সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লিকে নেতৃত্বের ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার (১৪ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আহ্বান জানান।
ভারত সরকারের তার কী চাওয়া জানতে চাইলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জয় বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লিকে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
জয় বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের দোরগোড়ায় অবস্থিত। আমি আশা করব, ৯০ দিনের সাংবিধানিক সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেটা ভারত নিশ্চিত করবে। জনতা শাসন বন্ধ করা হবে এবং আওয়ামী লীগকে প্রচারণা ও পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হবে। যদি তা নিশ্চিত করা হয় আমি এখনো নিশ্চিত যে আমরা নির্বাচনে জয়ী হবো। আমরা এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।’
সাক্ষাৎকারে কোটা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল স্বীকার করেন জয়।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের সরকারের উচিত ছিল প্রথম থেকেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং কোটার বিরুদ্ধে কথা বলা। কোটা ইস্যু আদালতের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে শুরু থেকেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু এগুলো না করে আমাদের সরকার কোটা কমাতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। আদালত ভুল করেছে। আমরা কোটা চাই না বলে আমি সবাইকে আশ্বস্ত করার সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সরকার সেটা শুনেনি এবং বিচার ব্যবস্থার ওপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছে।’
কোটা ইস্যু নিয়ে সরকারের ভুল স্বীকার করলেও জয় জানান, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সহিংসতায় মোড় নেওয়ার পেছনে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা ছিল।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার সাবেক এই আইটি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এর পেছনে জড়িত ছিল। কারণ ১৫ জুলাই থেকে অনেক আন্দোলনকারীর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। গত ১৫ বছরে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আমাদের সফলতার কারণে বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া খুবই কঠিন। একমাত্র কোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাই বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার ও আন্দোলনকারীদের কাছে সরবরাহ করতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী জয় গত ৫ আগস্ট তার মায়ের বাংলাদেশ ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার বর্ণনা দিয়ে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার এক দিন আগেও তিনি বা প্রধানমন্ত্রী কেউই ভাবতে পারেননি যে, কতটা দ্রুত অবনতি হবে।
জয় বলেন, ‘তার (শেখ হাসিনার) দেশ ছাড়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তিনি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেবেন। আমার ধারণা, তিনি ভাষণের খসড়া তৈরি করেছিলেন এবং সেটি রেকর্ড করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সবকিছু পরিকল্পিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই নিরাপত্তা বাহিনী এসবের জন্য ‘সময় নেই’ বলে জানিয়েছিল।’
জয় জানান, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার মা দেশে থাকার বিষয়ে অনড় ছিলেন। কিন্তু তিনি তাকে দেশ ছাড়ার জন্য রাজি করিয়েছিলেন।
জয় বলেন, ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী তাকে (শেখ হাসিনা) সামরিক বিমান ঘাঁটির মধ্যে একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। তাদের জন্য একটি হেলিকপ্টার প্রস্তুত ছিল, কিন্তু তিনি যেতে চাননি…তখন আমার খালা (শেখ রেহানা সিদ্দিক) আমাকে ফোন করেন। আমি আমার মাকে বোঝালাম যে, আপনার নিরাপত্তার জন্য আপনাকে চলে যেতে হবে। যদি এই জনতা আপনাকে খুঁজে পায়, কোথাও আপনাকে ধরে ফেলে এবং সেখানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, তাহলে অনেক লোক মারা যাবে। জনতা যদি আপনাকে ধরে ফেলে তবে তারা আপনাকে হত্যা করবে। তাই আপনার সেরা বিকল্প হলো দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া।’
বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে রয়েছেন। জয় বলেন, বাংলাদেশে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা দেখার জন্য তিনি (শেখ হাসিনা) অপেক্ষা করছেন।’ জয়ের মতে, ‘সম্ভবত মা আপাতত ভারতেই থাকবেন।’
খাদ্যমন্ত্রী : আমরা ইন্ডিয়ার দালাল না, অকৃত্রিম বন্ধু
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীকে (১৬) আইনি সহায়তা না দিয়ে অভিযুক্তের লাখ টাকা জরিমানা করে ‘ধর্ষণের বিচার’ করার অভিযোগ উঠেছে দুই ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। সালিশের সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ায় উল্টো ওই কিশোরী ও তার পরিবারকে পুলিশি হয়রানির ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
গত ১৬ অক্টোবর উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। প্রভাবশালীদের চাপে বর্তমানে আইনি সহয়তা নিতেও আতঙ্ক বোধ করছে পরিবারটি।
তবে সালিশে ‘ধর্ষণের বিচার’ করা ইউপি সদস্যরা বলছেন, ‘কিশোরীর বিয়ের বয়স না হওয়ায় ধর্ষকের সাথে বিয়ে না দিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’ সালিশে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তারা।
নির্যাতনের শিকার কিশোরী জানান, গত ১৫ অক্টোবর (শুক্রবার) দুপুরে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর নতুনগ্রামের কছুমুদ্দিনের ছেলে শফি আলম (২০) পাশের একটি বাড়িতে ডেকে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় কিশোরীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে খবর পেয়ে শফি আলমের মা সুফিয়া খাতুন দ্রæত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিজ ছেলেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন এবং উল্টো ওই কিশোরীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য (৪ নং ওয়ার্ড) আবু শামা ‘বিচারের’ আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীকে নিজ হেফাজতে নেন। পরের দিন ( ১৬ অক্টোবর) আলাউদ্দিন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত চলা ওই সালিশে অভিযুক্ত তরুণ ও ভুক্তভোগী কিশোরীকে হাজির করা হয়। পরে বিচারের নামে ছেলে পক্ষকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরী বলেন,‘আবু শামা ও হযরত মেম্বারসহ সালিশকারীরা বিয়ে দেওয়ার কথা বলে আমাকে শত শত লোকের সামনে হাজির করেন এবং একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। পরে বিয়ে না দিয়ে তারা বিচারের নামে ছেলে পক্ষকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।’
নির্যাতনের শিকার কিশোরীর অভিযোগ, বিচারের নামে জরিমানা আদায়ের সিদ্ধান্ত মেনে না নিতে চাইলে তাদেরকে পুলিশি ঝামেলায় ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এ নিয়ে মুখ খুললে তাদেরকে বিপদে ফেলা হবে বলেও ভীতি দেখানো হয়েছে বলে দাবি করছে ভুক্তভোগী পরিবারটি। বর্তমানে তারা আইনি সহায়তা নিতে চাইলেও প্রভাশালীদের আচরণে আতঙ্ক বোধ করছেন।
‘আমি টাকা চাই না। আমি ন্যায় বিচার চাই। যে আমাকে নির্যাতন করেছে তার বিচার চাই। বিচার না পেলে নিজেকে শেষ করে দেওয়া ছাড়া আমার উপায় নাই।’ আকুতি জানিয়ে এভাকেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী ওই কিশোরী।
নির্যাতনের শিকার কিশোরীর মায়ের অভিযোগ, ‘ মেম্বাররা আমাগো হুমকি দিছে, ট্যাকা না নিলে আমার মেয়েরে পুলিশে দিবো। আর ছেলেরে তার বাবার কাছে ফিরায় দিবো। এটা কেমন বিচার! সরমে আমরা মাইনষেক মুখ দেহাবার পারিনা। আমাগো সাথে অন্যায় কইরা অহন আমাগোরে পুলিশে দিবো,এ দ্যাশে কী গরিবের বিচার নাই?’
সালিশে উপস্থিত সূত্র জানায়, ওই সালিশে যাদুরচর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য আবু শামা, ১নং ওয়ার্ড সদস্য হযরত আলী, ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল খালেক, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা উপস্থিত ছিলেন। সালিশে সভাপতিত্ব করেছেন ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল খালেক। ধর্ষণের বিচার করতে সালিশ আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেও কোনও প্রতিকার মেলেনি বলে সালিশে উপস্থিত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সালিশে ধর্ষণের বিচার করার কথা স্বীকার করে যাদুরচর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য আবু শামা বলেন, ‘ বিচারে শুধু আমি না, অন্য মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারাও আছিল। এহানে টাকার ছিটাছিটি হইছে। আমি মেম্বার হিসেবে উপস্থিত ছিলাম।’
পুলিশে খবর না দিয়ে ধর্ষণের বিচার সালিশে করা উচিৎ হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে এই ইউপি সদস্য বলেন, ‘এটা ভুল হয়েছে। আর হবে না।’
ভুক্তভোগী পরিবারকে পুলিশের ভয় দেখানোর কথা অস্বীকার করে করে এই ইউপি সদস্য বলেন, ‘তারা চাইলে অহনও পুলিশের কাছে যাইতে পারে। আমার কোনও আপত্তি বা জবরদস্তি নাই।’
সালিশে সভাপতিত্বকারী ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল খালেক জানান, গ্রামের সবাই মিলে সালিশ করা হয়েছে। মেয়ের বিয়ের বয়স না হওয়ায় বিয়ে না দিয়ে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে ছেলের জরিমানা করা হয়েছে। তারা ( ভুক্তভোগী কিশোরী) বিচার না মানলে পুলিশের কাছে যেতে পারে, এতে কারও কোনও আপত্তি নেই বলেও জানান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এই নেতা।
ধর্ষণের মতো অপরাধের বিচার করার সালিশে করার এখতিয়ার রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘ তা নেই। কিন্তু গ্রামের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই সালিশে গিয়েছিলাম।’
রৌমারী থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মোন্তাছের বিল্লাহ জানান, ‘এ ধরণের ঘটনা মিমাংসার অযোগ্য। আমি এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মন্তব্য লিখুন