ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সুদান ও দক্ষিণ সুদান সীমান্তে। এতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীসহ অন্তত ৫২ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৬৪ জন।
জানা গেছে, উভয় দেশের মধ্যে বিতর্কিত আবেই অঞ্চলে এই সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আবেই হচ্ছে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে একটি বিতর্কিত অঞ্চল। উভয় দেশই সীমান্ত বরাবর তেল সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের মালিকানা দাবি করে থাকে। এরই জের ধরে গত শনিবার এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
আবেইয়ের তথ্যমন্ত্রী বুলিস কোচ জানিয়েছেন, গত শনিবার দক্ষিণ সুদানের ওয়ারাপ রাজ্যের সশস্ত্র যুবকরা প্রতিবেশী আবেইতে হামলা চালায়। সীমানা নিয়ে বিরোধে ২০২১ সাল থেকে এই ধরনের হামলা চলছে এবং সর্বশেষ এই হামলাটি ছিল সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা। হামলায় নিহতদের পাশাপাশি আরও ৬৪ জন আহত হয়েছে।
এছাড়া দক্ষিণ সুদানে সহিংসতায় জাতিসংঘের এক শান্তিরক্ষীও নিহত হয়েছেন। নিহত ওই শান্তিরক্ষী ঘানার সেনা সদস্য। ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেই (ইউএনআইএসএফএ) এর বিবৃতি অনুসারে, গত শনিবার আবেই এলাকার তিনটি স্থানে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। এর ফলে বহু মানুষ হতাহত হয় এবং সহিংসতায় আটকে পড়াদের নিরাপত্তা দিতে বেসামরিক লোকদের ইউএনআইএসএফএ ঘাঁটিতে সরিয়ে নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সংঘর্ষের সময় ইউএনআইএসএফএ-এর একটি ঘাঁটিও আক্রমণের শিকার হয়। আক্রমণটি প্রতিহত করা হলেও ‘দুঃখজনকভাবে ঘানার একজন শান্তিরক্ষী নিহত হয়’।
তথ্যমন্ত্রী বুলিস কোচ বলেছেন, “বর্তমান ভয়ানক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে ব্যাপক ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং আমরা কারফিউ জারি করেছি।”
দক্ষিণ সুদানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেশ সাধারণ ঘটনা। তবে শনিবারের এই সংঘর্ষে কোন উপজাতি জড়িত ছিল তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। এছাড়া তেল সম্পদে সমৃদ্ধ আবেই অঞ্চলে প্রায়ই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেখানে ডিনকা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো প্রশাসনিক সীমানার অবস্থান নিয়ে একে অপরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত।
সূত্র: আল জাজিরা, ভয়েস অব আমেরিকা, আনাদোলু এজেন্সি, এপি
সুদানে সংঘর্ষ: সেনাবাহিনী ও প্যারা মিলিটারির মধ্যে শক্তিশালী কারা?
২০২১ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সুদানের বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ‘স্বাধীন কাউন্সিলের’ নামে দেশ চালাচ্ছিলেন।
এই স্বাধীন কাউন্সিলের প্রধান জেনারেল আব্দেল ফাতাহ আল-বুরহান। উপপ্রধান ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো।
শনিবার দুই নেতার নেতৃত্বাধীন বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানীতে অবস্থিত সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে আরএসএফ। যদিও প্যারা মিলিটারি আরএসএফ দাবি করছে, সেনাবাহিনী তাদের ওপর প্রথম আক্রমণ করেছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, দুই বাহিনীর মধ্যে মূলত ক্ষমতার দখল নিয়ে লড়াই হচ্ছে। ১ লাখ প্যারা মিলিটারি সদস্যকে সেনাবাহিনীতে সংযুক্ত করা হবে। কিন্তু এটার পর সেনাবাহিনীর প্রধান থাকবেন কে সেটা নিয়ে মূলত দ্বন্দ্ব।
সুদানে দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে তাদের শক্তিমত্তা নিয়ে আলোচনা চলছে। মোহাম্মদ আলআমিন আহমেদ নামে সুদানের একজন সামরিক বিশ্লেষক আল জাজিরাকে বলেন, সংঘর্ষের প্রথম ঘণ্টাগুলোতে আরএসএফের প্রাধান্য ছিল। তিনি বলেন,‘ তারা (আরএসএফ) বিমানবন্দর এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেনাপ্রধান বুরহানের বাসাও দখলে নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল তারা।
সুদানের এই সামরিক বিশ্লেষক বলেন, এরপর সেনাবাহিনী হামলা প্রতিরোধ শুরু করে। তারা পাল্টা বিমান হামলা শুরু করে। আর এর মাধ্যমে পরিস্থিতি আয়ত্তে নিয়ে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে। সমরবিশ্লেষক আলআমিন বলেন, ‘প্যারামিলিটারির কোনো বিমানবাহিনী নেই। ব্যাপক সংখ্যক যোদ্ধা নিয়ে তারা সম্মুখযুদ্ধে শক্তিশালী।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বর্তমানে ভিয়েতনাম সফরে রয়েছেন। সেখান থেকে খার্তুমের পরিস্থিতিকে তিনি নাজুক অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
অন্যদিকে খার্তুমে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন গডফ্রে একটি টুইট বার্তায় বলেন, সামরিক অংশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি অত্যন্ত বিপজ্জনক। সংঘর্ষ বন্ধে উভয় পক্ষের শীর্ষ নেতাদের জরুরিভাবে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সুদানে সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী আরব দেশ মিসর। সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনেরও আহ্বান জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও লড়াই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।