ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারি। শরীরের টিস্যুর যত্নে, রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থার উন্নতি সহ নানা কাজ করে থাকে। তবে জানেন কী, আমাদের শরীর নিজে থেকে ভিটাসিন সি উৎপন্ন করতে পারে না। আপনি যে খাবার খান সেখান থেকে এটি আমাদের শরীরে ঢোকে।
আবার কেউ কেউ সাপ্লিমেন্ট ওষুধ নিয়ে থাকে। এটি শরীরের জন্য যেমন ভালো আবার এর কিছু খারাপ দিকও আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মেসোথেলিওমা সেন্টারের একজন নিবন্ধিত নার্স, শন মার্চিস। যার অনকোলজি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সরাসরি রোগীর যত্ন নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। যিনি প্রতিদিন ভিটামিন সি গ্রহণ করলে কী হয় সেই সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। আজ সেই বিষয়ে চলুন জেনে নেই।
* অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব
ভিটামিন সি একটি কার্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল নামক ক্ষতিকারক কণা দূর করে। এটি আঘাত বা সংক্রমণের পরে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের কারণে সৃষ্ট চাপ কমায়। প্রতিদিন ভিটামিন সি খেলে ভিটামিন ই এবং টেট্রাহাইড্রোবায়োপটেরিন সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উৎপাদনে সাহায্য করে।
* প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়
মার্চিস বলেন, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিভিন্ন ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। বাইরে থেকে ঢোকা জীবানু ধ্বংস করে এবং রোগ কমায়। তবে এটির জন্য এখনও টিকা, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের সাহায্য প্রয়োজন হয়। ভিটামিন সি ফ্যাগোসাইটস এবং নিউট্রোফিলের মতো রোগ প্রতিরোধক কোষের সেলুলার বৃদ্ধি করে। দৈনিক ভিটামিন সি খেলে সংক্রমণের পরে মৃত কোষগুলোকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।
* ক্যান্সার প্রতিরোধ
বেশিরভাগ সুস্থ মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হয় না। তবে সাপ্লিমেন্ট ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত লোকদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ভিটামিন সি ক্যান্সার রোগীদের জন্যও সহায়ক। যারা মুখে খাওয়ার মাধ্যমে পুষ্টি পায় না তাদের জন্য খুবই উপকারি। জানা গেছে, ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট অগ্ন্যাশয়, খাদ্যনালী এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। মর্চিস এই তথ্যগুলো দিয়েছেন।
*চোখের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে
মার্চিস বলেন, অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজগুলির সাথে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট খেলে চোখের রোগ যেমন, বয়স সাথে সম্পর্কিত ম্যাকুলার ক্ষয় এবং ছানি কমাতে সাহায্য করে।
*এবার জেনে নেই অতিরিক্ত খেলে কী অসুবিধা হতে পারে:
ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট নেবার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে। নিজে থেকে না খাওয়াই ভালো। এ ছড়া প্রতিদিন খাবারের টেবিলে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রাখতে পারেন। যেমন ক্যাপসিকাম, লেবু, ব্রকলি, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি।
*কিডনিতে পাথর
মার্চেস বলেছেন, প্রতিদিন ভিটামিন সি খাওয়া সবার জন্য ঠিক নয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ভিটামিন সি-এর উচ্চ মাত্রা কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। যারা কম ভিটামিন সি পায় তারা দৈনিক খেতে পারবে ৯০ মিলিগ্রাম।
*অন্যান্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া
মার্চেস বলেছেন, দৈনিক ভিটামিন সি সম্পূরক সাধারণত নিরাপদ। যদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন তাহলে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। কিন্তু অপ্রয়োজনীয়ভাবে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি খেলে সেটা শরীরের মধ্যে জমা হতে পারে। এতে পেটে ব্যথা, বমি, অম্বল এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যার কারণ হতে পারে। ভিটামিন সি-এর উচ্চ মাত্রা অন্যান্য ওষুধের সাথে বিপজ্জনকভাবে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। যেমন স্ট্যাটিন (এক ধরনের অ্যান্টি-কোলেস্টেরল ওষুধ), রক্ত পাতলা করার ওষুধ ওয়ারফারিন এবং হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, যেমন ইস্ট্রোজেন এগুলোর সাথে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।
আপনার মন্তব্য লিখুন