ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে যাওয়া সাজু সাহা নামের এক শিক্ষকের নিয়োগ আটকে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি নিয়োগ বোর্ড ওই শিক্ষককে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করলেও আইবিএ’র সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম বোর্ড অব গভরন্যান্সের (বিজি) সভায় নিয়োগটি অনুমোদন পায়নি।
যৌন হয়রানির অভিযোগ থাকায় নিয়োগ চূড়ান্ত না করে তা পুনরায় রিভিউয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম সাজু সাহা। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। সম্প্রতি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনিস্টিটিউটে (আইবিএ) প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
জানা গেছে, জাবির সাবেক এক ছাত্রী গত ২৩ মার্চ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সাজু সাহার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। সোমবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে তিনি একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। একইসঙ্গে মেইলের মাধ্যমে বিভাগের চেয়ারম্যানকেও বিষয়টি অবহিত করেছেন।
তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার মানহানির মামলা করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক সাজু সাহা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনিস্টিটিউটে প্রভাষক পদে আবেদন করেন জাবির শিক্ষক সাজু সাহা। তিনিসহ চারজনকে সুপারিশ করে ইনিস্টিউটের নিয়োগ বোর্ড। এর পরেই তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগটি সামনে আসে। অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) নজরে আসলে বোর্ড অব গভরন্যান্সে আটকে যায়। যার ফলে সিদ্ধান্তটি বিজিতে (বোর্ড অব গভরন্যান্স) না তুলে পুনরায় রিভিউয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রায় আট বছর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এর চার বছর পর পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হন। গত ৬ বছরে তিন দফায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে শিক্ষক হওয়ার আবেদন করে একাডেমিক ফলাফলের কারণে তিনি ব্যর্থ হন।
নিয়োগ আটকে যাওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, নিয়োগ বোর্ড যখন সাজু সাহাকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই সময় শিক্ষার্থীর এ অভিযোগ আসেনি। পরে অভিযোগটি আসায় বোর্ড অব গভরন্যান্স অনুমোদন না দিয়ে রিভিউ এর জন্য পাঠিয়েছে। এরপর আবার এটি বোর্ড অব গভরন্যান্সে যাবে। আমরা বিষয়টি ভালোভাবে পর্যালোচনা করব।
ছাত্রী নির্যাতন : ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ পাঁচ জনকে বহিষ্কার
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাতভর ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পেয়েছে হল কর্তৃপক্ষ কতৃক তদন্ত কমিটি। ফলে অভিযুক্ত ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৫ শিক্ষার্থীর আবাসিকতা বাতিল করেছে হল কর্তৃপক্ষ।
ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ বাকি চারজন হলেন, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হল কর্তৃপক্ষের কয়েকঘন্টাব্যাপী মিটিং শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শামসুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আগামী ১ মার্চ দুপুর ১২টার মধ্যে তাদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের হল সংযুক্তি বাতিলের সুপারিশ হল কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হবে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের ঘটনায় ১৪ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনায় ইবি প্রশাসন ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা হলের ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর রুমে গেস্ট হিসেবে উঠেন প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। ছাত্রলীগ নেত্রী তাবাসসুমকে না জানিয়ে হলে ওঠায় ওই ছাত্রীকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। কিন্তু এতে কর্ণপাত না করায় ক্যাম্পাসে তাকে বকাবকি করেন ছাত্রলীগ নেত্রী তাবাসসুম। এরপর রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা হলের গণরুমে ডেকে নিয়ে তার ৫/৬ সহযোগীসহ রাতভর ওই ছাত্রীর ওপর চালায় পৈশাচিক নির্যাতন। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, আলপিন ফুটিয়ে শরীরে ক্ষতসৃষ্টি ও আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা। ঘটনাটি প্রকাশ করলে তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।