বিশ্বব্যাপী অনলাইন মাধ্যমে বিভ্রান্তি এবং ভুল তথ্য ছড়ানোর একটি প্রধান বাহক হচ্ছে ইউটিউব। ইন্টারন্যাশন্যাল ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মে মিথ্যার বিস্তার মোকাবেলায় যথেষ্ট কাজ করছে না।
যুক্তরাজ্যের ফুল ফ্যাক্ট এবং ওয়াশিংটন পোস্টের ফ্যাক্ট চেকারসহ ৮০টিরও বেশি সংস্থার স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এসব কথা বলা হয়েছে। ইউটিউবের প্রধান কর্মকর্তা সুজন ওয়াচিস্কিকে লেখা ওই চিঠিতে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার প্রক্রিয়াতে কিংবা সেই ভিডিও থেকে প্রেরিত বার্তাগুলোর পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরো স্বচ্ছতা আনার দাবি জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘ইউটিউবকে তাদের ভিডিওগুলোতে কোনো ভুল তথ্য পরিবেশিত হচ্ছে কিনা তা উন্মোচন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এছাড়াও, যারা বারংবার ভুল তথ্য পরিবেশন করছেন তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’ চিঠিটি গত পয়লা জানুয়ারি লেখা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী তথ্য যাচাই (ফ্যাক্টচেক) সংস্থাগুলোর তরফ থেকে বলা হচ্ছে, একবার বা দু’বার নয়। সামাজিক মাধ্যমে প্রেরিত বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যে তথ্যের জন্য একাধিকবার হিংসা ছড়িয়েছে আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে। যদিও ফেসবুক বা টুইটারের মতো সোশ্যাল সাইটগুলো ইতোমধ্যেই এই প্রবণতা রুখতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে, ইউটিউব-এর তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। আর, তাই এই পত্রাঘাত।
চিঠিতে একটি তালিকা দিয়ে বোঝানো হয়েছে কীভাবে ইউটিউব ভুল তথ্য সংবলিত ভিডিওগুলোকে তাদের প্লাটফর্মে চলতে দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে পরোক্ষভাবে মদত জুগিয়েছে। এর প্রভাব ইউরোপ থেকে ল্যাটিন আমেরিকা অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাইওয়ান বিশ্বের সর্বত্র পড়েছিল। গত বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাপিটলে আক্রমণের সময়ে কিংবা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়তেও এই ভিডিও যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং অরাজকতা সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল।
‘এ ধরনের উদাহরণ গুনে শেষ করা যাবে না। সবচেয়ে আশ্চর্জনক বিষয়ে হলো, আজ ইউটিউবের নীতি-প্রণালীকে তোয়াক্কা না করেই ভুল তথ্য প্রেরণকারী চ্যানেলগুলো সক্রিয় রয়েছে। যে দেশগুলোতে ইংরেজির ব্যবহার খুবই কম বা একেবারেই নেই সেইসব দেশে এ চ্যানেলগুলোর প্রভাব অপিরসীম,’ এই চিঠিতে লেখা হয়েছে।
বিষয়টিকে গুরত্ব দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে আইএফসিএন-এর তরফ থেকে ইংরেজি ছাড়াও অন্যান্য ভাষায় অপপ্রচার ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। চিঠিতে আইএফসিএন-এর পক্ষ থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
যেমন ভুল তথ্য সনাক্ত করার ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভুল তথ্য কে বা কারা কীভাবে পরিবেশন করছেন, এই ভুল তথ্য গোটা বিষয়ে কী এবং কতটা প্রভাব বিস্তার করছে সে সম্পর্কে স্বাধীনভাবে গবেষণার পরামর্শও দেয়া হয়েছে এই চিঠিতে।
আপনার মন্তব্য লিখুন