দখলদার ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও বন্দী মুক্তির খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির আয়োজন করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
রবিবার এক ঘোষণায় দেশটি এই আহ্বান জানায়।
কূটনৈতিক সূত্রসমূহ বলেছে, সোমবার এই ভোটাভুটির পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের সভাপতি দক্ষিণ কোরিয়া বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের মুখপাত্র নেট ইভান্স বলেছেন, ভোটাভুটির আয়োজন করতে এবং প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদকে অনুরোধ করেছে। তবে তিনি নির্দিষ্ট তারিখের কথা উল্লেখ করেননি।
ইভান্স আরও বলেন, পরিষদের সদস্যদের এই প্রস্তাব পাশের সুযোগ নষ্ট করা ঠিক হবে না এবং এই চুক্তির সমর্থনে অবশ্যই একইসুরে কথা বলতে হবে।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির একাধিক পরিকল্পনা পাশে বাধা দিয়েছিল।
কিন্তু গত ৩১ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন জাতিসংঘ থেকে পৃথক একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এতে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ও বন্দী মুক্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু হামাসের পক্ষ থেকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। অব্যাহত এই হামলায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
সূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি
নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা থেকে বেনি গ্যান্টজের পদত্যাগ
ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন মধ্যপন্থী নেতা বেনি গ্যান্টজ। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার মূলত মধ্যপন্থী ও অতি ডানপন্থীদের সমর্থনে গঠিত। বেনি গ্যান্টজের পদত্যাগে এবার নেতানিয়াহুর সরকার থেকে মধ্যপন্থী শক্তি বিদায় নিয়েছে। তবে এতে তাৎক্ষনিক কোনো প্রভাব পড়ছে না নেতানিয়াহুর সরকারে।
রোববার (৯ জুন) বেনি গ্যান্টজ এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের কথা জানান। তিনি হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে দ্রুত একটি সমঝোতা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু নেতানিয়াহুর কারণে এই যুদ্ধ বন্ধ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বেনি গ্যান্টজ বলেন, নেতানিয়াহু আমাদের সত্যিকারের বিজয়ের দিকে অগ্রসর হতে বাধা দিচ্ছেন। এই কারণেই আমরা জরুরি সরকার ছেড়ে যাচ্ছি। আমরা ভারী হৃদয়ে কিন্তু পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
উল্লেখ্য, গাজায় যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা ঘোষণা করতে নেতানিয়াহুকে ৮ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন বেনি গ্যান্টজ। কিন্তু সেই দিনটি পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় বেনি গ্যান্টজ সরকার থেকে সরে দাঁড়ালেন।
উল্লেখ্য, শনিবার গাজা উপত্যকায় হামাসের হাতে জিম্মি চার জনকে উদ্ধার করে ইসরাইলি সেনারা। চারজনকে উদ্ধার করতে গিয়ে অন্তত ২১০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরাইলের সেনারা। ধারণা করা হয়েছিল, এ খবরে বেনি গ্যান্টজ হয়ত তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত পেছাতে পারেন। কিন্তু এর একদিন পরই তিনি পদত্যাগ করলেন।
বেনি গ্যান্টজের পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্সে একটি পোস্টে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, বেনি, এখন ছেড়ে দেওয়ার সময় নয়, এখন বাহিনীতে যোগ দেওয়ার সময়।
উল্লেখ্য, নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গ্যান্টজ ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রাক্তন চিফ অব স্টাফ। তিনি ২০২৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দফতর বিহীন মন্ত্রী ছিলেন। এর আগে ২০২০ থেকে ২০২২ সালে সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ২০২১ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ইসরাইলের উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার মধ্যপন্থী ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টি ২০২৩ সালের ১১২ অক্টোবর পর্যন্ত ইসরাইলের পার্লামেন্টে বিরোধী দল ছিল। ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর যুদ্ধ শুরু হলে একটি জরুরি সরকার গড়েন নেতানিয়াহু। এসময় বেনি গ্যান্টজ নেতানিয়াহুর জরুরি যুদ্ধকালীন সরকারকে সমর্থন জানান ও মন্ত্রিসভার সদস্য হন।
বেনি গ্যান্টজের পদত্যাগে এখন নেতানিয়াহু তার সরকারের অতি ডানপন্থীদের অতিনির্ভরশীল হয়ে পড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইসরায়েলের
জিম্মিদের স্বজনরা পার্লামেন্টে ঢুকে হট্টগোলের পর ফিলিস্তিনের গাজায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল।
দুই মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার এবং মিশরের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে হামাসের কাছে প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রস্তাবে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি প্রক্রিয়াকে কয়েকটি স্তর বা পর্যায়ে ভাগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জিম্মিদের মধ্যে যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন, সবার আগে তাদের মুক্তি চায় ইসরায়েল।
পরবর্তী পর্যায়গুলোতে আটক ইসরায়েলি নারী সেনাসদস্য, বেসামরিক তরুণ-তরুণী ও পুরুষ সেনাসদস্যদের মুক্তির ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে।
সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, এই জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি বেশ কিছু ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে কতজনকে মুক্তি দেওয়া হবে— সেই সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।
প্রস্তাবে যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি ইসরায়েল; তবে বলেছে, গাজার প্রধান শহরগুলোতে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি হ্রাস করা হবে এবং যুদ্ধ শুরুর পর উপত্যকার যেসব ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ছেড়েছে তাদেরকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, নিউ ইয়র্ক পোস্ট, সিএনএন
গাজায় বিস্ফোরণে উড়ে গেল আরও ১০ ইসরায়েলি সেনার দেহ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সেখানকার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যোদ্ধারদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে আরও ১০ সেনা নিহতের কথা স্বীকার করল ইসরায়েল।
সোমবার দক্ষিণ গাজায় একটি ঘটনাতেই এই সেনা নিহত হয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
এ নিয়ে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গত বছরের ২৮ অক্টোবর গাজায় শুরু হওয়া স্থল অভিযানে নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা ২০৮ জনে দাঁড়াল।
আইডিএফ জানায়, সোমবার দক্ষিণ গাজায় অভিযানের সময় দুটি ভবনে বিস্ফোরণ ও একটি ট্যাংকে রকেট চালিত গ্রেনেড হামলায় এই ১০ জন সেনা নিহত হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর ২৮ অক্টোবর থেকে ওই উপত্যকায় স্থল অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল