মুক্তির নির্দেশ
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং কর্তৃপক্ষকে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আদালত ইমরান খানকে আবারও ইসলামাবাদ হাইকোর্টের (আইএইচসি) কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশটির শীর্ষ আদালতের নির্দেশে কড়া নিরাপত্তায় তাকে কোর্টে আনা হয়।
শুনানির শুরুতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়াল ইমরান খানকে বলেন, আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। আমরা বিশ্বাস করি ইমরান খানের গ্রেপ্তার বেআইনি ছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
বন্দিয়াল বলেছেন, আগামীকাল ইসলামাবাদ হাইকোর্ট-আইএইচসি মামলার শুনানি করবে। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট যা সিদ্ধান্ত দেবে আপনাকে মেনে নিতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা প্রত্যেক রাজনীতিবীদের দায়িত্ব।
দুই মামলার শুনানি অংশ নিতে গেলে গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির প্রধান ইমরান খানকে ইসলামাবাদের আদালত চত্বর থেকে আল-কাদরি ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে দেশজুড়ে চলছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।
শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কোথাও কোথাও সহিংসতায় রূপ নিতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটি (পিটিএ) সারা দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর তার দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রশাসনের সংঘর্ষে দেশটির কয়েকটা শহরে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিটিআইয়ের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।