রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) কর্তৃক জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার পর প্রথমবারের মতো আইসিসিভুক্ত কোনো দেশ সফর করেছেন। সোমবার পুতিন মঙ্গোলিয়ায় পৌঁছান, যা তার এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সফর।
পুতিনের এই সফরের সময় মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোরে তার বিমান অবতরণ করে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এই খবরটি প্রচারিত হয়। পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসি গত বছর ইউক্রেনীয় শিশুদের বেআইনিভাবে রাশিয়ায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। আইসিসির সদস্য মঙ্গোলিয়া যদি পুতিনকে গ্রেফতারের আদেশ পালন না করে, তবে আদালতের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সীমিত ক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে, পুতিনের এই সফরকে আন্তর্জাতিক মহল গভীর নজরে রাখছে। কারণ এটি শুধু রাশিয়া-মঙ্গোলিয়া সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাশিয়ার অবস্থানকেও প্রভাবিত করতে পারে। মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক সম্পর্ক শক্তিশালী হলেও, এই সফর আইসিসির নীতি এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আইনের প্রতি সম্মানের প্রশ্ন তুলেছে।
এছাড়া, পুতিনের এই সফর পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, কারণ আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানার পরও পুতিনের মতো একজন নেতার এমন সফর আন্তর্জাতিক আইন এবং ন্যায়ের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।
রাশিয়া ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করতে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলোকে পাশ কাটানোর জন্য বিকল্প সমর্থন খুঁজছে। পুতিনের মঙ্গোলিয়া সফর সেই প্রচেষ্টার একটি অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ক্রিমিয়া পরিদর্শনে পুতিন
পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এই ঘটনার পর প্রথমবারের মতো ক্রিমিয়া উপদ্বীপে পরিদর্শনে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়া ইউক্রেনের এই অঞ্চলটি ২০১৪ সালে দখল করে রুশ ফেডারেশনে যুক্ত করেছিল।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, শনিবার ছিল ক্রিমিয়া রাশিয়ার সাথে যুক্ত করার ৯ বছর। এদিন পুতিন ক্রিমিয়া উপদ্বীপে উপস্থিত হন। তবে যাওয়ার আগে ঘোষণা দিয়ে যাননি পুতিন।
ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার নিয়োগ করা সেভাস্তপোল গভর্নর পুতিনকে অভিবাদন জানান। রাশিয়ার কর্মকর্তারা পুতিনের এই সফরকে ‘সারপ্রাইজ ভিসিট’ বলে উল্লেখ করেন। পুতিনকে সেভাস্তপোলের একটি নতুন শিশু সেন্টার এবং আর্ট স্কুলে দেখা যায়।
ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে সেভাস্তপোলের গভর্নর রেজভোঝায়েভ বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ জানেন কিভাবে সারপ্রাইজ দিতে হয়।’
ইউক্রেন থেকে বেআইনিভাবে শিশুসহ বহু মানুষকে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে শুক্রবার আইসিসির পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দেওয়া হয়েছে। আদালতের এই পরোয়ানাকে থোরাই পরোয়া করে এই নির্দেশকে ‘টয়লেট পেপার’র সঙ্গে তুলনা করে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বিশ্ববাসীকে কি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে গ্রেফতার করা সম্ভব নয়।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানাকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সাধুবাদ জানালেও ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তার বিচারের সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা, আইসিসি কোনো ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধানকে গ্রেফতার বা আদালতে আনার ক্ষমতা রাখে না। তাই কোনো অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা না গেলে তার শুনানি কখনই হবে না।
এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে, এই মুহূর্তে রাশিয়ায় এমন কেউ নেই যিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের হাতে কড়া পড়ানোর ক্ষমতা রাখেন।